৫-০ তেই পার পেল বাংলাদেশ!
২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল বনাম জার্মানির খেলাটি নিশ্চয়ই মনে আছে? মাত্র ৬ মিনিটের সাইক্লোনে উড়ে গিয়েছিল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল ব্রাজিল। আজ বাংলাদেশ দল কিছুটা স্বস্তি খুঁজতে পারে সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। ২৯ মিনিটের ঝড়েই লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে এমিলি-মামুনুলদের স্বপ্নের এক ম্যাচ।
পার্থ ওভাল স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর আগ থেকেই ছিল সাজ সাজ রব। ১০ বছর পর সকারুরা এসেছে ওভালে, উৎসবটা তাই যেন একটু বেশীই চোখে লাগলো। গ্যালারির এক কোণায় খুঁজে পাওয়া গেলো লাল-সবুজের কিছু সমর্থকদেরও। তাদের সবাই হয়তো অনুমান করতে পারছিলেন খেলার ফলাফল। শুধু কাগজে কলমেই নয়, গোটা ফুটবলিয় সংস্কৃতিতেই বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে পিছিয়ে এ কথা কারোই অজানা নয়। এই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দল মাঠে কতোখানি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে সেটিই আসলে ছিল দেখার বিষয়।
ম্যাচের প্রথম ২৯ মিনিট অবশ্য ভয়াবহ কোন রেকর্ডের হাতছানি দিচ্ছিল বাংলাদেশ দলকে। ১৯৭৯ সালে ইনচনে দক্ষিণ কোরিয়া ৯-০ গোলের লজ্জায় ডুবিয়েছিলো বাংলাদেশ দলকে। সেই স্মৃতিই ফিরে ফিরে আসছিলো পার্থে। বাংলাদেশের প্রতিরোধ ভেঙে একের পর এক পর অক্রমণ সানিয়ে বাংলাদেশের জালে গোল করছিলেন লেকি, রজিকরা। আলোকঝলমলে এনআইবি স্টেডিয়ামে শেষ মেষ এগুলোর কোনটাই হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের দৃঢ়তায় ৫-০ গোলের স্কোর লাইন নিয়ে মাঠ থেকে দিরতে পেরেছে ডি ক্রুইফ শিষ্যরা।
লড়াই করেই মাঠ ছাড়ার ঘোষনা দিয়েছিলেন ক্রুইফ। নিষেধাজ্ঞার খড়্গে এ ম্যাচেও ডাগ আউটে ছিলেন না তিনি। লড়াইয়ের কথা তাই থাকলো ইতিহাস হয়ে। ম্যাচের প্রথম ৬ মিনিটেই এগিয়ে যায় সকারুরা। গোলটি করেন জার্মান ক্লাব ইংগলোস্ট্যাডের স্ট্রাইকার ম্যাথু লেকি। ম্যাচের প্রথম ভাগেই গোল হজম করে মনো সংযোগের চুড়ান্ত বিচ্যুতি ঘটে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের। আর যাবেই বা কেন! প্রায় পঁচিশ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ফ্যানদের সামনে এতো বড় এওয়ে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা এ দলের কারো নেই বললেই চলে। ভড়কে যাওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক। এ সুযোগে ম্যাচের ৮ আর ১৯ মিনিটে দুটি গোল করে বসেন সেল্টিক মিডফিল্ডার রজিক। দ্বিতীয় গোলটিতে অবশ্য ভাগ্যের সহায়তা পান- তপু বর্মণের গায়ে লেগে বল জড়ায় বাংলাদেশের জালে। ২৯ মিনিটে গোলকিপার সোহেল দারুণ এক সেভ করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। চতুর্থ গোলটি তাঁর জালে জড়ান বার্নস। প্রথমার্ধে হেমন্তর পরিবর্তে মোনায়েম খান রাজুকে নামিয়ে রক্ষণভাগ গুছিয়ে আনার চেষ্টা করেন ডি ক্রুইফের বদলে ডাগ আউটে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয়া সহকারী কোচ সাইফুল বারী টিটু। অস্ট্রেলিয়ার ৭৯ শতাংশ বলের দখল আর গোল মুখে ১৫ টি আক্রমণের বিপরীতে বাংলাদেশের একটি মাত্র আক্রমণই প্রথমার্ধে পুরো খেলার সবচেয়ে ভালো প্রতিচ্ছবি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। চোট পেয়ে নাসির মাঠের বাইরে চলে গেলে তাঁর যায়গায় নামেন ইয়ামিন মুন্না। প্রথমার্ধে খাপ ছাড়া ফুটবল থেকে বেরিয়ে এসে এই অর্ধে বাংলাদেশ দল বল ধরে রেখে ঠান্ডা মাথায় খেলার চেষ্টা করে। ৬১ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো এক শটে গোল করে লিড ৫-০ তে নিয়ে যান অ্যারন ময়। এর পরপরই মাঠে নামেন কেহিল ও ইকোনোমিডিস।
এরপর স্কোর লাইনকে আর বাড়তে না দেয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান গোলরক্ষক সোহেলের। গোটা দুয়েক শট অবশ্য বারে লেগেও ফিরে যাওয়ায় গোল বঞ্চিত হতে হয় সকারুরা। ৭১ মিনিটে দারুন এক সেভে টিম কেহিলকে গোল বঞ্চিত করেন সোহেল। ইকোনমিডিস এর দুইটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দিয়ে লজ্জার হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন এই গোলরক্ষক।
হতাশার এই ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারাই ছিল বাংলাদেশ দলের প্রাপ্তি। এই হারের ধাক্কা সামলে এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই মামুনুল, জামালদের প্রস্তুত হতে হবে আরেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ওমানের বিরুদ্ধে। এই হারের পর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৮ তারিখ জর্ডানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল কিভাবে ফিরে আসে সেটিই এখন দেখার পালা।