• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    নাটকীয় ফেরায় সান সিরোতে ইন্টারের উৎসব

    নাটকীয় ফেরায় সান সিরোতে ইন্টারের উৎসব    

    সাত বছর এমন একটা রাতের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ইন্টার মিলান সমর্থকদের। ইউরোপে তো বটেই, ইতালিতেও খেই হারিয়েছে ইন্টার। চ্যাম্পিয়নস লিগে বাছাই করতে না পারার হতাশাটা জেঁকে বসেছিল, অনেকে হয়ত ভুলতেও বসেছিলেন সেই স্বাদ। টটেনহাম হটস্পারের বিপক্ষে সাত মৌসুম পর চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচটা খেলতে নামার আগে থেকেই তাই মিলানে ছিল উৎসব। সেই উৎসবের প্রতিফলন মাঠের খেলায় ছিল অল্পই। টটেনহামের ছায়া থেকেই বেশিরভাগ সময় কাটছিল ইন্টারের। কিন্তু ঘরের সমর্থকদের শেষ পর্যন্ত আর হতাশ হতে হয়নি। শেষ ৫ মিনিটের দুর্দান্ত এক ফেরায় টটেনহামকে ২-১ গোলে হারিয়ে দীর্ঘ বিরতির পর চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরাটা স্মরণীয় করে রেখেছে ইন্টার। 

    ইন্টারের ফিরে আসায় বড় ভূমিকা অধিনায়ক মাউরো ইকার্দির। চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবেন, সেই স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন বহুবার। এই ম্যাচের আগে তার ফিটনেস নিয়ে ছিল সন্দেহ, কিন্তু কোচ লুসিয়ানো স্পেলেত্তি কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই খেলিয়েছিলেন তাকে। আর ইকার্দি অনুপ্রাণিত করেছেন পুরো দলকে, আসলে মিলানের পুরো নীল অংশটাই উৎসবের রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে তার একটা মুহুর্তই। পিছিয়ে থাকা ম্যাচে খালি হাতে ফেরার প্রস্তুতিই নিচ্ছিল ইন্টার। ৮৫ মিনিট পর্যন্তও টটেনহামের রক্ষণকে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো আক্রমণ সাজানো হয়নি তাদের। পরের মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে ইকার্দির ভলি। বাঁ দিক থেকে আসামোয়ার ক্রসে ইকার্দির সেই ভলিই আগুনের গোলার মতো ঢুকে গেল জালে। হুগো লরিসের অনুপস্থিতিতে স্পার্সের গোলবারের নিচে থাকা মাইকেল ভর্মকে এর আগে তেমন পরীক্ষাই দিতে হয়নি, যখন দিতে হল তখন আর কিছুই করার ছিল না তার। ইকার্দির ওই গোলেই ভোজাবাজির মতো পালটে গেল ম্যাচের ভাগ্য। টটেনহাম পড়ে গেল চাপে। নিজেদের অর্ধ থেকে বল ক্লিয়ার করতেই হিমশম খাচ্ছিল তারা। পুরো ম্যাচে নিজেদের গুটিয়ে রাখা ইন্টার মরণ কামড়টা মারল আরও দেরিতে। ৯৩ মিনিটে কর্নার, বদলি আন্তোনিও কান্দ্রেভার বল ফেলেছিলেন বাইরের দিকেই। স্টেফান ডে ভ্রাই হেড করে সেটা পাঠালেন আরও ভেতরের দিকে, মাতিয়াস ভেসিনো ছিলেন ফাঁকায়, তার হেডেই গোল, আর তাতেই জয় নিশ্চিত ইন্টারের।  আর তীরে এসে তরী ডুবিয়ে আরও হতাশ মারুসিও পচেত্তিনোর দল।



    অথচ ম্যাচের বেশিরভাগ সময় পচেত্তিনোই স্পেলেত্তিকে ভুল প্রমাণ করে যাচ্ছিলেন। তিন জনের ডিফেন্স নিয়ে ভালোভাবেই খেলছিল টটেনহাম। আক্রমণেও তারাই সপ্রতিভ। কিন্তু আবারও নিষ্প্রভ হ্যারি কেইন, নইলে প্রথমার্ধেই এগিয়ে যাওয়া হয় স্পার্সের। ৩৭ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের থ্রু পাস খুঁজে পেয়েছিল কেইনকে, এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে কাটিয়ে চলেও গিয়েছিলেন কেইন। কিন্তু ফিনিশটা আর করতে পারেননি, নিজের কাজ নিজেই কঠিন বানিয়ে দিয়েছিলেন, তাই শটও করা হয়নি তার। টটেনহামের জন্য কাজটা কঠিন বানিয়ে রেখেছিলেন সামির হান্দানোভিচ। স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষকের বেশ কয়েকটি দারুণ সেভ শেষ পর্যন্ত ইন্টারকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিল। প্রথমার্ধেই সার্জ অরিয়েরের ক্রস ঠেকিয়ে দিয়ে শুরুটা করেছিলেন, নইলে ফাঁকায় থাকা কেইন সে দফায় হয়ত সদয় হতেন না স্পার্সের ওপর!

    হান্দানোভিচ ৫৩ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের নেওয়া প্রথম শটটাও ভালোভাবেই ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরতি বলটা আবারও এরিকসেনের কাছে গেলে সেই দফায় পরাজিত হন হান্দানোভিচ। এরিকসেন পেয়েছেন ভাগ্যের ছোঁয়াও, বলটাই তার পাওয়ার কথা ছিল না। দ্বিতীয় দফায় পেলেন তাও, ডিবক্সের ভেতর থেকে শট করলেন, মিরান্ডার গায়ে লেগে সেটাই হয়ে গেল গোল। টটেনহামের এগিয়ে যাওয়াটা প্রাপ্যই ছিল। দিনশেষে হেরে যাওয়ায় অবশ্য নিজেদেরই কেবল দুষতে পারে তারা। এগিয়ে থাকা অবস্থায়ই ম্যাচটা নিজেদের দিকে পুরোপুরি টেনে নেওয়ার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছে তারা। দুইবার এরিক লামেলা ভালো সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি, হান্দানোভিচে আটকে গেছেন। লামেলা নিজেও নিখুঁত হতে পারেননি। তার আগে ৫৬ মিনিটে তার শটও একবার ইন্টার ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে অল্পের জন্য গোলে পরিণত হয়নি। এই সময়ের মধ্যে ইন্টার কেবল একবারই কিছুটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল, বাঁ দিক থেকে পলিটানোর ক্রস থেকে। কিন্তু ইভান পেরিসিচের হেডে জোর ছিল না মোটেই।

    ম্যাচের ভাগ্য গড়েছে তাই শেষের ওই কয়েক মিনিটই। প্রথমে পিছিয়ে পড়েও ইন্টারের চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যাচ জয়ের শেষ রেকর্ডটা ২০১০ সালে। বার্সেলোনার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ৩-১ গোলে জিতেছিল তারা। পরে চ্যাম্পিয়নস লিগই জিতেছিল ইন্টার। সেই স্বর্নালী দিনের সঙ্গে এখন তফাৎ অনেক, কিন্তু অনুপ্রেরণা খুঁজতে হলে তো ওই মৌসুমটাই ইন্টারের বড় পুঁজি। আর টটেনহামের জন্য নতুন মৌসুমটা কঠিন হয়ে গেল এখন থেকেই। পচেত্তিনোর অধীনে এর আগে টানা ৩ ম্যাচ হারেনি স্পার্স।