লা লীগা প্রিভিউঃ বার্সেলোনা
লা লিগা শুরু হতে আর মাত্র কয়েকঘন্টার অপেক্ষা। অন্যদলগুলো আজ নেমে পড়লেও বার্সেলোনা আর রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রবিবার পর্যন্ত। এই লেখায় চেষ্টা করা হয়েছে লা লীগার বড় তিন দলের কে কোন নতুন অস্ত্র কিনলো, পুরাতন অস্ত্রগুলো কিভাবে শানিয়ে নিলো তা বিশ্লেষণ করার। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে গত মৌসুমে ট্রেবলজয়ী দল বার্সেলোনার কথা।
গত দশকের সেরা ফুটবল ক্লাব কোনটি? প্রশ্ন করলে নিশ্চিতভাবেই উত্তর আসবে বার্সেলোনা। এই সময়ে তাঁরা ট্রেবল জিতেছে ২ বার, হেক্সা জিতেছে ১ বার। হেক্সা জেতার সুযোগ ছিল এবারো। বাধা হয়ে দাঁড়ালো অ্যাতলেটিকো বিলবাও; পেপ গারদিওলার পথে এবার আর এক ধাপ এগোনো হল না বর্তমান কোচ লুইস এনরিকের।
স্টেগানের অফফর্মে এনরিকের কপালে চিন্তার ভাঁজ
গত মৌসুমের চ্যাম্পিয়নসলিগের সবগুলো ম্যাচেই দারুণভাবে বার্সেলোনার গোলবার সামলিয়েছেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না তাঁর। শেষ ৪ ম্যাচে খেয়েছেন ১৪ গোল। এনরিকে তাই যতই বলুন না কেন এটা কোন ব্যাপার না, একটা দুশ্চিন্তা তাঁর মাথায় না থেকে পারেই না।
অন্য কিপার রাউল ব্রাভো আছেন ভরসার প্রতীক হয়ে। গত মৌসুমের ৩৭ ম্যাচে ২৩ ক্লিনশিট সেকথাই বলছে তাঁর হয়ে। গতবার ব্রাভো সামলিয়েছিলেন লা লিগা আর স্টেগান চ্যাম্পিয়নস লীগ; এবার একটা গুজব শোনা যাচ্ছে যে এনরিকে হয়তো তাঁদের পজিশন বদলাবদলি করে দিতে পারেন। অর্থাৎ স্টেগান যাবেন লা লিগাতে, আর ব্রাভো যাবেন চ্যাম্পিয়নস লীগে।
চোট আর সাসপেনশনে রক্ষণভাগের বেহাল দশা
বার্সেলোনা শিবিরে চোট থাবা বসিয়েছে মারাত্মকভাবে। চোটের কারণে মাঠের বাইরে লেফটব্যাক জর্ডি আলবা এবং রাইটব্যাক ডগলাস। রেফারীকে গালি দিয়ে ৪ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন জেরার্ড পিকে। সেভিয়া থেকে নতুন সাইন করানো খেলোয়াড় অ্যালেক্স ভিদাল মাঠে নামতে পারবেন না বার্সার ট্রান্সফার ব্যানের কারণে। সবমিলিয়ে প্রথম বেশ কয়েকটি ম্যাচ রক্ষণ নিয়ে খুব ঝামেলায় থাকবেন লুইস এনরিকে। রবিবার বিলবাওয়ের সাথে সেরা ৪ জন ডিফেন্ডার নামাতেই হিমশিম খেয়ে যাবেন তিনি। তবে তাঁর ভরসার নাম হতে পারে জেরেমি ম্যাথিউ এবং দানি আলভেজ। সাথে মার্ক বাত্রা এবং ভারমালেন কিছুটা হলেও যোগ্য সঙ্গ দিতে পারলে প্রথম কয়েকটি ম্যাচের পরীক্ষা ঠিকঠাক মতোই উতরে যেতে পারবে বার্সা, এ আশা বার্সেলোনার সমর্থকেরা করতেই পারে।
মিডফিল্ডে নতুন অস্ত্র
গত মৌসুম শেষে জাভি চলে গেছেন। তাঁর জায়গায় বার্সা এনেছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ থেকে আর্দা তুরানকে। তুরানের সংযুক্তিতে বার্সার আক্রমণভাগ আরও ধারালো হবে সেকথা বলা যায় এখনই। তবে ট্রান্সফার ব্যানের কারণে তাঁকেও জানুয়ারির আগে পাচ্ছে না বার্সেলোনা। তাই মধ্যমাঠ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকবে রাকিতিচ, ইনিয়েস্তা আর মেসির উপরে। মেসি যেহেতু বারবার উপরে-নিচে উঠানামা করেন; এতে রাকিতিচ এবং ইনিয়েস্তার উপরে চাপটা বাড়বে। তবে বুসকেটস আর মাসচেরানো তো আছেনই। আক্রমণ তৈরী থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের রুখে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এই দুজন। ব্যাকআপ দুজন মিডফিল্ডার হিসেবে আছেন সার্জিও রবার্তো এবং রাফিনহা। এই মিডফিল্ডের উপরে নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে পারেন লুইস এনরিকে।
আস্থার নাম এমএসএন
মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার এই ত্রয়ীর উপরে ভর করেই গতবার ডাবল ট্রেবল জিতলো বার্সেলোনা। এই কম্বিনেশনের উপরেই আস্থা রাখছেন এবারো লুইস এনরিকে। সেজন্যই হয়তো এবারে আর নতুন কোন স্ট্রাইকার কেনেননি তিনি। তবে আশংকার কথা হচ্ছে, চোটের কারণে প্রথম কয়েকটি ম্যাচ হয়তো মিস করবেন নেইমার। তবে তাঁর অভাব নিশ্চয়ই পুষিয়ে দিতে কার্পণ্য করবেন না মেসি এবং সুয়ারেজ। আর নেইমার ফিরে আসলে তো কথাই নেই। পেদ্রো নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে চলে গেছেন চেলসিতে। স্যান্দ্রো রামিরেজ এবং মুনির এল হাদ্দাদি নামে দুই তরুণ আছেন যাদেরকে বলা হচ্ছে বার্সার ভবিষ্যৎ। নেইমারের অনুপস্থিতিতে এঁরা যদি জ্বলে ওঠেন তাহলে কিন্তু লাভ আখেরে বার্সারই। তবে এঁদের উপর এখনই খুব ভরসা করাটা উচিত হবেনা এনরিকের। তবে এঁদেরকে আরও সময় দিলে আরো ৫ বছর পরে বার্সার আক্রমণভাগের ভরসা হতে পারেন এঁরা।
লুইস এনরিকে হয়তো হেক্সা জিততে পারেননি। তবে টাটা মার্টিনো চলে যাওয়ার পরে অনেকটাই এলোমেলো বার্সাকে যেভাবে গুছিয়ে নিয়েছেন তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব লুইস এনরিকের। গত মৌসুমের প্রথম দিকে একেক ম্যাচে একেকজনকে খেলানো নিয়ে সমালোচনা হয়েছিলো বিস্তর। সেই সমালোচকরাই আজ এনরিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। চ্যাম্পিয়নস লীগ আর লা লীগার শেষ রাউন্ডের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে পুরো দলকে 'ফুল-ফিট' হিসেবে পাওয়ার কৃতিত্বটা তো অনেকটা কোচেরই।
নতুন মৌসুম শুরু হচ্ছে। আর এনরিকে অধ্যায়ের নতুন ম্যাজিকের অপেক্ষায় বার্সা সমর্থকেরা।
আরো পড়ুনঃ
লা লীগা প্রিভিউঃ অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