ড্র দিয়েই শুরু ইতালির মানচিনি অধ্যায়
ফিওরেন্তিনা, লাৎসিও, ইন্টার মিলান। ইতালির অন্যতম সেরা তিন দলের কোচ ছিলেন তিনি। ‘আজ্জুরি’দের বিশ্বকাপ ভরাডুবির পর রবার্তো মানচিনিকেই কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল দেশটির বোর্ড। ইউয়েফা নেশনস লিগে পোল্যান্ডের বিপক্ষেই জাতীয় দলের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার। পিওতর জিয়েলিন্সকির গোলে এগিয়ে থাকা পোলিশদের বিপক্ষে হার চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছিল ইতালির। তখনই আবারও দেখা মেলে মানচিনির ট্যাকটিক্যাল মাস্টারক্লাসের। আন্দ্রেয়া বেলোত্তি এবং ফেদেরিকো চিয়েসাকে নামিয়ে দেন তিনি। আর দুই বদলির কল্যাণেই পেনাল্টি পায় ইতালি। জর্জিনহোর পেনাল্টিতে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্রতে শুরু হল ইতালির মানচিনির অধ্যায়। রাতের অন্যান্য ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে বেলজিয়াম। আর তুরষ্ককে ২-১ গোলে হারিয়েছে রাশিয়া।
স্তাদিও দেল’আরাতে ম্যাচের শুরু থেকেই ইতালিকে চেপে ধরে পোল্যান্ড। ৪-৩-৩ ফর্মেশনের ইতালির বিপক্ষে মাঝমাঠে কুরজাওয়া-ক্রিচোউইয়াকরা ছিলেন দুর্দান্ত। জর্জিনহো, পেলেগ্রিনিরা পোলিশ প্রেসিংয়ে বল হারিয়েছেন একাধিকবার। এই প্রেসিংয়ের জন্যই ৬ মিনিটে লিড নেওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়ে যায় পোল্যান্ড। রবার্ট লেভান্ডফস্কির চমৎকার থ্রু পাস থেকে জিয়েলিন্সকির শট দুর্দান্ত দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনাররুমা। গিয়ানলুইজি বুফনের উত্তরাধিকার হিসেবে শুরুটা দারুণই ছিল তার। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার পোলিশদের দূরপাল্লার শট বা ডিবক্সে ক্রস- সব ঠেকিয়েছেন অসাধারণ বিচক্ষণতায়। এমনকি একবার ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েলিনিকে কাটিয়েও ডিবক্সে ঢুকে পড়া লেভান্ডফস্কিকে খালি হাতে ফিরিয়েছেন এসি মিলানের গোলরক্ষক। অপর প্রান্তে বালোতেল্লি-ইনসিনিয়েদের দমিয়ে রাখতে তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয়নি পোলিশ রক্ষণভাগকে। একেবারেই নতুনরূপের ইতালিয়ান আক্রমণভাগ গোলের তেমন সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। প্রথমার্ধ জুড়ে ভাল খেলা ইতালিয়ান রক্ষণভাগ অবশ্য ক্লিনশীট রাখতে পারেনি। কারণ ৪০ মিনিটে সেই লেভানডফস্কি-জিয়েলিন্সকি জুটিতেই লিড নেয় পোল্যান্ড। ইতালির নাপোলিতে ক্লাব ফুটবল খেলা জিয়েলিন্সকিই ঘাতক হয়ে আসলেন ইতালির।
গোলের পরই নড়েচড়ে বসেন মানচিনি। পেলেগ্রিনিকে উঠিয়ে বনাভেঞ্চুরাকে নামিয়ে দেন তিনি। ইতালির আক্রমণভাগে ফিরতে থাকে পাসিংয়ের স্বাচ্ছন্দ্য আর বোঝাপড়া। তবে পোলিশ গোলে লুকাস ফ্যাবিয়ানস্কিকে পরীক্ষায় ফেলতে পারছিল না মানচিনির দল। মাঝমাঠেই আটকে যাচ্ছিল ইতালির বোঝাপড়া। আক্রমণে চিরো ইমোবিলের অভাবটা ছিল সুস্পষ্ট। অবস্থা বেগতিক দেখে সমতায় ফেরার আশায় ইনসিনিয়েকে উঠিয়ে তরুণ চিয়েসাকে নামিয়ে দেন মানচিনি। কোচের আস্থার পূর্ণ প্রতিদান দেন এই তরুণ। মিনিট দুয়েক পরই তাকে ফাউল করে ইতালিকে পেনাল্টি উপহার দেন ইয়াকব ব্লাশিকওস্কি। ১২ গজ থেকে ফ্যাবিয়ানস্কিকে অবশেষে পরাস্ত করেন জর্জিনহো। গোলের পর প্রায় মিনিট বাকি থাকলেও জয়ের লক্ষ্যে ছোটার উদ্যোগটা দেখা যায়নি কোনো দলের মধ্যেই। শেষমেশ প্রায় ম্যাড়ম্যাড়ে এক ড্রতেই শেষ হয় দেশের হয়ে মানচিনির প্রথম ম্যাচ।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ পরবর্তী প্রথম ম্যাচে জিততে কোনো সমস্যাই হয়নি বেলজিয়ামের। লুকাকু-চাদলি-হ্যাজার্ডদের সবাই-ই ছিলেন মূল একাদশে। আর তাতেই পুড়েছে স্কটল্যান্ড। ভার্টনহেন-কম্পানিদের বিপক্ষে আক্রমণেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি লি গ্রিফিথস, অ্যান্ডি রবার্টসনরা। ম্যাচের ২৮ মিনিটে হ্যাজার্ডের পাস থেকে গোল করে দলকে লিড এনে দেন রোমেলু লুকাকু। ৪০ মিনিটে কম্পানির হেড ক্রসবারে প্রতিহত না হলে ব্যবধানটা আরও বাড়ত প্রথমার্ধেই। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্রেইগ গর্ডন হ্যাজার্ড-লুকাকুর দুটি প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন অবিশ্বাস্যভাবে। নাহলে প্রথমার্ধেই বড় ব্যবধানের লিড নিত রবার্তো মার্টিনেজের দল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর শেষরক্ষা হয়নি বেলজিয়ামের। ৪৬ মিনিটে বাঁ-পায়ের আগুনে শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হ্যাজার্ড। এর মিনিট সাতেক পর জয় নিশ্চিত করেন মিচি বাতশুয়াই। ৬০ মিনিটে ইয়ুরি তিয়েলেম্যান্সের পাস থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করে স্কটিশ কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন বাতশুয়াই। শেষদিকে অবশ্য কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল স্কটিশরা। কিন্তু থিবো কর্তোয়ার সামনে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে স্কটল্যান্ডকে। আর বিশ্বকাপের পরও নিজেদের ধারাবাহিকতা ধরে রাখল ‘রেড ডেভিল’রা।