লেভান্ডফস্কির শততম ম্যাচে হাসল রোনালদোবিহীন পর্তুগাল
পোল্যান্ডের হয়ে ৯৯ ম্যাচে ৫৫ গোল। মাতৃভূমি পোল্যান্ডের স্তাদিও স্লাস্কিতে আজ দেশের হয়ে শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন রবার্ট লেভান্ডফস্কি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোবিহীন পর্তুগালের বিপক্ষে ‘ফেভারিট’ ছিল পোলিশরাই। লেভান্ডফস্কির দিনে পোলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন কুবা ব্লাশিকওস্কি (১০৩)। লেভান্ডফস্কি না পারলেও গোল করে ঠিকই ‘ল্যান্ডমার্ক’ ম্যাচটি স্মরণীয় করে রেখেছেন ব্লাশিকওস্কি। কিন্তু রোনালদো না থাকলেও রাতটা লেভান্ডফস্কি বা ব্লাশিকওস্কি- কারোই হতে দেননি পর্তুগালের তিন 'সিলভা'; আন্দ্রে, বের্নার্দো এবং রাফা। ঠিকই জয় নিয়েই ফিরেছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। আক্রমণভাগে আন্দ্রে, বের্নার্দো এবং রাফা- তিন ‘সিলভা’র ত্রিশূলে বিদ্ধ হয়ে নিজেদের মাঠেই হেরে গেছে পোলিশরা। লেভান্ডফস্কি বা ব্লাশিকওস্কি- কেউই স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন ণা নিজেদের মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচটি। পোল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ইউয়েফা নেশনস লিগের লিগ ‘এ’-এর ৩ নম্বর গ্রুপের শীর্ষেই আছে ফার্নান্দো সান্তোসের দল।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মূল একাদশে না থাকায় তিন ‘সিলভা’কে নিয়ে আক্রমণভাগ সাজিয়েছিলেন কোচ ফার্নানো সান্তোস। আন্দ্রে এবং বের্নার্দো সিলভার সাথে মূল একাদশে নেমেছিলেন রাফা সিলভা। উইং বা সেন্ট্রাল স্ট্রাইকার- সবখানেই সমান স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা সিলভারা জায়গা পরিবর্তন করছিলেন প্রতিনিয়তই। এজন্য তাদেরকে মার্ক করতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিলেন কামিল গ্লিকরা। ম্যাচের ৭ মিনিটেই লিড নিতে পারত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু লেফটব্যাক মারিও রুইয়ের কর্ণার থেকে আন্দ্রে সিলভার হেড চলে যায় পোলিশ গোলের সামান্য উপর দিয়ে। প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই পজেশন ধরে রেখে আক্রমণেই ছিল পর্তুগাল। কিন্তু কখনও ফরোয়ার্ডদের ভুলে, বা কখনও বিতর্কিত সিদ্ধান্তে লিডে যাওয়ার সুযোগই তৈরি করতে পারেনি সান্তোসের দল। ১৬ মিনিটে হোয়াও ক্যান্সেলোকে ডিবক্সে ফেলে দেন ইয়ান বেদনারেক। নিশ্চিত পেনাল্টি ভেবে পর্তুগজিদের জোরাল আপিলে সাড়া দেননি রেফারি। পর্তুগালের কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা হয়ে আসে এর মিনিট দুয়েক পর পোল্যান্ডের গোল। ১৮ মিনিটে রাফায়েল কুরজাওয়ার কর্ণার এগিয়ে এসে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন পর্তুগিজ গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও। পর্তুগিজ ‘নাম্বার ওয়ান’-এর ভুলে ফাঁকা পোস্টে বল হেড করে দলকে লিড এনে দেন ক্রিশতভ পিয়াতেক। পোল্যান্ডের হয়ে নিজের প্রথম প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচেই গোল করলেন ইউরোপের এই মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা।
