মাথা উঁচু করেই মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ
বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক ম্যাচই বটে। প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ। এই পর্যন্ত আসাও কম গর্বের নয়। সেই ম্যাচে রূপকথার গল্পও লেখা হয়নি, তাই বাংলাদেশের সেরা সাফল্যে হয়ে থেকেছে এটাই। প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়া আগের আসরের রানার্স আপ। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্যটা যেমন শোনায়, মাঠের ফুটবলেও বোঝা গেল সেটা। স্কোরলাইনে বোঝা গেল আরও বেশি। তবুও এই ম্যাচ থেকেও পাওয়ার মতো অনেক কিছু নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ৩-১ গোলে হেরে এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাংলাদেশের বিদায়টাও তাই হয়েছে মাথা উঁচু করেই।
কাতারকে হারানোর ম্যাচের শেষদিকে ভাগ্যের সহয়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। শুশান্ত ত্রিপুরা নিজের ডিবক্সের ভেতর হাত দিয়ে বল ধরলেও রেফারির চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলেন। পেনাল্টির শাস্তিটাও পেতে হয়নি বাংলাদেশের। পরে তো কাতারকে বিদায় করে দিয়েই দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল জামাল ভুঁইয়ার দল। সেই ম্যাচের খন্ড চিত্র ফিরে এলো আবারও, যেন দায় শোধ করে দিয়ে গেল ভাগ্য। সেই শুশান্তই উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। বাহুতে লেগেছিল বল, রেফারির চোখে পেনাল্টি মনে হয়নি। আসলে পেনাল্টি ওটা ছিলও না। কিন্তু সহকারি রেফারির কাছে পেনাল্টিই মনে হল। রেফারিও শুনলেন তার কথা। একে তো প্রতিপক্ষ এশিয়ার অন্যতম সেরা দল, তারওপর ১০ মিনিটে দুর্ভাগ্যের ফাঁদে পড়ে পেনাল্টিই দিয়ে বসে বাংদলাদেশ। সেখান থেকেই গোল করে শুরুতেই বাংলাদেশকে পিছে ঠেলে দেন কিম ইও সন। এলোমেলো শুরুর পর গোল হজম করে দিশেহারাই হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
১৬ মিনিটে ইয়ংয়ের শট বারপোস্টে না লেগে ফেরত আসলে তখনই দুই গোলে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। অবশ্য কিছুক্ষণই পরই সেই ভাগ্যটা মেনে নেয় জেমি ডের দল। হান ওয়াই থের ডান পায়ের শট নেয়ারপোস্টে ঢুকে গেলে গোলরক্ষক রানার মতো উলটো পথে ভূপাতিত হয় বাংলাদেশও। প্রথমার্ধে দুই দলের পার্থক্য বোঝা গেছে ভালোভাবেই। বাংলাদেশ দল রক্ষণে খুব বেশি ভুল না করলেও, আক্রমণে ছিল একেবারেই নখদন্তহীন। উত্তর কোরিয়ার গোছানো রক্ষণ ভেঙে প্রথমার্ধে কোনো শটই করা হয়নি বাংলাদেশের। মাঝমাঠ থেকে পাওয়া এক ফ্রি কিকে তপু বর্মনের হেডটাই যা একটু আশা জাগিয়েছিল। তাও এগিয় আসা গোলরক্ষকের ওপর দিলে গোলে মারতে পারেননি তপু। তার হেড উত্তর কোরিয়ার ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে চলে যায় ওপর দিয়েই। প্রথমার্ধে তাই উত্তর কোরিয়ার ৪ অন টার্গেট শটের বিপরীতে বাংলাদেশের ছিল শূন্য।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেই আক্রমণগুলো ফল দেখেনি একটাও। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ওই খেলা আগামীদিনে অনেকটাই আশা দেখাতে পারে বাংলাদেশকে। যদিও ৬৯ মিনিটে রক্ষণের ভুলে তৃতীয় গোল হজম করার পর সেই শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলার কথা ছিল। কিন্তু ঘটেছে উলটোটা। একটু দেরি করেই ম্যাচে ফেরার লড়াই শুরু করেছিল লাল সবুজের দল। শেষ ১০ মিনিটেই দেখা গেল বাংলাদেশের সম্ভাবনময় সব আক্রমণ। ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, আরও দেরি হয়েছে প্রথম গোলটা পেতে। ৯১ মিনিটে মোহাম্মদ সাদ হাসানের গোলে স্বান্তনাটা পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু পরের মিনিটেই ঠিকমতো হেডটা করতে পারলে উত্তর কোরিয়ার জয়টা আরও কঠিন বানিয়ে ফেলার একটা সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। সে দফায় আর হয়নি। টিকেট ফেরত দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল এখনও আছে ইন্দোনশিয়ায়। এবার নতুন করে টিকেটটা কাটতেই হবে বাফুফেকে। ফুটবলারদের ফিরতি যাত্রাটা দুর্দিনে স্বস্তির বাতাসই বয়ে আনার কথা দেশে।