হফেনহেইমে হাফ ছেঁড়ে বাঁচল সিটি
২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে নিজেদের মাঠেই অলিম্পিক লিওঁর কাছে হার। হফেনহাইমের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল খেয়ে বসেছে ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচের তখন বাকি মিনিট তিনেক। সমতায় ফিরলেও জয়ের আশায় মত্ত তখন পেপ গার্দিওলার দল। দুই ম্যাচ শেষ জয়হীন থাকলে যে পরের রাউন্ডে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে আরও। এমন সময়ই সিটির ত্রাণকর্তা হয়ে আসলেন দুই 'সিলভা', ডেভিড এবং বের্নার্দো। পর্তুগিজ উইঙ্গারের ক্রসে বল নিয়ন্ত্রণে এনে জালে পাঠালেন স্প্যানিশ কিংবদন্তী। মুষ্টিবদ্ধ উদযাপনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন গার্দিওলা, হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সিটি সমর্থকেরা। হফেনহাইমকে তাদেরই মাঠে ২-১ গোলে হারিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম জয়ের দেখা পেল 'সিটিজেন'রা।
হফেনহাইমের বিপক্ষে ম্যাচটা যে কঠিন হবে- এমনটা গতকালের সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছিলেন গার্দিওলা নিজেই। ম্যাচের শুরুতেই সিটির কোচের আশঙ্কা সত্যি করে দেওয়ার হুমকি দেয় জুলিয়ান নাগেলসম্যানের দল। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই করিম ডেমিরবাইয়ের থ্রু পাস থেকে সিটি রক্ষণভাগের ভুলে এডারসনকে একা পেয়ে যান আইজ্যাক বেলফোডিল। বাঁ-পায়ের বাঁকানো শটে দলকে লিড এনে দেন তিনি। ইউরোপের অন্যতম সেরা দলের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল- বুনো উল্লাসে মেতে উঠে সমগ্র রাইন-নেকটার অ্যারেনা। ম্যাচের শুরুতেই গোল খেয়ে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়ে সিটি। কিন্তু মনোবল হারাননি গার্দিওলা। ডাগআউট থেকে দলকে করতালি দিয়ে, দিকনির্দেশনা দিয়ে উৎসাহ দিতে থাকেন তিনি। কোচের উৎসাহের প্রতিদানও দেয় সিটি। ৮ মিনিটেই দলকে সমতায় ফেরান সার্জিও আগুয়েরো। লিরয় সানের পাস থেকে বাউম্যানকে পরাস্ত করেন 'কুন'। রুড ভ্যান নিস্টেলরয়ের পর এবারই প্রথম ইংলিশ ক্লাবে খেলা কোনো ফুটবলার গোল করলেন চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা পাঁচ 'অ্যাওয়ে' ম্যাচে।
গোলের পর থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় সিটি। রক্ষণের বাঁ-প্রান্তে আয়মেরিক লাপোর্তে খেললেও ম্যাচের বেশ খানিকটা সময় 'থ্রি ম্যান ডিফেন্স' খেলিয়েছেন পেপ। এই ট্যাকটিক থেকেই ম্যাচের ১৬ মিনিটে আরেকটু হলেই লিডটা নিয়ে নিত সিটি। কিন্তু ফার্নান্দিনহোর থ্রু থেকে রহিম স্টার্লিংয়ের শট বাউম্যানকে পরাস্ত করলেও চলে যায় হফেনহাইম গোলের বাইরে দিয়ে। প্রথমার্ধের বাকিটা সময় ছিল সিটি বনাম বাউম্যানের দ্বৈরথ। গোলের পর থেকে প্রথমার্ধের বাকিটা সময় আগুয়েরোদের খালি হাতেই ফিরিয়েছেন তিনি। ৩৪ মিনিটে আগুয়েরোর দুর্দান্ত বাঁকানো শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন বাউম্যান। অবিশ্বাস মুখ ঢেকে ফেলেন আগুয়েরো, গার্দিওলার মাথায় হাত। পজেশন ধরে রেখে আক্রমণাত্মক সিটির বিপক্ষে প্রতি-আক্রমণেই খেলছিল হফেনহাইম। দুর্দান্ত সেসব প্রতি-আক্রমণ থেকে লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করতে পারত তারা। কিন্তু দূর্বল ফিনিশিংয়ে সম্ভবপর হয়নি তা। দলকে লিড এনে দেওয়ার নায়ক বেলফোডিল এডারসনকে একা পেয়েও নিজেই নষ্ট করেছেন দুটি সুযোগ।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও সিটিকে সমানে সমান টেক্কা দিয়েছে হফেনহাইম। জমাট রক্ষণের কারণে সুবিধা করতে পারেননি আগুয়েরোরা। দ্বিতীয়ার্ধেও প্রতি-আক্রমণেই খেলছিল জার্মান দলটি। ৫৭ মিনিটে এডারসনের ভুলে আরেকটু হলেই লিড নিয়ে নিত তারা। ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক ডিবক্সের বাইরে ক্লিয়ার করতে এসে বল মিস করলে ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়ে যান বেলফোডিল। কিন্তু হফেনহাইম স্ট্রাইকার শট নেওয়ার আগেই দুর্দান্ত এক ট্যাকেলে বল কেড়ে নেন সানে। ট্যাকেলটা এতটাই দুর্দান্ত ছিল, গার্দিওলার সাথে সানেকে অভিবাদন জানিয়েছিলেন নাগেলসম্যান এবং হফেনহাইম সমর্থকেরা।
প্রথমার্ধে সিটিকে আটকেছিলেন প্রায় একাই। দ্বিতীয়ার্ধেও স্বরূপেই ছিলেন বাউম্যান। ৭২ মিনিটে 'পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক' রেঞ্জ থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়েছেন আগুয়েরোর হেড। এর মিনিট দুয়েক পর কিছুটা সৌভাগ্যের দেখা পায় হফেনহাইম। সানেকে ডিবক্সে ফেলে দেন বাউম্যান। কিন্তু সিটি সমর্থক, ফুটবলারদের পেনাল্টির জোর আবেদন নাকচ করে দেন রেফারি। হফেনহাইম গোলের সামনে থেকে বারবার খালি হাতে ফিরতে থাকা সিটিকে তখন চোখ রাঙ্গানি দিচ্ছে চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় না পাওয়া। কিন্তু সিলভার গোলে শেষমেশ পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে গার্দিওলার দল।