মেসির কাছেই হারল স্পার্স
ওয়েম্বলিতে বার্সেলোনা এর আগে খেলেছে সবশেষ ২০১১ সালে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। বার্সেলোনার সেই আধিপত্য এখন আর নেই। কিন্তু বহুদিন পর আবার সেই মাঠেই পুরনো বার্সার ঝলক দেখা গেল। ওয়েম্বলি মানেই যেন দুর্দান্ত বার্সেলোনা, সঙ্গে তার কারিগর লিওনেল মেসি। বার্সেলোনার প্রথম দুই গোলে অবদান ছিল, পরে নিজেও করলেন আরও দুই গোল। ওয়েম্বলিতে তাই কাটল আরেকটি মেসিময় রাত। তাতেই ছিন্নভিন্ন টটেনহাম হটস্পার। দুই গোল শোধ দিয়ে তারাও একটা সময় ম্যাচে উত্তাপ ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর অসাধারণ কিছু করে ফিরে আসা হয়নি তাদের। বার্সেলোনার কাছে তারা হেরেছে ৪-২ গোলে।
স্কোরলাইন দেখে অবশ্য খেলার ভাব গতি আন্দাজ করা কঠিন। প্রথমার্ধ দেখে খেলার ফল অনুমান করে ঘুমিয়ে পড়লেও স্কোরলাইন দেখে ধোঁকা খেতে পারেন। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার রঙ বদলেছে কয়েকবার। প্রথমার্ধের প্রতাপশালী বার্সা খেই হারিয়ে খানিকটা দিশেহারাই হয়ে পড়েছিল, সময়মতোই দুই গোল করে মেসি সামাল দিয়েছেন চাপ। তাই জয়টাও শেষ মেষ মনমতোই হয়েছে বার্সার।
তাই ম্যাচে বার্সার দুর্দান্ত ফুটবলই শিরোনাম হয়েছে। ম্যাচের মাত্র দুই মিনিটেই ফিলিপ কৌতিনহোর গোলে এগিয়ে যায় বার্সা। মেসি মিডফিল্ড থেকে ডিফেন্সচেরা পাস দিয়েছিলেন জর্দি আলবার উদ্দেশ্যে। আলবা ডিবক্সের একটু সামনে থেকে বলটা রিসিভ করলেন। কিন্তু ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা অধিনায়ক হুগো লরিস করলেন ভুলটা। এগিয়ে এসে আলবার কাছ থেকেই বলটা কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন হয়ত। তার আগেই বল আলবা পাস দিয়েছিলেন কৌতিনহোকে। ডান পায়ের হাফভলিতে ফাঁকা জালে বল জড়িয়ে বার্সার জার্সি গায়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম গোলটা করেন ব্রাজিলিয়ান।
শুরুতেই ধাক্কা খেয়ে বার্সাকে আটকাতে এরপর আরও হিমশিম খায় স্পার্সের রক্ষণ। সানচেজ, অ্যাল্ডারভাইরেল্ডরা প্রথমার্ধে ছিলেন দিশেহারা। আর মেসি, কৌতিনহো, সুয়ারেজেরা খেলেছেন উপভোগ করে। তাদের সঙ্গে মিডফিল্ডে আর্থার, রাকিটিচরা সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাতেই বার্সার প্রায় হারিয়ে যেতে বসা পাসিং ফুটবলের দেখা মিলল প্রথমার্ধে। ২৮ মিনিটে আবারও মেসিই সূচনা করলেন আক্রমণ। বা প্রান্ত থেকে নিখুঁত ক্রস করলেন সুয়ারেজের উদ্দেশ্যে, সুয়ারেজ বুকে রিসিভ করে বাড়ালেন আরেকটু সামনে থাকা কৌতিনহোকে। তিনি দুইবারের চেষ্টায়েও গোলে শট নিতে না পারায়, বল গেল পেছনের দিকে, ডিবক্সের একটু সামনে। ইভান রাকিটিচ দৌড়ে আসলেন, তারপর করলেন এক ভলি। বুলেটের মতো বল গিয়ে লাগল বারপোস্টে, সেখান থেকে জড়াল জালে। লিড বাড়ল বার্সার, রাকিটিচ করলেন অনেকদিন মনে রাখার মতো এক গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার ইতিহাসের ৬০০তম গোলটা এর চেয়ে সুন্দর আর হতে পারত না!
