কিক অফের আগে : মাইনফিল্ডে ভাগ্য ফিরবে সিটির?
অ্যানফিল্ডে ম্যানচেস্টার সিটির শেষ যাত্রাটা আক্ষরিক অর্থেই ছিল ভয়াবহ। স্টেডিয়ামে ঢোকার আগে একদল লিভারপুল সমর্থকের হামলার শিকার হয়েছিল সিটির টিম বাস। পরে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগটা শেষ হয়েছিল দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম লেখ শেষেই ম্যাচের ফল প্রায় নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল, পরে দ্বিতীয় লেগও হেরে ষোলকলা পূর্ণ হয় পেপ গার্দিওলার দলের। সাফল্যমন্ডিত মৌসুমের শেষদিকে গিয়ে খাওয়া হোঁচটে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে পড়ে সিটি।
এর আগে জানুয়ারিতে সিটি অ্যানফিল্ডে গিয়েছিল লিগে অপরাজিত থেকে, ফিরেছিল রেকর্ড হারিয়ে, হেরে। শুধুমাত্র গার্দিওলা যুগেই নয়, অ্যানফিল্ডটা সিটির জন্য অপয়া হয়ে আছে বহুদিন ধরে। ২০০৩ সালের পর এই মাঠে জয়ের দেখা পায়নি সিটিজেনরা। ১৭ ম্যাচের ১২ টিতেই হেরেছে তারা। অ্যানফিল্ড তাই সিটির জন্য হয়ে গেছে মাইনফিল্ড।
সেই মাঠেই আবার ফিরছে সিটি। আগের মৌসুমের দুর্দান্ত সিটিকে আটকাতে লিভারপুলকেই মনে করা হচ্ছিল মূল প্রতিপক্ষ। ৭ ম্যাচ শেষে লিগে ৩ দল এখনও আছে অপরাজিত। লিভারপুল আর সিটিকে নতুন মৌসুমে আলাদা করার উপায় নেই। দুইদলই একটি করে ম্যাচ ড্র করেছে, বাকি ৬টিতেই জিতেছে তারা। আগের মৌসুমের তুলনায় সিটির পারফরম্যান্সকে এবার নিখুঁত বলা যায় না ঠিক। কিন্তু লিভারপুলের যেটুকু কমতি ছিল সেটা তারা ঠিকই কাটিয়ে উঠেছে। আগের ম্যাচেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে শেষ মুহুর্তের গোলে মূল্যবান এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে লিভারপুল। পুরো ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ না করেও যে জেতা যায় সেই দীক্ষাও ক্লপের লিভারপুলের রপ্ত করে নিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগে নাপোলির কাছে হেরে সব প্রতিযোগিতায় অপরাজিত থাকার রেকর্ডে ছেদ পড়েছে। কিন্তু নাপোলির কাছে সেই হারের প্রভাব লিগে কমই পড়ার কথা লিভারপুলের।
প্রিমিয়ার লিগে দুই দলই জিতেছে সমান সংখ্যক ম্যাচ। মৌসুমের বিচারে দুই দলকে আলাদা করাও তাই কঠিনই। শিরোপার পথে তাই এই ম্যাচটাই ফেলতে পারে বড় প্রভাব। তবে ইয়ুর্গেন ক্লপ সেটা মানছেন না। তার মতে এখনও শিরোপার কথা ভাবার সময় আসেনি, "আমার মনে হয় না শিরোপার কথা ভাবা যৌক্তিক। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। কিন্তু এটা ঘরের মাঠে ম্যান সিটির বিপক্ষে ম্যাচ, ম্যাচটা কঠিন। আগেরবার তারা দারুণ খেলেছে, আমি এবারও তাদের কাছ থেকে তেমন কিছুই আশা করছি।"
"তারা যেভাবে খেলে তাতে ছন্দপতন হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু গতবার সিটির একদমই সেটা হয়নি। সেজন্য আমি তাদের সম্মান করি। আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে তাদেরকে হারাতে হলে।"
আর পেপ গার্দিওলা এই ম্যাচ থেকে চাইছেন দলের উন্নতি। "সব ম্যাচই আলাদা। চ্যাম্পিয়নস লিগে আমরা তাদের সাথে পুরো ম্যাচ ভালো খেলছিলাম। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষদিকে বাজে খেলে হেরে গেছি। আমাদের মাঠেও আমরা ভালো খেলেছিলাম। কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছু হয়নি। আমরা হেরেছিলাম। লিভারপুল ইংল্যান্ডের সেরা দুই দলের একটি। আমরা চেষ্টা করি তাদের কাছাকাছি থাকতে।"
দুই ম্যানেজারের একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা আছে আগের মতোই। গার্দিওলা নিজের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশিবার ক্লপের কাছে হারলেও, জার্মানির হারগুলোর প্রভাব তার ওপর পড়েছে অল্পই। সেই তুলনায় গত মৌসুমের তিন হারের প্রভাবই বেশি। ক্লপকে হারাতে গার্দিওলা এর আগেও নিজের স্বভাবসুলভ ফুটবল থেকে সরে প্ল্যান বি খুঁজেছেন। সেই দুইবারই বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে জয় পেয়েছিলেন গার্দিওলা। সিটি ম্যানেজার ক্লপের বিপক্ষে আরও একবার যদি নিজের কৌশল বদলে ফেলেন তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।