লুকাকুতে পুড়ল বার্নলি, ওয়াটফোর্ডে টটেনহাম
টটেনহাম হটস্পারের কাছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে হেরেই নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার হোসে মরিনহোর চাকরি। সপ্তাহ ঘুরতেই দুই দলের ভাগ্য গেল বদলে। বার্নলিকে ২-০ গোলে হারিয়ে স্বস্তির এক জয় পেয়েছে ইউনাইটেড। আর সবাইকে চমকে দিয়ে ভিকারেজ রোডে শতভাগ জয়ের রেকর্ডটা অক্ষুণ্ণ রেখেছে ওয়াটফোর্ড। স্বপ্নের মতো শুরুতে চতুর্থ ম্যাচে এসে তারা হারিয়ে দিয়েছে টটেনহামকে, তাও আবার প্রথমে পিছিয়ে পড়ে।
টার্ফে মুরে দিনের শুরুটা হয়েছিল ইউনাইটেড সমর্থকদের একটা ব্যানার উড়িয়ে। তাতে সমালোচিত হয়েছেন ইউনাইটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ এড উডওয়ার্ড। তাতে মরিনহোর খানিকটা স্বস্তিই পাওয়ার কথা, আর শেষে ম্যাচটা জিতে সেটা বাড়ারই কথা। দলের পারফরম্যান্সও ছিল খুশি হওয়ার মতোই। শুরুর দশ মিনিটে দুইবার জেসি লিনগার্ডই সুযোগ তৈরি করেছিলেন। দূর থেকে লক্ষ্যে শট না করতে পারলেও, মিনিটে পাঁচেক পর ডিবক্সের ভেতর থেকে ফ্লিক করে জো হার্টকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন। ইউনাইটেডের মিডফিল্ডে শুরু থেকেই ছিলেন মারুয়ন ফেলাইনি, নেমানিয়া মাটিচ। তাতে পল পগবা পেয়েছিলেন স্বাধীনতা, খেলেছেন পুরো মাঠ জুড়েই। বিশেষ করে অ্যালেক্সিস সানচেজ আর লুক শর সঙ্গে তার ভালো বোঝাপড়া ইউনাইটেডকে সাহায্য করেছে অনেকখানি। বার্নলিকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে নিজের অর্ধেই। ২৭ মিনিটে সানচেজের মাপা ক্রসে দারুণ হেড করে মৌসুমের দ্বিতীয় গোলটা করেন রোমেলু লুকাকু। তাতেই খেলার নিয়ন্ত্রণ আরেকটু নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় ইউনাইটেড।
প্রথমার্ধ শেষের আগেই হ্যাটট্রিকটাও করা হয়ে যেত লুকাকুর। ৩৬ মিনিটে সানচেজের সঙ্গে ওয়ান টু খেলে ডিবক্সের ভেতর থেকে ডান পায়ে নিয়েছিলেন দুর্বল শট, হার্টও ঠেকিয়ে দিয়ে বার্নলির আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু ৪৪ মিনিটে আর লুকাকুকে আটকাতে পারেননি। শ পাস দিয়েছিলেন লুকাকুকে, প্রথম সুযোগেই ডান পায়ে মারতে পারতেন পেনাল্টিবক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে। কিন্তু আরেকটু নিশ্চিত হতে লুকাকু পাস দিয়েছিলেন ডিবক্সের ঠিক বাইরে। ফেলাইনির শট ব্লকড হয়ে ঘুরেফিরে আবার সেই লুকাকুর কাছেই পড়ে, সেই ডান পায়েই ৪৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটাও পেয়ে যান লুকাকু। প্রথমার্ধটা তাই পুরোপুরিই মনমতো ছিল মরিনহোর। তার চেয়েও বেশি তৃপ্তিতে অবশ্য লুকাকই ছিলেন। দিদিয়ের দ্রগবার প্রিমিয়ার লিগে ১০৪ গোলের মাইলফলকটা ছুঁয়েছেন ওই গোলেই।
দ্বিতীয়ার্ধে কেবল গোলই হয়নি। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে অনেক। ৬৮ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল ইউনাইটেড। কিন্তু দারুণ খেলা পগবার ভাগ্যে গোলটা জোটেনি স্পটকিক থেকে। ডানদিকে ঝাপ দিয়ে হার্ট ভেঙেছেন পগবার হৃদয়। এর কিছুক্ষণ পর বদলি হিসেবে মাঠে নামার ১০ মিনিটের মাথায় মার্কাস র্যাশফোর্ড সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে দশ জনের দলে পরিণত হয় ইউনাইটেড। পিটার বার্ডস্লি স্লাইড করেছিলেন বাইলাইনে বল পায়ে থাকা র্যাশফোর্ড, তাতে বল চলে যায় বাইরে। কিন্তু মাথা গরম করে র্যাশফোর্ড উলটো মাথা দিয়ে গুঁতো দিয়ে দেখেন লালকার্ড। এখন পরের ৩ ম্যাচ বসে থেকেও দেবেন মাশুল। কিন্তু বার্নলি আর দশজনের ইউনাইটেডের বিপক্ষে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেনি। শেষদিকেই একটা দারুণ সুযোগ অবশ্য এসেছিল, ভোকসের সেই হেড ডেভিড ডি গিয়াকে তেমন একটা ভোগায়নি।
এর আগে বরং দশ জনের দল নিয়েও ইউনাইটেডই খেলা শেষ করে দিতে পারত। লুকাকুই প্রথমার্ধের মতো আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার অবশ্য আরও ভালো অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক আর ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় আর গোল পাওয়া হয়নি তার। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের পর জোড়া গোল করেছেন প্রিমিয়ার লিগে, সেটাকে আর হ্যাটট্রিকেও রুপান্তর করা হয়নি লুকাকুর।
একই সময়ে শুরু হওয়া আরেক খেলায় ৫৩ মিনিটের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গিয়েছিল টটেনহাম। কিন্তু ৬৯ আর ৭৬ মিনিটে আরও দুই গোল দিয়ে ওয়াটফোর্ড হারিয়ে দিয়েছে টটেনহামকে। প্রিমিয়ার লিগে প্রথমবারের মতো টানা চার ম্যাচ জিতে ওয়াটফোর্ড এখন উড়ছে।