আক্রমণে তীক্ষ্ণ হওয়ায়, রক্ষণে তেমন একটা ভুগতে হচ্ছিল না বার্সাকে। স্যামুয়েল উমতিতির অনুপস্থিতিও প্রথমার্ধে টের পায়নি তারা। এরিক লামেলার ডিফ্লেকটেড একটি শট ঠেকিয়ে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানও নিজের কাজটা করেন ভালোমতোই। প্রথমার্ধের দাপুটে বার্সা বিরতির পরও শুরুটা করেছিল দারুণ। ৪৭ মিনিটে মেসির শট বারপোস্টে লেগে ফেরত আসলে সে দফায় বেঁচে যায় স্পার্স। তিন গোলে পিছিয়ে গেলে হয়ত খেলাটা তখনই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু রোমাঞ্চের শুরু এরপরই। ৫২ মিনিটে হ্যারি কেইন এক শোধ দিয়ে ওয়েম্বলিতে প্রাণের স্পন্দন ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু সেটা ছিল ক্ষণস্থায়ী। মিনিট চারেকের ব্যবধানেই দুই গোলের লিডটা পুনরুদ্ধার করে বার্সা। মেসির শুরু করা আক্রমণ এবারও ফিনিশ করেন মেসি নিজেই। আলবাকে বল দিয়ে নিজে ঢুকে গিয়েছিলেন বক্সের ভেতর, কৌতিনহো, সুয়ারেজ দুইজনই ডামি করে সেই ক্রস ছেড়ে দিয়েছেন। মেসি বাম পায়ের সহজ ফিনিশে বাকি কাজটা সেরেছেন। দুইবার বারপোস্টে আঘাত পেয়ে তৃতীয়বারে সফল মেসি, তাতে সফল বার্সাও।
কিন্তু ৬৬ মিনিটে আরেকবার রঙ বদলালো খেলা। কেইনের গোলের অ্যাসিস্ট ছিল লামেলার। এবার তিনিও করলেন গোল। নতুন মেসির খেতাবটা জুটেছিল তার ঘাড়েও। বার্সার বিপক্ষে টটেনহামের সেরা খেলোয়াড়ও ছিলেন তিনি। কিন্তু আসল মেসির সঙ্গে আর পেরে ওঠেননি লামেলা। ৬৬ মিনিটে তার করা গোলেই স্কোরলাইন ৩-২ বানিয়ে ফেলেছিল স্পার্স। ডিবক্সের বাইরে থেকে করা লামেলার শট ল্যাংলেটের গায়ে লেগে ঢুকে যায় বার্সার গোলে। অবশ্য এক মিনিট পরই আবারও বার্সাকে একটা উপহার দিয়ে বসেছিলেন লরিস। সুয়ারেজ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। পরে টবি অ্যাল্ডারভাইরেল্ড মেসিকে ফাঁকা বারে গোলবঞ্চিত করেন সময়মতো শট ব্লক করে।
এরপর বার্সাকে চেপে ধরেছিল মারুসিও পচেত্তিনোর। বেশ কয়েকটি আক্রমণে বার্সাকে কোনঠাসা করে শেষ দশ মিনিটে ম্যাচ থেকে কিছু একটা পেয়েও যেতে পারত তারা। ৮৪ মিনিটে লুকাস মাউরার শট ল্যাংলেটের গায়ে লেগে ফেরত না গেলে সমতায় ফিরতে পারত স্পার্স। প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে ঘরের মাঠের সুবিধাটা লুফে নেওয়ার চেষ্টায় যখন ব্যতিব্যস্ত টটেনহাম, তখনই আরেকবার খেই হারাল তারা। নিজেদের অর্ধে বল পজেশন হারিয়ে শেষের সুযোগটাও হাতছাড়া, আলবার ক্রস থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে গেলেন মেসি। লরিসকে ভুল দিকে পাঠিয়ে করলেন বার্সার চতুর্থ গোলটা। তাতে ম্যাচের ভাগ্যটা নিশ্চিত হয়ে গেল ৯০ মিনিটে।
গ্রুপের অন্য ম্যাচে পিএসজি আইন্দহোফেনকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইন্টার মিলান। রাদজা নাইঙ্গোলানের সমতাসূচক গোলের পর, ৬০ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন মাউরো ইকার্দি।