• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    স্পার্সকে হারিয়ে লিভারপুলের পাঁচে পাঁচ

    স্পার্সকে হারিয়ে লিভারপুলের পাঁচে পাঁচ    

    প্রিমিয়ার লিগের গত দুই মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা তারা। ওয়েম্বলিতে আজ টটেনহাম হটস্পার্সের বিপক্ষে লিভারপুলের লড়াই ছাপিয়ে পাদপ্রদীপের পুরোটা আলোই ছিল হ্যারি কেইন বনাম মোহাম্মদ সালাহর দ্বৈরথে। তবে ওয়েম্বলিতে আজ দুই দলের মূল দুই কান্ডারির কেউই গোল করতে পারেননি, কেউই ছিলেন না স্বরূপে। কেইনের নিজের ছায়া হয়ে থাকার দিনে স্পার্সের কপাল পুড়লেও সালাহকে ‘বাঁচিয়ে’ দিয়েছেন দুই সতীর্থ জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডাম ও রবার্তো ফিরমিনো। স্পার্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে ২০১৮-১৯ ইপিএল মৌসুমে টানা জয়ের রেকর্ডটা পাঁচ ম্যাচে নিয়ে গেল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। ১৯৯০-৯১ মৌসুমের পর আবারও মৌসুমের প্রথম পাঁচ ম্যাচের প্রতিটিতেই জয়ের দেখা পেল লিভারপুল।

    ওয়েম্বলিতে ম্যাচের শুরু থেকেই স্পার্সকে চেপে ধরেছিল লিভারপুল। হ্যারি উইঙ্কস, এরিক ডায়াররা দাঁড়াতেই পারেননি নবি কেইটা, জেমস মিলনারদের সামনে। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই লিড নিয়েছিল লিভারপুল। রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের ক্রসে পা ছোঁয়ান রবার্তো ফিরমিনো। বল যখন স্পার্স গোলরক্ষক মিচেল ভর্মকে ফাঁকি দিয়ে জালের দিকে এগুচ্ছিল, তখনই বলে পা ছোঁয়ান সাদিও মানে। অফসাইডে ছিলেন সেনেগালের উইঙ্গার। বাতিল হয় গোল, ডাগআউটে দীর্ঘশ্বাস বাড়ে ক্লপের। শুরুতেই ‘অল রেড’দের এমন প্রেসিংয়ে খেই হারিয়ে ফেলে স্পার্স। সচরাচর ‘থ্রি মেন ডিফেন্স’ নিয়ে খেলা স্পার্স আজ ডিফেন্ডার নামিয়েছিল চারজন। মরিসিও পচেত্তিনোর এই ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তন ঠিক মানিয়ে নিতে পারেনি স্পার্স। রক্ষণের সাথে মিডফিল্ডারদের বোঝাপড়ার অভাবটা ছিল সুস্পষ্ট।

    মাঝমাঠের একাধিক ভুল পাসে লিভারপুলকে আরও জেঁকে বসার সুযোগ করে দিচ্ছিল স্পার্স। ২২ মিনিটে ডায়ারের এমনই এক ভুল পাস থেকে বল পেয়ে যান মোহাম্মদ সালাহ। তবে ডিবক্সের সামান্য বাইরে থেকে তার বাঁকানো শট দক্ষহাতে ফিরিয়ে দেন ভর্ম। হুগো লরিসের ইনজুরিতে মূল একাদশে সুযোগ পেয়েই নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন ডাচ গোলরক্ষক। ভর্মের কারণেই প্রথমার্ধে বেশ কয়েকবার খালি হাতে ফিরেছে লিভারপুলের দুর্ধর্ষ আক্রমণত্রয়ী। ৩২ এবং ৩৪ মিনিটে ফিরমিনোর দুটি প্রচেষ্টা দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ৩৯ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি স্পার্স এবং ভর্মের। বাঁ-প্রান্ত থেকে মিলনারের কর্ণারে হেড করে পাস বাড়ান ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা পরও ভাসমান বলে জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডামের হেড ফেরাতে পারেননি ভর্ম।

     

     

    প্রথমার্ধে রক্ষণে চারজন খেলানোর ‘জুয়া’টা কাজে না দেওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তিনজনের রক্ষণে দলকে খেলানো শুরু করেন পচেত্তিনো। কিন্তু এরপরও লিভারপুলের কাছে পাত্তাই পাচ্ছিল না স্পার্স। পজেশন বেশি থাকলেও ভ্যান ডাইকদের বিপক্ষে একেবারেই পেরে উঠছিলেন না কেইন-এরিকসেনরা। দ্বিতীয়ার্ধের ৪৯ মিনিটেই লিডটা দ্বিগুণ করতে পারত লিভারপুল। বাঁ-প্রান্ত থেকে অ্যান্ডি রবার্টসনের ক্রস প্রতিহত হয় স্পার্সের ক্রসবারে। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও মাঝমাঠের ভুল পাসে চাপে পড়তে হচ্ছিল স্পার্সকে। ৫০ মিনিটে মুসা ডেম্বেলের ভুল পাসে ডিবক্সের বাইরে বল পেয়ে যান সালাহ। ডিবক্সে ঢুকেই পাস বাড়ান মানেকে। কিন্তু সেনেগালের ফরোয়ার্ডের জোরাল শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন ভর্ম। প্রায় একপেশে ম্যাচের ৫১ মিনিটে স্পার্সকে আরেকটু হলেই ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন লুকাস মউরা। কিন্তু বাঁ-প্রান্ত থেকে জো গোমেজকে কাটিয়ে ডিবক্সে ঢুকে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের শট ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে। পুরো ম্যাচে একাধিকবার লিভারপুলকে খালি হাতে ফিরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ৫৪ মিনিটে ভর্মের ভুলেই লিভারপুলের দ্বিতীয় গোল করেন ফিরমিনো। মানের ক্রসে টবি অল্ডারওয়েরেল্ডের ক্লিয়ারেন্স ফিরে আসে স্পার্স গোলের বারপোস্টে লেগে। গোলের সামনে থেকে বল দখলে আনতে ব্যর্থ হন ভর্ম। তার ভুলে গোলের সামনে থেকে আলতো টোকায় বল জালে পাঠান ফিরমিনো।


    এই গোলের পরই মূলত ম্যাচ থেকে একেবারেই ছিটকে পড়ে স্পার্স। বাকিটা সময় শত চেষ্টায়ও ক্লপের রক্ষণভাগকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি পচেত্তিনোর আক্রমণভাগ। ৮৮ মিনিটে এরিক লামেলার বাঁকানো শট লিভারপুল গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর তেমন কিছুই করতে পারেনি স্পার্স। উলটো প্রতি-আক্রমণে সালাহ, মানেরা ভাল ফিনিশিং করতে পারলেন আরও বড় ব্যবধানের জয় নিয়েই ওয়েম্বলি ছাড়ত লিভারপুল। লিভারপুল ফরোয়ার্ডদের বাজে ফিনিশিংয়ে আরেকটু হলেই পয়েন্ট ছিনিয়ে আনত স্পার্স। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে লামেলার গোলে ব্যবধান কমায় স্পার্স। কিন্তু শেষ হাসিটা হেসেছে লিভারপুলই। রেফারির শেষ বাঁশিতে জয়ের সাথে অক্ষুণ্ণ ফিরমিনো গোল করেছেন এমন ম্যাচে লিভারপুলের জয়ের রেকর্ড। ৫ ম্যাচে পূর্ণ ১৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষস্থানটা আরও সুসংহত করল ক্লপের দল।