রিয়ালকে হারিয়ে সুপার কাপ অ্যাটলেটিকোর
এই ম্যাচটা এর চেয়ে ভালোভাবে শুরু হতে পারত না ডিয়েগো কস্তার জন্য। ৬০ সেকেন্ডও পার হয়নি ম্যাচের, ডিবক্সের বাইরে থেকে লং বল রিসিভ করে ঢুকে পড়লেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিবক্সে। কাজও তখনও পুরোটাই বাকি। কোণাকুণি ফিনিশে বল জড়ালেন জালে। ৪৯ সেকেন্ডে করা ওই গোল সুপার কাপের ইতিহাসেরই দ্রুততম। কস্তার গোলে এগিয়ে গেল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। মুহুর্তের জন্য হয়ত ম্যাচটা সহজই মনে হয়েছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে। কিন্তু এরপর রিয়াল মাদ্রিদও ফিরে আসলো, পরে নির্ধারিত সময় শেষ হলো ২-২ গোলে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের সঙ্গে এই ম্যাচের তুলনা হয়না, তবুও ২০১৪ আর ২০১৬ ফাইনালের হারে খানিকটা স্বান্ত্বনার যোগান পেল অ্যাটলেটিকো। অতিরিক্ত সময়ে রিয়ালকে নাস্তানুবুদ করে আরও দুই গোল করে, ৪-২ ব্যবধানে জিতে গেল তারা। জিতে গেল ইউয়েফা সুপার কাপের শিরোপাটাও।
ইউরোপা কাপ আর চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ীর ম্যাচ। দুই প্রতিপক্ষ আবার অতিপরিচিত। শহরের এপাশ আর ওপাশ। ৯০ মিনিট খেলা চলেছে সেই তালেই। কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে এস্তোনিয়ার মাঠে ফিরে এসেছে ২০১৪ এর স্মৃতি। সেবার অ্যাটলেটিকোকে কাঁদিয়ে অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচ একপেশে বানিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল রিয়াল। এবার অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচটা একপেশে করল অ্যাটলেটিকো। প্রথমার্ধেই দুইটি দেখার মতো গোল করে তখনই শিরোপা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলল রোহি ব্লাংকোরা। ৯৯ মিনিটে থমাস পার্তের ক্রস থেকে বাঁ পায়ের চোখ ধাঁধানো ভলিতে গোল করেন সল নিগুয়েজ। ভুলটা অবশ্য করেছিলেন রামোস আর ভারান। রিয়াল অধিনায়ক পাস দিয়েছিলেন সতীর্থকে। ভারানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপদ ডেকে আনেন দলের জন্য। সেখান থেকেই ক্রস, তারপর ভলিতে করা গোল। এর মিনিট পাঁচেক পর অ্যাটলেটিকোর আরও দোর্দন্ড প্রতাপ। থমাস ভিতোলোর বাঁ পায়ে বাড়ানো বল ডিবক্সের ঠিক ভেতরে খুঁজে পায় কোকেকে। অ্যাটলেটিকো মিডফিল্ডার আর ভুল করেননি, ১০৪ মিনিটেই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে ফেলেন গোল করে। হারের ব্যবধানটা রিয়ালের জন্য আরও অস্বস্তিকরও হতে পারত।
১৯৮৪ সালের পর রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে কোনো ম্যানেজার ৪ গোল হজম করলেন। হুলেন লোপেতেগির শুরুটা তাই মনমতো হলো না। ২০০৭ সালের বার্নড সুস্টারের পর তিনিও রিয়াল ম্যানেজার হিসেবে প্রথম ম্যাচটা শুরু করলেন হার দিয়ে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো পরবর্তী যুগের প্রথম ম্যাচেই অবশ্য আশা দেখাচ্ছিলেন গ্যারেথ বেল। পুরো ম্যাচেই দারুণ খেলেছেন তিনি। সঙ্গে তাল মিলিয়েছিলেন করিম বেনজেমাও। ২৭ মিনিটে বেলের ক্রস থেকেই সমতাসূচক গোলটা করেছিলেন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। এরপর আসলে ম্যাচে কর্তৃত্ব ছিল রিয়ালেরই। দুই মিনিট পর মার্কো আসেনসিও বল নিয়ে ঢুকে পড়েন অ্যাটলেটিকোর রক্ষণে। বার নেওয়া ডান পায়ের শট অল্পের জন্য লক্ষ্য হারায়। এরপর বেলও আসেনসিওকে একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ৩৪ মিনিটে পাওয়া সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন আসেনসিও।
এই সুযোগ মিসের মাসুল রিয়ালকে দিতে হবে না বলেই মনে হচ্ছিল। ৬৩ মিনিটে অধিনায়ক সার্জিও রামোস পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর রিয়ালকে যোগ্য চ্যাম্পিয়নও মনে হচ্ছিল। ডান দিক থেকে আসা ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে ডিয়েগো গডিনের হাতে লাগে, পরে রেফারি দেন পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। রামোসই এগিয়ে এসেছিলেন সেই পেনাল্টি নিতে। এর আগেই লুকা মদ্রিচকে নামিয়ে দিয়েছিলেন লোপেতেগি। এগিয়ে যাওয়ার পর অ্যাটলেটিকোকে তেমন সুযোগই দিচ্ছিল না রিয়াল। কিন্তু সবকিছু বদলে যায় ৭৯ মিনিটে। হুয়ানফ্রানের হার না মানা মনোভাব অ্যাটলেটিকোকে ম্যাচে ফিরতে সাহায্য করে। অবশ্য কাজের কাজটা করেন সেই কস্তাই। হুয়ানফ্রান বল দিয়েছিলেন অ্যানহেল কোরেয়াকে, তিনিও নিখুঁত এক ক্রস করেন। কস্তার সামনে তখন ফাঁকা বারপোস্ট, বাঁ পায়ের শটে আবারও অ্যাটলেটিকোকে ম্যাচে ফেরান কস্তা। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে অবশ্য মার্সেলোও একটা সুযোগ পেয়েছিলেন, নাটকীয় কিছু একটা করে দলকে ম্যাচ জেতানোর। কিন্তু শূন্যে শরীর ভাসিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠিকমতো বলের নাগাল পাননি। এরপর আর রিয়াল মাদ্রিদ সেভাবে সুযোগও তৈরি করতে পারেনি।
ইউয়েফা সুপার কাপের হারটা হয়ত বড় কিছু নয়। ২০১০, ২০১২ এর পর ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো সুপার কাপ জেতা অ্যাটলেটিকোর জন্যও হয়ত নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর ক্ষণিকের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করার সুযোগ। কিন্তু এই ম্যাচটা কিছুটা ইঙ্গিতও হয়ত দিয়ে গেল দুই ম্যানেজারকে। ডিয়েগো সিমিওনে এই ম্যাচেও ছিলেন না ডাগ আউটে। পরে নেমে এসেছিলেন মাঠে। নতুন মৌসুম শুরুর আগে বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন দলকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ থেকেই থাকবেন আবার ডাগ আউটে। আগের মৌসুমের হতাশা কাটিয়ে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখা আজ থেকেই শুরু করতে পারেন তিনি। আর লোপেতেগির হাতে গুছিয়ে নেওয়ার সময় অল্প, এর মধ্যেই কিছু একটা করতে হবে তাকে। হয়ত নতুন কাউকে দলে ভিড়িয়ে, অথবা পুরনোদের নতুন করে সাজিয়ে।