৫ গোলের ডার্বিতে জিতল চেলসি
দুই দলের রক্ষণই করেছে একাধিক ভুল। আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরাও হেলায় হারিয়েছেন সহজ সুযোগ। নিজেদের খেলাটা আসলে খেলেছেন দুই দলের ফুলব্যাকরাই। ৫ গোলের থ্রিলারে জয়সূচক গোলটাও এক ফুলব্যাকেরই করা। ৮১ মিনিটে মার্কোস আলন্সোর ওই গোলেই লন্ডন ডার্বিতে আর্সেনালকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে চেলসি। মরিজিও সারি ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচেই পেলেন জয়, দুই ম্যাচে তার দল গোল করল ৬টি। আর উনাই এমেরি দলের ভাগ্যটা থাকল অপরিবর্তিতই।
আর্সেনালের নতুন ম্যানেজারের জন্য অবশ্য মৌসুমের শুরুতে কঠিন ম্যাচই অপেক্ষা করছিল। ম্যান সিটির বিপক্ষে একেবারেই লড়াই করতে না পারলেও, চেলসির বিপক্ষে আজ শেষ পর্যন্তই লড়েছে গানাররা। এবার তাদের সঙ্গী হয়েছে আফসোস। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে প্রথম সুযোগটাও পেয়েছিল আর্সেনালই। নাচো মনিরিয়েলের ক্রস থেকে মেসুত ওজিল করেছিলেন ভলি। ৭ মিনিটের সেই চেষ্টায় অবশ্য চেলসি গোলরক্ষক কেপার পরীক্ষা নিতে পারেননি ওজিল। দুই মিনিট পরই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে চেলসি। নিজেদের রক্ষণ পাঠানো লং বলের আয়ত্ত্বে নিয়ে ক্রস করেন আলোন্সো। পেদ্রোকে মার্ক করতে পারেননি আর্সেনালের কেউই। প্রায় ফাঁকায় থেকেই বাঁ পায়ের শটে প্রথম গোলটা করেন পেদ্রো। এরপর চেলসির আধিপত্যই ছিল ম্যাচে। ১২ মিনিটে রস বার্কলির শট চলে যায় ওপর দিয়ে। এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর আর্সেনালকে প্রায় কোনঠাসাই করে ফেলেছিল চেলসি।
চাপ সরানোর দারুণ একটা সুযোগ হাতছাড়া করে উলটো দেয়ালেই পিঠ ঠেকে যায় আর্সেনালের। ১৯ মিনিটে হেক্টর বেয়ারিনের ডিবক্সের ভেতর থেকে করা ক্রস থেকে গোল না করাই কঠিন ছিল। পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং সেই কঠিন কাজটাই করলেন ৭ গজ দূর থেকে, মারলেন বারপোস্টেরও অনেক ওপর দিয়ে। পরের মিনিটেই হাতে নাতে শাস্তি। আবারও সেই লং বল। আর্সেনালের ডিফেন্সিভ লাইন ছিল চেলসির অর্ধে। চেলসির লং বলের টোটকা কাজে লাগল আরেকবার। সেন্টারলাইনের কাছাকাছি জায়গা থেকে দৌড় শুরু করে সিজার আজপিলিকুয়েতার লং বল থেকেই দ্বিতীয় গোলটা করেন আলভারো মোরাতার। ম্যাচের ওই সময়ে গোলটা চেলসির যত না দরকার ছিল, তার চেয়ে বেশি দরকারী ছিল স্প্যানিশ স্ট্রাইকারের। ম্যাচের ২০ মিনিটেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে জয়ের উৎসবও শুরু হয়ে গেল তাতে। আর মাঠে কয়েক হাজার আর্সেনাল সমর্থকদের মাথার চুল ছেড়ার যোগাড় হল ৩২ মিনিটে, আরও একবার। অ্যালেক্স ইওবি এবার ডানদিক থেকে করেছিলেন ক্রস, হেনরিখ মিখিতারিয়ানও করলেন কঠিন কাজটাই। গোলেই শট নিতে পারলেন না তিনি। ডাগ আউটে এমেরি তখন কোনোমতে দলকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন তবুও।
তাতে অবশ্য কাজও হল। প্রথমার্ধস শেষের আগেই ৫ মিনিটের এক ঝড়ে চেলসিকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল আর্সেনাল। এর আগে সহজ সুযোগ নষ্ট করা মিখিতারিয়ান, কঠিন একটা কাজই করলেন। ডিবক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের শটে নিখুঁত ফিনিশে গোল করে কোনোমতে আর্সেনালকে ফেরালেন ম্যাচে। এরপর আবার ফিরে গেলেন আগের পান্ডুলিপিতে। ইওবির আরেকটা ক্রস মারলেন বাইরে দিয়ে, ডিবক্সের ভেতর থেকে। ৪১ মিনিটে এরপর এই জুটির সমন্বয়েই ম্যাচে ফিরল আর্সেনাল। গোল করলেন ইওবি, করালেন মিখিতারিয়ান।
রক্ষণের এলোমেলো অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটল দ্বিতীয়ার্ধে। তাই গোলের জন্য হাপিত্যেশ হয়ে ঘুরতে থাকা দুই দলের স্ট্রাইকাররাই ফিরলেন খালি হাতে। বদলি স্ট্রাইকার লাকাজেত, জিরুরা সুযোগ পেলেন অল্পই। চেষ্টা করতে হল ডিবক্সের বাইরে থেকে। বার্কলির একটা শট দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়ে পিটার চেকও আর্সেনালকে টিকিয়ে রাখলেন ম্যাচে। সারির অধীনে আর্সেনালের বিপক্ষে ওপরেই খেলেছেন এনগলো কান্তে। তিনিও সুযোগ পেয়েছিলেন গোল করার। ৭৭ মিনিটে অবশ্য আরও ভালো করার সুযোগ ছিল কান্তের কাছে। জর্জিনিয়োও ডিবক্সের বাইরে থেকে একবার চেষ্টা করেছিলেন। আর্সেনালকে চাপে রাখার সুফলটা পেতে এরপর আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি চেলসির।
৬০ মিনিটে মাঠে নামা এডিন হ্যাজার্ডই বদলে দিয়েছেন ম্যাচের ভাগ্য। ডান দিক দিয়ে জায়গা তৈরি করেছিলেন, পরে তার পাস থেকেই গোল করলেন আলোন্সো। ৮১ মিনিটের ওই গোলের পর ম্যাচে ফেরার শক্তিও হারিয়ে ফেলে আর্সেনাল। অ্যারন রামসের একটা ভলি ছাড়া চেলসির রক্ষণকে চিন্তায় ফেলার মতো কিছু করতে পারেনি তারা। উলটো শেষদিকে জিরু, হ্যাজার্ডদের চেক চেক না দিলে হারের ব্যবধানটা বাড়তই গানারদের জন্য।