• সিরি আ
  • " />

     

    রোনালদো না পারলেও পেরেছে জুভেন্টাস

    রোনালদো না পারলেও পেরেছে জুভেন্টাস    

    ৮৭ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে ক্রস করলেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। খেলায় তখন ২-২ গোলের সমতা। ক্রস ব্লক করলেন কিয়েভোর এক ডিফেন্ডার। লাফিয়ে উঠা বলে মাথা ছোঁয়ালেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ‘সিআর৭’-এর হেড থেকে বল পেয়ে হেড করে বল জালে পাঠালেন মারিও মানজুকিচ। পিছিয়ে পড়েও লিড নিয়ে নিল জুভেন্টাস। কিন্তু কিয়েভো ডিফেন্ডারদের জোর দাবিতে ‘ভিএআর’-এর শরণাপন্ন হলেন রেফারি। রিপ্লেতে দেখা গেল, বল মাথায় নয়; হাতে লেগেছিল রোনালদোর। বাতিল হল গোল। রোনালদো এবং জুভেন্টাসের মাথায় হাত। এই বুঝি হাতছাড়া হয়ে গেল জয়টা। কিন্তু নাটকীয়তার বাকি ছিল তখনও। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে আবারও সেই সান্দ্রোর ক্রসে পা ছুঁয়ে গোল করলেন ফেদেরিকো বার্নার্দেশি। এবার আর ‘ভিএআর’-এর সাহায্য নেওয়া লাগল না। রোনালদোর প্রথম ম্যাচে হাজারও নাটকের শেষে ঠিকই জয় দিয়েই ২০১৮-১৯ মৌসুমের সিরি আ যাত্রা শুরু করল ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রির দল।  

    রোনালদোর ইতালি যাত্রার শুরুটা যে বেশ কণ্টকাকীর্ণ হবে, তারে কিছুটা আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই। পিছিয়ে পড়েও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এমানুয়েল জিয়াকেরিনির পেনাল্টিতে লিডে তখন কিয়েভো। প্রথমার্ধের ৩ মিনিটে মিরালেম পিয়ানিচের ফ্রিকিক ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হওয়া কিয়েভোর রক্ষণভাগের ভুলে দলকে লিড এনে দেন স্যামি খেদিরা। আবারও একপেশে কোনো জয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল জুভেন্টাস। ম্যাচে থিতু হওয়ার আগেই পিছিয়ে পড়া কিয়েভোকে এরপর রীতিমত আক্রমণের জোয়ারে ভাসিয়ে দেন তুরিনের বুড়িরা। খেদিরার গোলের মিনিটখানেক অতিবাহিত হওয়ার আগেই পাউলো দিবালার জোরালো শট ফিরিয়ে দেন সোরেন্তিনো। এর মিনিট পাঁচেক পর ডগলাস কস্তার ক্রস গোলের গজ ছয়েক দূর থেকে লক্ষ্যে পাঠাতে ব্যর্থ হন হোয়াও ক্যান্সেলো। ব্যবধান দ্বিগুণের সবচেয়ে কাছে যান পর্তুগিজ যুবরাজই। ১৮ মিনিটে হুয়ান কুয়াদ্রাদোর পাস থেকে তার শট চলে যায় বারের সামান্য বাইরে দিয়ে। জুভেন্টাসের মিসের মহড়ায় ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরতে থাকে কিয়েভো। মাঝমাঠের দখলটাও নিয়ে নেয় তারা। আর প্রতি-আক্রমণেও ত্রাস ছড়াতে থাকে জুভেন্টাসের রক্ষণে।

    ফলাফলটাও আসে হাতেনাতেই, সেই প্রতি-আক্রমণেই। ৩৯ মিনিটে উইঙ্গার এমানুয়েল জিয়াকেরিনির ক্রসে হেড করে কিয়েভোকে সমতায় ফেরান স্টেপিনস্কি। দীর্ঘদিন একসাথে খেলা কিয়েলিনি-বনুচ্চির কেউই মার্ক করেননি স্ট্রাইকারকে। গোলের পর জুভেন্টাসের স্তব্ধ ফুটবলার, কোচিং স্টাফ, সমর্থকদের মাঝে বূণো উল্লাসে মেতে উঠেন কিয়েভোর সবাই। ৭৭ ভাগ পজেশন নিয়েও প্রথমার্ধে তেমন সুবিধা করতে পারেনি জুভেন্টাস। প্রথমার্ধে রোনালদো-দিবালা-কস্তা-কুয়াদ্রাদো আক্রমণ চতুষ্টয়ের কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি। প্রথমার্ধ শেষে রোনালদোর হতাশাই যেন বলে দেয় প্রথমার্ধের সারমর্ম।

    গোল খেয়েই যেন টনক নড়ে জুভেন্টাসের। প্রথমার্ধে নিজেদের ছায়া হয়ে থাকা কুয়াদ্রাদো-দিবালাকে উঠিয়ে বার্নার্দেশি-মানজুকিচকে নামিয়ে দেন অ্যালেগ্রি। এরপর থেকেই স্বরূপে ফিরতে থাকে জুভেন্টাস। রোনালদো কখনও বাঁ-প্রান্তে, কখনও মানজুকিচের সাথে ‘সেকেন্ড স্ট্রাইকার’ হিসেবে খেলতে থাকেন। আক্রমণের ধার বেড়ে যাওয়া জুভেন্টাসকে ঠেকাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছিল কিয়েভো। তবে কিয়েভো গোলরক্ষক সোরেন্তিনি যেন দুর্বার। রোনালদো-মানজুকিচদের ফিরিয়ে দিয়েছেন বারবার। তবে ৭৪ মিনিটে আর বাঁচাতে পারেননি দলকে। দিবালার কর্ণার ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজ জালে ঠেলে দেন বনি। সমতায় ফিরেই জয়সূচক গোলের আশায় হন্যে হয়ে ছুটতে থাকে জুভেন্টাস। শেষমেশ বার্নার্দেশির গোলে মুখে বিজয়ীর হাসি এবং টেবিলে তিন পয়েন্ট নিয়েই মৌসুম শুরু করল জুভেন্টাস। ১৯৯৮ সালে শেষবার পেরুজিয়ার বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম ম্যাচে ২ গোল খেয়েছিল জুভেন্টাস।