পাঁচ গোলের থ্রিলারে পিএসজিকে হারাল লিভারপুল
আজকের ম্যাচে খেলারই কথা ছিল না তার। টটেনহামের বিপক্ষে চোখের গুরুতর ইনজুরিতে পড়ার পরও তাকে স্কোয়াডে রেখেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। লিভারপুল লিড নিলেও তখন সমতায় পিএসজি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে পিএসজি ডিবক্সে বল পেলেন। মার্কিনহোসকে কাটিয়ে ক্রসের বদলে নিলেন মাটি কামড়ানো জোরালো শট। প্রাণপণ চেষ্টায়ও বল নাগাল পেলেন না পিএসজি গোলরক্ষক আলফোন্স আরিওলা। বল জড়াল জালে। অ্যানফিল্ড মাতল বুনো উল্লাসে। গোলের পরই এক চোখ ঢেকে করা সেই উদযাপনে যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন তার ইনজুরির কথা। যে ম্যাচে তার খেলারই কথা ছিল না, সে ম্যাচেই লিভারপুলকে জিতিয়ে ফিরলেন রবার্তো ফিরমিনো। অ্যানফিল্ডে পিএসজিকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে ক্লপের দল।
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপপর্বের ড্রয়ের পর থেকেই মূল আকর্ষণটা ছিল দু'দলের আক্রমণত্রয়ীর লড়াইয়ে। এক পাশে সালাহ-ফিরমিনো-মানে, অন্যপাশে এম্বাপ্পে-কাভানি-নেইমার। গত মৌসুমে ইউরোপের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুই 'ত্রিশূল'। 'স্টারডম'-এর বিচারে নেইমাররা এগিয়ে থাকলেও আজ শেষ হাসি হেসেছেন ফিরমিনোরা। অ্যানফিল্ডে পিএসজির বিপক্ষে মূল একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। ইনজুরির কারণে ছিলেন না রবার্তো ফিরমিনো। তার জায়গায় এসেছিলেন ড্যানিয়েল স্টারিজ। মাঝমাঠে নবী কেইটা আর রক্ষণে দেয়ান লভ্রেনের জায়গায় এসেছিলেন জর্ডান হেন্ডারসন এবং জো গোমেজ। ম্যাচের শুরু থেকেই পিএসজিকে চেপে ধরেছিলেন হেন্ডারসন-মিলনাররা। থমাস তুকেলের ৩-৪-৩ ফর্মেশনে মাঝমাঠে একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি আনহেল ডি মারিয়া, আদ্রিয়ান রাবিওতরা। দুই উইংয়ে সাদিও মানে, মোহাম্মদ সালাহকে আটকাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছিলেন হুয়ান বার্নাত এবং থমাস মুনিয়ের। ম্যাচের প্রথম দশ মিনিটেই পিএসজি গোলরক্ষক আলফোন্স আরিওলাকে পরীক্ষায় ফেলেছিল ক্লপের দল। কিন্তু ফ্রেঞ্চ গোলরক্ষকের দক্ষতায় গোলটাই আর পাওয়া হয়নি লিভারপুলের।
পিএসজিকে চেপে ধরলেও প্রতি-আক্রমণে নেইমার, এম্বাপ্পেদের রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন ভ্যান ডাইক-গোমেজরা। নেইমার যাও এক আধটু ঝলক দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এম্বাপ্পে, কাভানিকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি প্রথমার্ধে। কৃতিত্বটা এক্ষেত্রে অবশ্যই লিভারপুল রক্ষণভাগের। পিএসজির নিষ্প্রাণ আক্রমণভাগের সুবাদে ৩০ মিনিটে লিড নেয় লিভারপুল। বাঁ-প্রান্ত থেকে অ্যান্ডি রবার্টসনের মাপা ক্রসে হেড করে দলকে লিড এনে দেন ড্যানিয়েল স্টারিজ। তার ইনজুরির কারণেই দলে সুযোগ পেয়েছিলেন স্টারিজ। গোলের পর ডাগআউটে ফিরমিনোর দিকে দু'হাত জোড়ে কৃতজ্ঞতার ইশারা করেন স্টারিজ। দিগন্ত বিস্তৃত হাসি হেসে হাত নেড়ে জবাব দেন ফিরমিনো। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা লিভারপুল ব্যবধান দ্বিগুণ করে এর মিনিট ছয়েক পর। ৩৬ মিনিটে জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডামকে ডিবক্সে ফেলে দেন বার্নাত। ১২ গজ থেকে আরিওলাকে পরাস্ত করেন জেমস মিলনার। লিভারপুলময় এক প্রথমার্ধের শেষটায় এসে অবশ্য জেগে উঠে পিএসজি। নেইমার, এম্বাপ্পেদের সাথে বোঝাপড়া গড়ে উঠে ডি মারিয়াদের। প্রথমার্ধের মিনিট পাঁচেক বাকি থাকতে ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় পিএসজি। বার্নাতের ক্রসে বাইসাইকেল কিক মিস করেন স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানি। 'এল ম্যাটাডর' মিস করলেও বাঁ-পায়ের হাফভলিতে ঠিকই গোল করেন মুনিয়ের।
প্রথমার্ধের শেষদিকের সেই গোলেই আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় পিএসজি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই দেখা মেলে তুকেলের স্বভাবসুলভ প্রেসিং ফুটবলের। কিন্তু মিলনার-হেন্ডারসনদের অভিজ্ঞতার কাছে পেরে উঠেনি অনভিজ্ঞ পিএসজি। উল্টো ৫৮ মিনিটে সালাহর গোল বিতর্কিতভাবে বাতিল না হলে হয়ত তখনই নিশ্চিত হয়ে যেত ফলাফল। গোলের আগে আরিওলাকে ফাউল করে বসেন স্টারিজ। বাড়ে ক্লপের দীর্ঘশ্বাস। আক্রমণের ধার বাড়তে থাকে পিএসজির। কিন্তু অ্যালিসনের সামনে বারবার খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছিল নেইমারদের। কাভানি, নেইমারের দুটি দারুণ প্রচেষ্টা অসামান্য দক্ষতায় ফিরিয়েছেন ব্রাজিলের 'নাম্বার ওয়ান'। এই সময়টায় প্রতি-আক্রমণে খেলা লিভারপুল ছিল নিজেদের প্রথমার্ধের ছায়া হয়ে। লিভারপুলের আক্রমণ এতটাই নিষ্প্রাণ ছিল যে কিন্তু ৮৩ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি লিভারপুলের। দুর্ধর্ষ সেই আক্রমণত্রয়ীর দুজনের বোঝাপড়ায় সমতায় ফেরে পিএসজি। নেইমারের পাস থেকে গোল করেন এম্বাপ্পে। শেষদিকে সমতায় ফেরার আনন্দটা অবশ্য ফিরমিনোর গোলে মাটিই হয়ে গেছে পিএসজির।