• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-১ঃ কাতেনাচ্চিওর "কূটকৌশল"

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-১ঃ কাতেনাচ্চিওর "কূটকৌশল"    

    ‘ইতালিয়ান ফুটবল সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল, এখানে কেউ দৌড়ায় না, মন্থরগতির খেলাটাই এখানে মুখ্য, এখানকার ফুটবল অনেক সহজ। আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করার জন্য দুইটি ম্যাচই যথেষ্ট ছিল।’ - কার্লোস তেভেজ, প্রাক্তন জুভেন্টাস স্ট্রাইকার।

     

    ফুটবলে সবারই পছন্দ গতিময়তা, চোখ ধাঁধানো ড্রিবল, বিদ্যুৎগতির দৌড়; কঠিন সত্য হল, আমজনতার কেউই ডিফেন্স দেখে হাততালি দেওয়ার জন্য ফুটবল দেখে না। কাজেই কেউ যদি প্রতিনিয়ত ১-০ গোলে ম্যাচ জিততে থাকে সেই বাস ড্রাইভারের অনৈতিক পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা চেঁচামেচি করি। কেউ ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে শিরোপা জিতলে আমরা ‘সুন্দর ফুটবল’-র শেষ দেখে ফেলি। কারণ আমাদের সাদা চোখে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা কামলা বিশেষ - তাদের খেলা কখনোই মেসি-নেইমার-রোনালদোর মতো শ্বাসরুদ্ধকর হবে না সেটা আমরা মনস্থির করে ফেলেছি! 

     

    আজকের মরিনহো শুধু নন, অর্ধ শতাব্দী আগে হেলেনিও হেরেরা যখন তাঁর কাতেনাচ্চিও ফুটবলের জোরে কাপের পর কাপ জিতে চলেছেন তখনো ফুটবলভক্ত আর সাংবাদিকেরা প্রতিনিয়তই তাঁর মুন্ডুপাত করেছেন। সংবাদপত্রগুলো তাঁকে ‘ইল ডায়াবলো’ বা ডেভিল উপাধি দিয়ে দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে নি। আবার এই ভদ্রলোক যখন তাঁর ক্যারিয়ারের শেষবেলায়, তখন এই পত্রিকাগুলোই তাঁকে 'ইল মাগো' - 'দা ম্যাজিশিয়ান' ডাকা শুরু করল! রূপালি ট্রফি ভর্তি শোকেসই শেষ পর্যন্ত কাতেনাচ্চিও এবং হেরেরার প্রতি দর্শক-সাংবাদিকদের বিরূপ মনোভাব উড়িয়ে দেয়, সবসময়কার মতোই।

     

    কাতেনাচ্চিও শব্দটির আক্ষরিক ইংরেজি অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘লকডাউন’, দরজার খিল আটকে বসে থাকা। ফুটবল মাঠেও ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। ফুটবল মাঠে আক্রমণ ঠেকানোর জন্য কাতেনাচ্চিওকেই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল মানা হতো তখন, এবং এখনো অনেক ম্যানেজারই (বিশেষ করে 'সিরি আ' এর ম্যানেজাররা) এর মায়া কাটাতে পারেন নি। এই চাবিবিহীন তালার জোরেই হেলেনিও হেরেরা ইন্টার মিলানকে নিয়ে তিনটা স্কুডেট্টো আর 'ব্যাক টু ব্যাক' ইউরোপিয়ান কাপ জয় করেছেন এবং প্রতিবেশি এসি মিলানের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন দীর্ঘ সময় ধরে। হেরেরার এই অভিনব রণকৌশলের জোরে ইন্টার মিলান অনেক ভয়ানক আক্রমণাত্মক দলগুলোর বিরুদ্ধেও ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে প্রায় প্রতিনিয়তই। এর মাঝে সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হবে সম্ভবত ১৯৬৪-’৬৫ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে ইউসেবিওর বেনফিকাকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জয়।

     

    কার্ল রাপানের ‘ভেরু’

     

    ৮৯ হাজার দর্শকের সামনে ১৯৬৫ সালে সান সিরোর ঐ রাতে কাতেনাচ্চিওকে বিশ্ববাসীর কাছে ভালভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন হেরেরা, কিন্তু এই কাতেনাচ্চিওর পিতা কিন্তু তিনি নন। এই কৃতিত্ব যাবে অস্ট্রিয়ান ট্রেইনার কার্ল রাপানের কাছে। '৩০-র দশকে রাপান ছিলেন সুইজারল্যান্ডের গ্রাসহপার্স ক্লাবের ম্যানেজার-কাম-কোচ। এক দল পার্ট টাইম ফুটবলারদের নিয়ে ফুটবল মাঠে প্রফেশনাল দলগুলোর বিপক্ষে জয় কীভাবে বের করে নিতে হয় এই চিন্তা থেকেই রাপান এই কৌশলের উদ্ভাবন করেন। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৫ এর মাঝে রাপান ৫ বার সুইস লিগের শিরোপা ঘরে তোলেন, তাঁর এ সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁকে সুইজারল্যান্ডের জাতীয় দলের দায়িত্ব-ও দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত রাপান হলেন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে (চারবারের বিভিন্ন মেয়াদে ১৬ বছর) সুইজারল্যান্ডের জাতীয় দলের কোচিং করানোর রেকর্ডের মালিক।

     

    কার্ল রাপান

     

