ওল্ড ট্রাফোর্ডে টটেনহামের দাপুটে জয়
মাঠ ছাড়ার আগে স্ট্রেটফোর্ড এন্ডে এসে দাঁড়িয়েই গেলেন হোসে মরিনহো। থামলেন, প্রায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া গ্যালারিতে তখনও কারা অপেক্ষায় ছিলেন তাদের একবার দেখে নিলেন। ওই ভরসাটুকু এখন অনেক বেশি দরকার হোসে মরিনহোর। ব্রাইটনের কাছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হারের পর সমালোচিত হয়েছিলেন, ওল্ড ট্রাফোর্ডে টটেনহাম হটস্পারের কাছে ৩-০ গোলে হেরে এখন চাকরি নিয়েই টানাটানি। হোম ম্যাচে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পরাজয়টা মরিনহো পেয়েছেন স্পার্সের হাতে। প্রতিপক্ষ ম্যানেজার মাউরিসিও পচেত্তিনো তখনও ব্যস্ত দলের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে। ৪৬ বছরের মধ্যে ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্পার্সের সবচেয়ে বড় জয়, প্রিমিয়ার লিগে ২৭ চেষ্টায় মাত্র তৃতীয়বারের মতো। ঠিক বিপরীত চিত্র।
অথচ দুর্নাম ঘোচাতে শুরু থেকেই আজ আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলেছে ম্যান ইউনাইটেড। প্রথমার্ধ শেষেও ম্যাচের ফল ঝুলে ছিল পেন্ডুলামের মতো। ইউনাইটেড সমর্থকদের জন্য স্বস্তিও ছিল তাতে। আগের দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১০ শট অন টার্গেট ছিল ইউনাইটেডের, টটেনহামের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই সেই সংখ্যাটা ছুঁয়ে ফেলল তারা। প্রতিপক্ষের ডিবক্সের ভেতরও ১৫ বার বল টাচ করা হয়ে গিয়েছিল ফ্রেড, লুকাকুদের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শটটাই অবশ্য লক্ষ্যে করতে পারেননি রোমেলু লুকাকু। ম্যাচের শুরুর দিকেই সুবর্ন এক সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। টটেনহামের রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে, গোলরক্ষক হুগো লরিসের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতি থেকেও ডান পায়ে নেওয়া শট মেরেছেন বাইরে দিয়ে। কে জানে, শুরুর দিকেই গোলটা পেয়ে গেল হয়ত অন্যরকম একটা ফলও পেতে পারত ইউনাইটেড।
বিরতির সময় অবশ্য খানিকটা বিতর্কও ছিল। ২৯ মিনিটে লুকাস মউরাকে ডিবক্সের ভেতর ফাউল করেছিলেন ফিল জোন্স। সে যাত্রায় অবশ্য ইউনাইটেডের রক্ষা হয়, রেফারির চোখ এড়িয়েই গেছে ওই ঘটনা। আর টটেনহাম আফসোস ভুলেছে দ্বিতীয়ার্ধের দারুণ পারফরম্যান্স দিয়ে। ৪৬ মিনিটে পল পগবা ডিবক্সের বাইরে থেকে শট করে ব্যর্থ হন। এরপরই শুরু টটেনহামের একচ্ছত্র আধিপত্য। ৫০ মিনিটে প্রথম গোলের আগে আরও দুইবার দারুণ সুযোগ তৈরি করেন হ্যারি কেইন, ডেলে আলিরা। পরে সেখান থেকেই কর্নার, দারুণ এক হেডে ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিজের প্রথম গোলটাও পেয়ে যান হ্যারি কেইন।
পরের মিনিটেই ইউনাইটেডও অবশ্য জবাবটা দিয়েই দিচ্ছিল। সেবার লুকাকু লক্ষ্যেই মারলেন, পছন্দের বাঁ পায়েই। কিন্তু হুগো লরিসকে হার মানাতে পারলেন না। দুই মিনিট পর মউরার গোলে লন্ডভন্ড ইউনাইটেড। স্মলিং আর জোন্স শুরুতে আশা দেখালেও দ্বিতীয়ার্ধেই হয়ে গেলেন এলোমেলো। আড়াই মিনিটের ব্যবধানে তাই ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুই গোলে পিছিয়ে ইউনাইটেড। ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের ডানদিক থেকে করা মাইনাস, কোণাকুণি শটে গোলে পরিণত করেন মউরা।
শুরুটা কেইন করলেও পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত ছিলেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। গোলটা তার প্রাপ্যই ছিল। ৮৪ মিনিটে রাতটা স্মরণীয় করে নেন নিজের দ্বিতীয় গোল করে। এবার অ্যাসিস্ট কেইনের। ম্যাচে ঘরের দলের ফেরার কোনো সুযোগ থেকে থাকলে, তখনই শেষ সবকিছু। এই গোলটা অবশ্য আরও আগেই পাওয়া হত টটেনহামের। ৬৬ মিনিটে বদলি ভিক্টর লিন্ডেলফের ভুল থেকে আলিকে গোলবঞ্চিত করেছিলেন ডি গিয়া। এর আগে পরের সময়টায় লিনগার্ড দুইবার ডিবক্সের ভেতর ভালো জায়গা থেকেও লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বদলি অ্যালেক্সিস সানচেজও আরও এক ম্যাচ কাটিয়েছেন নিজের ছায়া হয়ে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইউনাইটেডকে হারিয়ে লিভারপুল, ওয়াটফোর্ড, চেলসির পর চতুর্থ দল হিসেবে টানা ৩ ম্যাচেই জিতল টটেনহাম। দলবদলের মৌসুমে একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিল টটেনহাম, তার কোনো প্রভাবই যে দলে পড়েনি সেটাই ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রমাণ করলেন পচেত্তিনো।