শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেল 'আসল' বাংলাদেশ
নীলফামারির শেখ কামাল স্টেডিয়ামে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। গ্যালারির উন্মাদনাও ততোক্ষণে ম্লান হয়ে গেছে। বাংলাদেশ হেরে বসেছে শ্রীলঙ্কার কাছে। ১০ মিনিটে গোল হজম, তারপর আর উঠে দাঁড়াতে না পারা বাংলাদেশ হেরেছে ওই ১-০ ব্যবধানে। সাফের আগে মূল দলকে ঝালাই করে নেওয়ার ছিল প্রীতি ম্যাচের লক্ষ্য। বাংলাদেশের কোচ জেমি ডে তে তাই দিনশেষে হতাশই করেছেন 'আসল' দলটা।
এশিয়ান গেমসে কাতারকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে ইতিহাস গড়া বাংলাদেশ দলের সঙ্গে এই একাদশে পার্থক্য ছিল অনেক। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ জানিয়েছেন, সাফের জন্য ১০ জনের দল তার পাকাই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দেখে ডাকবেন আরও ১০ জন। সেই ১০ জনের তালিকাটাও কি শেষ পর্যন্ত পাবেন ডে?
যে উন্মাদনা নিয়ে খেলা শুরু হয়েছিল, ৯০ মিনিট গড়াতে গড়াতে সেটা হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের খেলা আরও একবার হতাশ করেছে গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদেরও। গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল অনেকটাই সামনে ছিলেন, শ্রীলঙ্কার রাইট উইঙ্গার মোহাম্মদ ফজল ১০ মিনিটে সেই সুযোগটাই নিয়েছিলেন। দূরপাল্লার শটে সোহেলকে চমকে দিয়ে করলেন অভাবনীয় এক গোল। ম্যাচের শুরুতে এমনটা হতেই পারে, বাংলাদেশের জন্য ফিরে আসারও যথেষ্ট সময় ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের খেলা বাকি ৮০ মিনিটে সমর্থকদের উলটো ঝিমুনি ধরালো।
প্রথমার্ধের শেষদিকে আরও একবার দূর থেকে একটা চেষ্টা করেছিল শ্রীলঙ্কা। ইশানের শট সে যাত্রায় যায় বাইরে দিয়ে। এছাড়া পুরো ম্যাচে শ্রীলঙ্কার খেলা ছিল আরও গড়পড়তা মানের। বাংলাদেশের জন্য অশনী সংকেত এটাই। এমন দলের বিপক্ষেও কেন অসহায় আত্মসমর্পণ? দ্বিতীয়ার্ধে শ্রীলঙ্কার রক্ষণকে নড়িয়ে দেওয়ার মতো একটা আক্রমণও করতে পারল না বাংলাদেশ। স্ট্রাইকার শাখাওয়াত রনি গোটা কয়েক হাফ চান্স পেয়েছিলেন। একটাও কাজে লাগাতে পারেননি। সাফের দলের জায়গাটা হারালেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
পিছিয়ে থাকা ম্যাচে পরে উপায় না পেয়েই জামাল ভুঁইয়ার শরণাপন্ন হন কোচ জেমি ডে। ম্যাচের ঘন্টাখানেক যাওয়ার পরও বাংলাদেশের নখদন্তহীন আক্রমণভাগকে বলের যোগান দিতে নেমে জামালও সুবিধা করতে পারেননি। পুরো খেলায়ই ছিল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে যাওয়ার আগেই সবকিছু এলোমেলো। শ্রীলঙ্কার রক্ষণও যে দূর্গ গড়েছিল তেমনটাও নয়। ভুল ছিল অনেক, সেই সুযোগও নিতে পারেনি বাংলাদেশ।
গোল পাওয়ার তাই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেটপিস আর লং থ্রো। ডিবক্সের ভেতর ফেলা সবগুলো বলই শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক সুজান পেরেরা সামলেছেন দক্ষ হাতে। তাই এই উপায়ও গোল দিতে পারেনি বাংলাদেশকে। হাতের সবগুলো বদলিই করিয়েছিলেন ডে, কিন্তু নাবিব নেওয়াজরা পরে নেমেও আলো কাড়ার মতো কিছু করতে পারেননি। প্রচন্ড গরমে ধুঁকেছে দুই দলের খেলোয়াড়েরাই, কিন্তু ম্যাচ শেষে ক্লান্তিটা শ্রীলঙ্কা ভুলেছে জয় দিয়ে। আর বাংলাদেশের কাঁধে আরও জেঁকে বসেছে পুরনো ভয়টাই। এই দল নিয়ে কতোই বা ভালো করতে পারবে দল? তার সবকিছুই অবশ্য নির্ভর করছে কোচের সিদ্ধান্তের ওপর। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের খেলা অন ভরিয়েছে, সেখান থেকে ফলও এসেছে। আপাতত ঘরের মাঠে দর্শকদের মন ভরাতে পারলে সেটাই সাফল্য হিসেবে ধরে নিতে পারে বাংলাদেশ। তার জন্য হয়ত 'আসল' দল বাদ দিয়ে অণুর্ধ্ব-২৩ এর যুবারাই নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাতে পারে দেশের ফুটবলে।
৪ তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় ভূটানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সাফ মিশন। প্রীতি ম্যাচের আনুষ্ঠানিকতা শেষ, এখন মূল প্রতিযোগিতার অপেক্ষা।