বিলবাওয়ের সাথেও পয়েন্ট হারাল বার্সা
টানা খেলে যাওয়ার পর আজ অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে তাকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন বার্সেলোনা কোচ এর্নেস্তো ভালভার্দে। যতই লুইস সুয়ারেজ, ফিলিপ কুতিনিয়োরা থাকুক না কেন; লিওনেল মেসির ওপর বার্সা যে ঠিক কতটা নির্ভরশীল- তা বোঝা গেল আজ। প্রথমার্ধে লিড নেওয়া বিলবাও যখন ঐতিহাসিক এক জয়ের দিকে এগুচ্ছে, তখনই তাকে নামিয়ে দিলেন ভালভার্দে। মেসি সময়ে নিলেন মিনিট ত্রিশেক। ৮৪ মিনিটে তার ক্রস থেকেই দলকে সমতায় ফেরালেন মুনির এল হাদ্দাদি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর জয় ছিনিয়ে আনা হয়নি বার্সার। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ১-১ গোলের ড্রয়ে ২০১৮-১৯ লা লিগা মৌসুমে টানা তিন ম্যাচে পয়েন্ট হারাল বার্সা। ৭ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত টেবিলের শীর্ষেই থাকল বার্সা।
মেসিকে না নামালেও আজ নিজের সেই চিরাচরিত ৪-৩-৩ ফর্মেশনেই দল সাজিয়েছিলেন ভালভার্দে। সুয়ারেজ-ডেম্বেলের সাথে কুতিনিয়োকে নামিয়েছিলেন বাঁ-প্রান্তে। মাঝমাঠে তার জায়গায় নেমেছিলেন সার্জি রবার্তো। আর সার্জিও বুস্কেটসের জায়গায় নামিয়েছিলেন চিলিয়ান আর্তুরো ভিদালকে। কিন্তু মাঝমাঠে বুস্কেটসের অভাবটা বার্সাকে ভুগিয়েছে বেশ। রাউল গার্সিয়া, বেনিয়াতদের বিপক্ষে মাঝমাঠে একেবারেই পেরে উঠছিলেন না রাকিটিচরা। ম্যাচের ১৩ মিনিটে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল ‘বাস্ক’ অঞ্চলের দলটিই। তবে গার্সিয়ার দূরপাল্লার শট ফিরিয়ে দিতে তেমন সমস্যা হয়নি বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্রে টার স্টেগেনের। এর মিনিট দুয়েক পর প্রথমার্ধের সবচেয়ে দারুণ সু্যোগটা পেয়েছিলেন ইনাকি উইলিয়ামস। গার্সিয়ার পাস থেকে টার স্টেগেনকে একা পেয়েও শট নিতে দেরি করে ফেলেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। পেছন থেকে দুর্দান্ত এক ট্যাকেলে বল কেড়ে নেন ভিদাল। শুরুতেই মেসিহীন বার্সার বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্সে জেগে উঠে বিলবাও। মাঝমাঠেড় গোছানো পাসিংয়ে বার্সাকে একেবারেই পাত্তা দেয়নি বিলবাও। ৪১ মিনিটে ক্যাম্প ন্যুকে চমকে দিয়ে লিডটাও নিয়ে নেয় তারা। মার্কো সুসায়েতার নিখুঁত ক্রসে বাঁ-পায়ের জোরাল ভলিতে দলকে এগিয়ে নেন অস্কার ডি মার্কোস। টানা তিন ম্যাচে এমন গড়পড়তা পারফরম্যান্সের কারণে প্রথমার্ধ শেষে নিজ সমর্থকদের জোর দুয়োর মাঝেই মাঠ ছাড়তে হয় বার্সাকে।
অবস্থা বেগতিক দেখে দ্বিতীয়ার্ধের দশ মিনিট যেতেই মেসিকে নামিয়ে দেন ভালভার্দে। মেসিকে দলে পেয়েই যেন পুরনো উদ্যম ফিরে পায় বার্সা। মেসি নামার মাত্র মিনিট সাতেক পরই সমতায় ফিরতে পারত বার্সা। কিন্তু ভাগ্যদেবী যেন মুখ তুলে তাকাবেনই না কাতালানদের দিকে। ৬২ মিনিটে কুতিনিয়োর ভলি থেকে সুয়ারেজের শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। সতীর্থদের গোল করার ব্যর্থতা দেখে যেন দলকে সমতায় ফেরার দায়িত্বটা যেন নিজ কাঁধেই তুলে নেন মেসি। ৭১ মিনিটে আরেকটু হলেই সফলও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের দুর্দান্ত ফ্রিকিক লাইন থেকে ক্লিয়ার করেন গোলদাতা ডি মার্কোস। বার্সার আক্রমণের জোয়ারে প্রতি-আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে থাকে এডুয়ার্ডো বেরিতজোর দল। ৭৪ মিনিটে আরেকটু হলেই ব্যবধান দ্বিগুণ করত বিলবাও। কিন্তু টার স্টেগেনকে একা পেয়ে আবারও শট নিতে দেরি করে ফেলেন উইলিয়ামস। রাইটব্যাক নেলসন সেমেদোর দুর্দান্ত ট্যাকেলে আবারও খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে।
ভাগ্য যে বার্সার সাথে নেই, তার প্রমাণ আবারও পাওয়া যায় ৭৭ মিনিটে। জর্দি আলবার সাথে ‘ওয়ান-টু’ করে মেসির জোরালো শট ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে। বারবার গোলের দ্বারপ্রান্ত থেকে খালি হাতে ফেরা মেসি হাল ছাড়েননি তারপরও। ৮৪ মিনিটে মেসির এই লেগে থাকা থেকেই সমতায় ফেরে বার্সা। ডানপ্রান্ত থেকে ডিবক্সে ঢুকেই জোরাল শট নেন মেসি। বিলবাও গোলরক্ষক উনাই সিমন ফিরিয়ে দিলেও বল ফিরে আসে মেসির পায়ে। এবার মেসির ক্রস থেকে দলকে সমতায় ফেরান মুনির। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে সমতায় ফিরে জয়সূচক গোলের আশায় হন্যে হয়ে ছুটতে থাকে বার্সা। কিন্তু কাজের কাজটা আর হয়নি শেষ পর্যন্ত। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে রাকিটিচের শট বারের উপর দিয়ে চলে গেলে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বার্সাকে।