গোল হজমের পর নড়েচড়ে বসে পর্তুগাল। পজেশন, আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও গোলটাই পাচ্ছিল না তারা। লুকাস ফ্যাবিয়ান্সকির দক্ষতায়, বা রেফারির আরও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সমতায় ফেরা হচ্ছিল না পর্তুগালের। কিন্তু ৩১ মিনিটে অবশেষে ঠিকই সমতায় ফেরে তারা। পিৎজির ক্রস থেকে পোলিশ ডিফেন্সের ভুলে ফ্যাবিয়ান্সকিকে একা পেয়ে যান আন্দ্রে সিলভা। ডানপায়ের আলতো টোকায় বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি সেভিয়ার স্ট্রাইকার। ক্লাব ফুটবলের ফর্মটা যেন পর্তুগালের জার্সিতেও বয়ে আনলেন রোনালদোর মতে পর্তুগিজ ফুটবলের নতুন ‘পোস্টার বয়’। গোলের পরে নির্ভার পর্তুগাল যেন হয়ে উঠে আরও ভয়ঙ্কর। লিডে যেতে সময় নেয়নি তারা। মিনিট দশেক পর রুবেন নেভেসের দুর্দান্ত এক লম্বা পাস অসাধারণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনেন রাফা সিলভা। প্রথম টাচেই ফ্যাবিয়ান্সকিকে কাটিয়ে ফাঁকা গোল পেয়ে যান রাফা। কিন্তু তার শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজেদের জালে ঠেলে দেন গ্লিক। পেছন থেকে বল দখলের দুর্দান্ত ট্যাকেল করে বলও পেয়েছিলেন গ্লিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার ক্লিয়ারেন্স জড়ায় তার নিজেরই জালে। প্রথমার্ধের পুরোটা সময়ই দারুণ খেলা পর্তুগিজরা লিড নিয়েই শেষ করে প্রথমার্ধ। লিড নিয়েও পিচিয়ে পড়ায় প্রথমার্ধ শেষে নিজ সমর্থকদের দুয়ো শুনেই মাঠ ছাড়তে হয় রবার্ট লেভান্ডফস্কিদের।
প্রথমার্ধের শেষদিকে লিড নেওয়া পর্তুগাল দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও ছিল দারুণ ছন্দে। সিলভা ত্রয়ীর বোঝাপড়া যেন কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছিলেন না গ্লিকরা। প্রথম দুই গোল এসেছিল ফরোয়ার্ড লাইন তার দুই সতীর্থের কারণে। পর্তুগালের তিন নম্বর গোলটা আসে বের্নার্দো সিলভার পা থেকে। ডানপ্রান্ত থেকে চারজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে আঁ-পায়ের বাঁকানো শটে গোল করেন ম্যান সিটির উইঙ্গার।
পর্তুগালের এই গোলের পর যেন একেবারেই ম্যাচে ফেরার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে পোল্যান্ড। লেভান্ডফস্কি, পিয়াতেকদের রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন পেপেরা। গোলের আশায় দুই উইঙ্গার কামিল গ্রশিকি এবং কুবা ব্লাশিকওস্কিকে নামিয়ে দেন পোলিশ কোচ। নিজের ‘ল্যান্ডমার্ক’ ম্যাচে পোলিশদের ম্যাচে ফেরার আশা দেখান ব্লাশিকওস্কি। অবশ্য গোলের প্রায় পুরো কৃতিত্বই আরেক বদলি গ্রশিকির। ৭৭ মিনিটে তার ক্রসে পেপের দূর্বল ক্লিয়ারেন্সে ডিবক্সের সামান্য বাইরে বল পান ব্লাশিকওস্কি। প্রথম টাচেই দুর্দান্ত এক ভলিতে দলকে ম্যাচের ফেরার স্বপ্ন দেখাতে থাকেন ব্লাশিকওস্কি। ম্যাচের বাকিটা সময় আক্রমণের জন্য রীতিমত হন্যে হয়ে উঠে পোলিশরা। কিন্তু পেপে-রুবেন দিয়াজদের আর পরাস্ত করা হয়নি। পোল্যান্ডের আক্রমণাত্মক খেলার বিপরীতে পর্তুগিজদের প্রতি-আক্রমণ ছিল বেশি ভয়ঙ্কর। ৮৪ মিনিটে বদলি মিডফিল্ডার রেনাটো সানচেজের শট ফ্যাবিয়ান্সকিকে পরাস্ত করলেও লাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে দেন ইয়ান বেদনারেক। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময় ফাঁকা পোস্ট পেয়েও ব্রুনো ফার্নান্দেজ গোল করতে ব্যর্থ হলে ৩-২ গোলের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় সান্তোসের দলকে।