রোনালদোর অ্যাসিস্টের হ্যাটট্রিকে দিশেহারা নাপোলি
গোল করাটাকে রীতিমত এক শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন ক্যারিয়ারজুড়ে। ইউরোপের যেখানেই গেছেন, গোল করেছেন মুড়ি-মুড়কির মত। গোলের অতিমানবীয় পরিসংখ্যানের কারণেই ক্যারিয়ারে কখনোই গোল করানো নিয়ে তেমন প্রশংসিত ছিলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বয়সটা ত্রিশের কোঠায় পৌঁছালেও নাপোলির মত দলগুলোর বিপক্ষে বড় ম্যাচে গোল করার জন্যই তাকে দলে ভিড়িয়েছিল জুভেন্টাস। আজ গোল করতে পারেননি রোনালদো। কিন্তু ‘তুরিনের বুড়ি’দের তিনটি গোলই এসেছে তার পাস থেকেই। রোনালদোর ‘পার্শ্ব অভিনেতা’ হয়ে উঠার দিনে নাপোলির বিপক্ষে জুভেন্টাসের নায়ক মারিও মানজুকিচ। ক্রোয়েশিয়ান স্ট্রাইকারের জোড়া গোলে পিছিয়ে পড়েও নাপোলিকে ৩-১ গোল হারিয়ে ৬ পয়েন্টের লিড নিয়ে ২০১৮-১৯ সিরি আ টেবিলের শীর্ষস্থানটা আরও সুসংহত করলেন রোনালদোরা। সাবেক দলের বিপক্ষে ফেরাটা সুখকর হল না কার্লো আঞ্চেলত্তির।
জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে আজ ৪-৩-৩ এর বদলে ৪-৩-১-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন কোচ ম্যাক্সিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি। ডগলাস কস্তার বহিষ্কারদেশের কারণে মূল একাদশে ফিরেছিলেন পাওলো দিবালা। উইং নির্ভর খেলার চেয়ে মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ গড়তেই দিবালাকে ‘ফ্রি রোল’-এ খেলিয়েছেন অ্যালেগ্রি। আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো খেলেছেন কিছুটা ‘সেকেন্ড স্ট্রাইকার’ হিসেবে। উইং দিয়ে জুভেন্টাসের সব আক্রমণের মূলে ছিলেন তিনিই। ম্যাচে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন রোনালদোই। ৮ মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ‘সিআর৭’-এর শট ফিরিয়ে দেন নাপোলি গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনা। তবে এর মিনিট দুয়েক পর লিডটা নেয় নাপোলিই। অ্যালানের লম্বা পাস প্রথম টাচেই ক্রস করেন হোসে মারিয়া কায়েহন। গোলের মাত্র গজ দুয়েক থেকে শেজনিকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি দ্রিস মার্টেন্স। শুরুতেই গোল হজম করা জুভেন্টাস আক্রমণে ছিল একেবারেই সাধারণ গোছের।
নাপোলিও থেমে থাকেনি। একের পর এক আক্রমণে কিয়েলিনিদের রীতিমত নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছিলেন মার্টেন্সরা। ১৭ মিনিটে আরেকটু হলেই লিডটা দ্বিগুণ করত নাপোলি। কিন্তু কায়েহনের জোরাল শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন শেজনি। গোলরক্ষকের এমন দক্ষতায় জেগে উঠে জুভেন্টাস। রোনালদো, দিবালারা ফিরতে থাকেন স্বরূপে। সমতায় ফিরতেও খুব একটা সময় নেয়নি তারা। ২৬ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে রোনালদোর নিখুঁত ক্রসে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান মানজুকিচ। সমতায় ফেরার পর থেকে ম্যাচে কর্তৃত্বের ছড়ি চলে যায় জুভেন্টাসের হাতে। এতক্ষণ কিছুটা ঘুমিয়েই কাটানো কুলিবালি-আলবিওলদের মূহূর্মূহূ পরীক্ষায় ফেলতে থাকেন রোনালদোরা। তবে প্রতিপক্ষে শেজনির মতই দক্ষহাতে জুভেন্টাসকে হতাশ করেছেন সাবেক আর্সেনাল গোলরক্ষক ওসপিনা।
প্রথমার্ধের শুরুটা দুর্বল হলেও দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছিল জুভেন্টাস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দলকে এগিয়ে নেন মানজুকিচই। এবারও গোলে হাত রোনালদোর। দিবালার পাস থেকে গোলের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। কিন্তু ফিরতি বল ফাঁকা জালে ঠেলে দিতে ভুল করেননি ক্রোয়েশিয়ার স্ট্রাইকার। পিছিয়ে পড়ার পর ডাগআউটে কোচ কার্লো আঞ্চেলত্তির হতাশা ছিল সুস্পষ্ট। মাঠে অধিনায়ক মারেক হামসিকের শূন্যদৃষ্টি যেন জানান দিচ্ছিল; হয়ত তিনিও জানেন, আর ফেরা হচ্ছে না ম্যাচে। হামসিকের এমন আশঙ্কা সত্যি হয় ৬০ মিনিটে। মাথা গরম করা এক ট্যাকেলের পর তর্কে জড়ানোর কারণে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নাপোলি লেফটব্যাক মারিও রুই। দশজনের দলে পরিণত হওয়া নাপোলি সমর্থকেরা তখন যেন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়। কয়েকজনের স্টেডিয়াম ছাড়া তো ধরা পড়েছে ক্যামেরাতেও।
কিন্তু নাপোলি হাল ছাড়তে নারাজ। একজন কম নিয়েও জুভেন্টাসকে টেক্কা দিয়ে গেছে সমানে সমান। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ৭২ মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারত তারা। কিন্তু কায়েহনকে আবারও খালি হাতে ফিরিয়েছেন শেজনি। আজকের জয়ে মানজুকিচ, রোনালদোর মতই সমান কৃতিত্ব পোলিশ এই গোলরক্ষকেরও। এর মিনিট চারেক পরই নাপোলির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন লিওনার্দো বনুচ্চি। দিবালার কর্ণার থেকে রোনালদোর হেড ব্যাকপোস্টে আলতো টোকায় জালে পাঠান তিনি। এরপর একেবারেই খেই হারিয়ে ফেলে নাপোলি। আক্রমণ, পজেশনে এগিয়ে থাকলেও শেজনিকে আর পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি তারা। ৮৫ মিনিটে মানজুকিচকে উঠিয়ে হ্যান কুয়াদ্রাদোকে নামিয়ে দেন অ্যালেগ্রি। মানজুকিচ মাঠ ছাড়ার সময় তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন জুভেন্টাস সমর্থকেরা। বাদ যাননি প্রেসিডেন্ট আন্রেয়া আগনেল্লিও। ভিআইপি বক্স থেকে তাকে অভিবাদন জানাচ্ছিলেন জুভেন্টাসের প্রেসিডেন্ট। উলটো প্রতি-আক্রমণে জুভেন্টাসকেই মনে হচ্ছিল ভয়ঙ্কর। কিন্তু রোনালদোর মিসের মহড়ায় ব্যবধানটা আর বাড়ানো হয়নি অ্যালেগ্রির দলের। শেষ দশ মিনিটে নিশ্চিত গোলের অন্তত তিনটি সুযোগ পেয়েছিলেন পর্তুগিজ অধিনায়ক। কিন্তু একবারও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি। গোল পাননি, কিন্তু গোল করানোর ‘হ্যাটট্রিক’ করেছেন। বড় ম্যাচে এমন রোনালদোকেই তো চাই জুভেন্টাসের!