বাংলাদেশী ভক্তের বাসায় খেলেন, ফিফা খেললেন, খেলা দেখলেন কান্তে!
বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। স্থানীয় মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়তে গিয়ে দেখলেন পাশের লোকটা চেনা চেনা লাগছে। আরে , এ তো এনগোলো কান্তে! বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ জহুরুলের এই অভিজ্ঞতাই হলো শনিবার রাতে। রূপকথার গল্প এটুকুই হয়ে যেতে পারত। এরপর যা হলো, এরপর জহুরুলের সৌভাগ্যকে ঈর্ষা করবেন যেকোনো ফুটবল ভক্ত। কান্তে তার বাসায় গেছেন, রাতের ডিনার সেরেছেন, একসঙ্গে বসে ফিফা খেলেছেন, বিবিসির ম্যাচ অব দ্য ডেও দেখেছেন একই সঙ্গে। এমনিতে বিনয়ী হিসেবে সবাই জানে কান্তেকে, তবে আসলেই কতটা মাটির মানুষ সেটা চেনালেন নতুন করে।
কার্ডিফের সঙ্গে সেদিন ম্যাচটা শেষ হয়েছে আগেভাগে। পরের দিন ছুটি, লন্ডন থেকে ট্রেন ধরে প্যারিস ছাড়ার কথা ছিল কান্তের। ভেবেছিলেন, ছুটির দিনটা পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে পরের দিন আবার ফিরে আসবেন লন্ডনে। কিন্তু ট্রেন ধরতে দেরি করে ফেললেন। এদিকে হয়ে গেছে মাগরিবের ওয়াক্তও। কান্তে গুগল করলেন, স্টেশনের আশেপাশে কোনো মসজিদ আছে কি না। সেখানে নামাজ পড়তে গিয়ে তাঁকে চিনে ফেললেন জহুরুলরা। আমন্ত্রণ জানালেন, তাঁদের বাসায় আতিথ্য নেওয়ার। এদিকে কান্তে দেখলেন ট্রেন আর আজ নেই। অন্য কোনো খেলোয়াড় হলে শনিবারের রাতটা হয়তো অন্যভাবেই কাটাতেন। ঠিক করলেন, তাদের দাওয়াত কবুল করবেন।
জহুরুলদের বাসায় গিয়ে কান্তে ফিফা খেললেন, গল্প করলেন তাদের সঙ্গে। ঝাল মুরগি দিয়ে রাতের খাবার খেলেন, ফিফা খেললেন। আবার চেলসি-কার্ডিফের হাইলাইটসটাও দেখলেন বিবিসির ম্যাচ অব দ্য ডেতে। জহুরুল পরে টুইট করেছেন, কান্তে বলেছেন তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলা সেরা খেলোয়াড় মেসি। আর তাঁর দেখা সেরা খেলোয়াড় জিনেদিন জিদান। জহুরুল আবার লিভারপুল ভক্ত, কান্তেকে প্রস্তাব দিয়েছেন এনফিল্ডে চলে আসার জন্য। কান্তে তঁর স্বভাবসুলভ অমায়িক হাসি হেসে বলেছেন, ‘ভেবে দেখবেন’।
কান্তের বিনয়ের আরেকটি দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত দেখা গেছে কদিন আগে। আর্সেনালের সঙ্গে চেলসির ম্যাচের পর কান্তের সঙ্গে দেখা এক গানারের। আর্সেনালের ভক্ত জানার পর কান্তের প্রথম কথা, ‘তোমাদের হারানোর জন্য দুঃখিত’। আর এতোটাই লাজুক কান্তে, বিশ্বকাপ জেতার পর ট্রফিটা নিয়ে উল্লাস করার জন্যও সতীর্থদের বলতে পারছিলেন না। কেউ একজন ট্রফিটা কান্তের দিকে এগিয়ে না দিলে তাঁর সেটাতে চুমুই খাওয়া হয়তো হতো না!