ও আমার (ওপেনিং) বন্ধু গো...
অ্যালেস্টার কুক। তামিম ইকবাল। দুজনই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ওপেনার, ডানহাতি ফিল্ডার। আরেকটা জায়গায় একটু মিল আছে দুজনের। দুজনই খুঁজে ফিরছেন ওপেনিংয়ের সঙ্গী! অ্যান্ড্রিউ স্ট্রাউস যাওয়ার পর টেস্টে কুকের সঙ্গে থিতু হতে পারেননি এখন পর্যন্ত কেউ, সময় ব্যবধান বিবেচনায় নিলে ওয়ানডেতেও তামিমের অবস্থা কিছুটা একই।
২০১৫ বিশ্বকাপে তামিম ইকবালের ওপেনিংয়ে সঙ্গী ছিলেন শুরুতে এনামুল হক। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল এনামুলের, সে ম্যাচে তামিমের সঙ্গে নেমেছিলেন সৌম্য সরকার। পরের ম্যাচগুলিতে দলে নেওয়া হয়েছিল ইমরুল কায়েসকে। এক টুর্নামেন্টেই তাই তিনটি ভিন্ন ওপেনিং জুটি খেলিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপের পর আরেকটি বিশ্বকাপ আসছে, তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে এখনও থিতু হতে পারেননি কেউ। বিশ্বকাপের পর থেকে তামিমের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নেমেছেন ভিন্ন ভিন্ন পাঁচজন।
টেস্টে এ সময়ে তামিমের সঙ্গী বদলেছে তিনবার। ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে লিটন দাস। ব্যাটিংয়ে অন্যদিকের ব্যাটসম্যানের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে যখন কয়েকদিন পর পর নতুন মুখ দেখতে হয়, ব্যাপারটা নিশ্চয়ই সুখকর নয়। তবে তামিম এটা নিয়ে ঠিক হতাশ নন বলেই বলছেন।
“হতাশার না। হয়তো তাদের সেইরকম পারফরম্যান্স হচ্ছে না। কিন্তু আমি দলের সাথে থেকে যা জানি, যারাই দলে এই দায়িত্ব পালন করছেন তারা সবাই প্রচণ্ড পরিমান চেষ্টা করেন। যতটুকু নিজেদের উন্নতি করা দরকার সেটা তারা করছে”, বলছেন তামিম।
“হয়তো প্রত্যাশামত ফলাফল পাচ্ছি না। কিন্তু আমার কারো সামর্থ্যের ওপর কোন সন্দেহ নেই। আমার সাথে যেই ব্যাট করেছে তারা সবাই যোগ্য, বাংলাদেশে অন্তত দশ বছর সার্ভিস দেওয়ার জন্য। আমার কাছে মনে হয় দুই-একটা ম্যাচ দরকার তাদের, ভালো একটি ইনিংস হলেই ওরা স্থায়ী হয়ে যাবে।”
সেই ভাল ইনিংসের জন্য ঠিক কতোটি ইনিংস প্রয়োজন তামিমের সঙ্গীদের?
বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডেতে তামিমের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি ইনিংসে ওপেন করেছেন সৌম্য সরকার। ২২ ইনিংসে দুজন মিলে করেছেন ৮৯৮ রান, গড়ে এসেছে ৪০.৮১ রান করে। ইমরুলের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে গড়টা সবচেয়ে ভাল তামিমের, ৯ ইনিংসে ৬০ গড়ে ৫৪০ রান। তবে গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর আর সুযোগ মেলেনি ইমরুলের। চোটের ঝামেলাও আপাতত নেই তার।
বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়া এনামুল প্রায় তিন বছর পর দলে ফিরেছেন, ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি সেভাবে। ফাইনালে তার জায়গায় এসেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। সে ইনিংসে ওপেনিং জুটিতে এসেছিল ১১ রান।
এনামুল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আবার ফিরেছেন। তবে অবস্থা খুব একটা বদলায়নি। সব মিলিয়ে ৭ ইনিংস তামিমের সঙ্গে বিশ্বকাপের পর থেকে ওপেন করেছেন এনামুল, ২৫.৭১ গড়ে উঠেছে ১৮০ রান। সৌম্য, ইমরুল, এনামুল, মিঠুন ছাড়া একটি ম্যাচে লিটনও নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। সেবার এসেছিল মাত্র ২ রান।
তামিম অবশ্য আরেকটু সুযোগ দেওয়ার কথা বলছেন তার সঙ্গীদের। বিশ্বকাপের সময় ঘনিয়ে আসছে, তবে এর আগে বেশ ঠাসা সূচি বাংলাদেশের। এ সময়ের মাঝেই কেউ নিজের জায়গাটা পাকা করে নেবেন বলে আশা তামিমের, “আশা করব টিম ম্যানেজমেন্ট যাদের নিয়ে ভাবছেন তাদের যথেষ্ট সময় দেয়া হোক। আশা করি যথেষ্ট সুযোগ পেলে ভালো করবে। তারা সবাই খুবই প্রতিভাবান। আশা রাখি সুযোগ পেলে তারা জায়গা পাকা করতে পারবে।”
বিশ্বকাপের পর ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গীদের মধ্যে দুজন বাঁহাতি, তিনজন ডানহাতি। দুজন বাঁহাতি মিলেই অবশ্য খেলেছেন বেশি ইনিংস। তবে বাঁহাতি-ডানহাতি ব্যাপারটা বড় নয় বলে জানিয়েছিলেন বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক নির্বাচক আকরাম খান, “বাঁহাতি ডানহাতি কম্বিনেশন গুরুত্বপূর্ণ নয়, মানটা গুরুত্বপূর্ণ। বাঁহাতি ওপেনার যদি যোগ্য হয় দলে জায়গা পাওয়ার জন্য, তাহলে কোন সমস্যা নেই। দেখতে হবে কে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে।
“আমাদের জুনিয়ররা পারফর্ম করছে কিন্তু ধারবাহিকভাবে না। ওরা যদি ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিতে পারে তাহলে দলটা শক্তিশালী হবে। দল এখন সিনিয়রদের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। সৌম্য অনেকদিন পর রানে ফিরেছে। আমাদের সৌম্য আছে, লিটন, বিজয় ও সাব্বির আছে। এরা যদি ফর্মে আসে তাহলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।”
দলে ফেরার পর ৭ ইনিংসে এনামুলের গড় ১২.৫৭। এর আগে এনামুলের জায়গায় ছিলেন ইমরুল কায়েস, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে একটা ফিফটিও ছিল তার। আর ওয়ানডেতে তো জায়গাই হারিয়েছেন সৌম্য। এক ম্যাচে মিঠুন-বাজি কাজে লাগেনি, লিটন থিতু হতে পারেননি পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটেই।
সেই প্রশ্নগুলোও তাই ঘুরেফিরে আসছে, যার জবাব খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে।
এদের মাঝে তামিমকে যোগ্য সঙ্গ কে দেবেন? এশিয়া কাপে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী হবেন কে? বিশ্বকাপ পর্যন্ত একটা স্থায়ী ও টেকসই ওপেনিং জুটি কি পাবে বাংলাদেশ?