কোচ বললেন, অস্ট্রেলিয়াকে ছেড়ে কথা বলবে না বাংলাদেশ
ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলাটা এখনও বাংলাদেশের জন্য আনুষ্ঠানিকতারই নামান্তর। শক্তির পার্থক্য কম এমন দলগুলোর বিপক্ষে খেলায় কিঞ্চিৎ প্রত্যাশা থাকলেও বড় দলগুলোর সাথে বেঙ্গল টাইগারদের মনোযোগটা মূলত গোল যতটা সম্ভব কম হজম করার দিকেই থাকে। প্রতিপক্ষ যখন এশিয়ার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও গত বিশ্বকাপ খেলুড়ে দল অস্ট্রেলিয়া তখন প্রত্যাশার পারদ সামান্য চড়ানোর আগেও ভাবতে হয়। তবে ভাবনায় যাই থাকুক, ডাচ বংশোদ্ভূত বাংলাদেশ বস লুডভিক ডি ক্রুইফ অস্ট্রেলিয়া ফুটবল দলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন যে তাঁর ছেলেরা অস্ট্রেলিয়ায় ঘুরতে যাচ্ছে না!
ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে কিরগিজস্তানের কাছে ১-৩ ব্যবধানের হারের ধকল সামলে তাজিকিস্তানের সাথে ১-১ ড্র। বাছাইপর্বে নিজেদের তৃতীয় ও প্রথম ‘অ্যাওয়ে’ ম্যাচে ৩ সেপ্টেম্বর মামুনুলদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। সকারুদের প্রতি পূর্ণ সমীহই রাখছেন ডি ক্রুইফ, “এশিয়ার এক নম্বর দলকে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথেই মোকাবেলা করবো। তাঁদের খেলোয়াড়েরা বড় বড় লিগ খেলে অনেক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তাঁদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা ছেড়ে কথা বলব না। ছেলেরা সেখানে ঘুরতে যাচ্ছে না।”
এরপর মামুনুলদের স্তুতি গাইতেও কম যান নি ডাচ কোচ, “আমার সব ছেলেরাই পেশাদার। তাঁদের বেশীরভাগই তারকা হয়ে উঠেছে গত তিন বছরে। আমাদের ভালো মানের খেলোয়াড় আছে। এদের গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট সময়, উপযোগী পরিবেশ আর প্রচুর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।”
ডি ক্রুইফ মানছেন যে গ্রুপের শীর্ষ দু’ দলের একটি হয়ে পরের পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ার স্বপ্নটা বাড়াবাড়িই হয়ে যায়। তবে কোচ চাইছেন গ্রুপে যতোটা সম্ভব উপরের দিকে থেকে শেষ করতে। তাতে ২০১৯ সালের এশিয়ান কাপে খেলার একটা সম্ভাবনা থাকবে। “বাছাইপর্ব শুরুর আগে আমার লক্ষ্য ছিল গ্রুপে তৃতীয় স্থান। জানি এটা বেশ কঠিনই। কিন্তু আপনার যদি কোন লক্ষ্যই না থাকে তাহলে পেশাদার ফুটবল খেলার কোন অর্থ হয় না।”
বাংলাদেশ দলের একটা বড় সমস্যা খেলার শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে বসা। ঘরের মাঠের বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের ফাইনালে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথমার্ধে ২ গোলে পিছিয়ে গিয়েও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে উপর্যুপরি শোধ দিয়ে দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে টাইগাররা। কিন্তু ইনজুরি টাইমের গোলে ম্যাচটা শেষপর্যন্ত আক্ষেপই থেকে যায় মামুনুলদের জন্য। গত জুনে তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও শেষ মুহূর্তের গোলে পয়েন্ট হারায় বাংলাদেশ। ডি ক্রুইফ মনে করেন সমস্যাটা মনোযোগের অভাব, “আপনি যখন আন্তর্জাতিক স্তরের ফুটবল খেলবেন তখন আপনাকে পুরো নব্বই মিনিট সজাগ থেকে পূর্ণ মনোযোগের সাথে খেলতে হবে।”
বাংলাদেশে এসেছেন তিন বছরও হয় নি। এ সময়ের কাজে কতোটা সন্তুষ্ট তিনি? ডি ক্রুইফ জবাবটা ইতিবাচকই দিলেন, “প্রথম যখন এখানে আসি তখন ছেলেরা লম্বা পাসে পুরনো ধাঁচের ইংলিশ ফুটবল খেলত। আমি কিছুটা ডাচ কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করলাম। আমি যেভাবে শিখে বড় হয়েছি সেটাই তো শেখাবো। আমার ছেলেরা এর সাথে বেশ ভালোই মানিয়ে নিয়েছে। আসলে শেখার তো কোন শেষ নেই। তারপরও এ পর্যন্ত যা হয়েছে তাতে আমি সন্তুষ্ট।”
বাংলাদেশ ফুটবলের উন্নতির পথে অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে খেলাটা অনেক বড় উপলক্ষ মেনে ডাচ কোচ এ দেশের ফুটবল ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদই ব্যক্ত করলেন, “বাংলাদেশে খেলাটা অনেক বেশী জীবন্ত। ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রতিভার তো অভাব নেই। আমাদের দায়িত্ব কেবল তাঁদের খুজে বের করে যোগ্য প্রশিক্ষকের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া।”
বাংলাদেশ নিয়ে ব্যক্তিগত প্রত্যাশার কথাও জানালেন ডাচম্যান, “আমরা ধাপে ধাপে উন্নতি করছি। বাংলাদেশকে আমি একটা শক্তিশালী জাতীয় দলে পরিণত করতে চাই, সব স্তরের ফুটবলে পেশাদারিত্ব এনে দিতে চাই।”
সুযোগ পেলে অস্ট্রেলিয়ায় কাজ করার আগ্রহের কথাও জানাতে ভোলেন নি ক্রুইফ, “বাংলাদেশে টিকে থাকাটা একটা কঠিন যুদ্ধই। তবে আমি এটা উপভোগ করি। অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করতেও আগ্রহী। আমার শিক্ষা, অভিজ্ঞতা আর অতীত দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কাঠামোয় সহজেই মানিয়ে যাবো বলে আশা রাখি।”