    রাপানের কৌশল অবশ্য তখন কাতেনাচ্চিও নামে পরিচিত ছিল না, তখন এ কৌশলের নাম ছিল ‘লা ভেরু’ - অস্ট্রিয়ান থেকে অনুবাদ করলে যার অর্থ হয় - তালা! কার্ল রাপানের ভেরু ছিল তখনকার পরিচিত ৩-২-৫ বা  'ডব্লিউ এম' ফর্মেশনের একটি বিশেষ রূপ। টিপিকাল 'ডব্লিউ এম' ফর্মেশনে ব্যাক লাইনে তিনজন ডিফেন্ডার ছিল যার একজন বল পেলে আবার মধ্যমাঠ পর্যন্ত ওঠার স্বাধীনতা পেত। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই বিপক্ষ দলে ক্ষীপ্রগতির অ্যাটাকার বা উইঙ্গার থাকলে এই ফর্মেশনের একিলিসের গোড়ালিটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট এবং কষ্টকর হয়ে উঠতো।

     

    বামে চিরাচরিত WM ফর্মেশন, ডানে রাপানের ভেরু

     

    রাপান এই ফর্মেশনে একটু পরিবর্তন এনে সেটাকে করলেন ১-৩-২-৩-১। ব্যাকলাইনের পেছনে যুক্ত হল আরো একজন ডিফেন্ডার। এই ডিফেন্ডিং পজিশনের নাম দেওয়া হল ‘ভেরুইয়ার’ - লাস্ট ম্যান। এই ভেরুইয়ারের প্রধান দায়িত্ব ছিল খেলায় ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের গুরুত্ব প্রশমিত করা। তিনি দরকার মতো তার আরেকজন ডিফেন্স সঙ্গীর সাথে হয়তো কোন উইঙ্গার বা স্ট্রাইকারকে 'ডাবল ম্যান মার্কিং' করতে পারেন আবার যদি ব্যাক লাইনের দেওয়াল পেরিয়ে কোন অ্যাটাকার বের হয়ে আসে তবে ভেরুইয়ার হবে 'লাস্ট লাইন অফ ডিফেন্স'।

     

    রক্কো এবং হেরেরার কাতেনাচ্চিও

     

    রাপান যখন তাঁর ভেরু দিয়ে সুইজারল্যান্ড দাবড়ে বেড়াচ্ছিলেন, তখন ভূমধ্যসাগরপাড়ে হেলেনিও হেরেরার নাম কেবল মানুষ জানতে শুরু করেছে। বিভিন্ন স্প্যানিশ দল চড়িয়ে এই আর্জেন্টাইন ম্যানেজার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনাকে পরপর দুই মৌসুমে লা লিগার শিরোপা জেতালেন। এখন শুনে অনেকে বিস্মিত হবেন, কিন্তু হেরেরার বার্সেলোনা যুগে বার্সার মৌসুমপ্রতি গড় গোলসংখ্যা ছিল ৯১, এর থেকে বেশি গোল গড় ছিল একমাত্র পুসকাস-ডি স্টেফানোতে উজ্জ্বল রিয়াল মাদ্রিদেরই। যাহোক, বার্সার এই সাফল্যের পর ইন্টার মিলান থেকে ডাক আসে হেলেনিও হেরেরার।

     

     

    মজার ব্যাপার হল, ইতালিতে কাতেনাচ্চিওর পিতাও কিন্তু হেরেরা নন! ইতালিতে কাতেনাচ্চিওর জন্ম দিয়েছিলেন ইতালিয় ফুটবলের একজন কিংবদন্তী নেরিও রক্কো। ১৯৪৭-’৪৮ মৌসুমে রক্কো একটা গড়পড়তা ট্রিয়েস্টেন দলকে নিয়ে সিরি আ-তে দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ করলে সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। প্রথমে সবাই ভেবেছিল ব্যাপারটা 'ঝড়ে বক মরে' ধরনের কিছু হবে। কিন্তু '৫০-র দশকের মাঝামাঝি 'সিরি বি'-এর দল পাডোভাকে নিয়ে যখন রক্কো 'সিরি আ'-তে উঠে এলেন এবং পরবর্তী মৌসুমেই তৃতীয় স্থান নিয়ে মৌসুম শেষ করলেন তখন সবার টনক নড়ল। সিরি আ’র ম্যানেজারদের মাঝে হিড়িক পড়ে গেল কাতেনাচ্চিওকে আপন করে নেওয়ার।

     

    এমনই এক সময়ে ইন্টার মিলানের ম্যানেজার হয়ে ইতালিতে পা রাখলেন হেলেনিও হেরেরা। ১৯৬০-’৬১ মৌসুম হেরেরার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো ছিল, তাঁর লাতিন ঘরানার পজেশন ভিত্তিক ফুটবল ইতালিয় কাতেনাচ্চিও-র কাছে মার খেতে লাগল। ইন্টার মৌসুম শেষ করল তৃতীয় হয়ে, এর মাঝে আবার ইতালিয়ান ডার্বিতে জুভেন্টাসের কাছে ৯-১ গোলে হেরে ইন্টার আরেক লজ্জাজনক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। পরের মৌসুমেও তাদেরকে টপকে চিরশত্রু এসি মিলান শিরোপা জিতে নিল, মিলানের কাতেনাচ্চিওর কাছে হেরেরার কৌশল ক্রমে ক্রমেই মার খেয়ে যেতে লাগলো। এটা অবশ্য ধর্তব্যই ছিল বলতে গেলে, কারণ তখন মিলানের ম্যানেজার ছিলেন নেরিও রক্কো স্বয়ং!

     

    এর পরের মৌসুমে হেরেরা নতুন এক কৌশল নিয়ে আসলেন। পূর্বে সুইপার হিসেবে খেলা আরমান্ডো পিচ্চিকে তিনি দিলেন নতুন একটি দায়িত্ব। পিচ্চির কাজ হবে ব্যাক লাইনের পেছনে থাকা। প্রয়োজনে ডাবল ম্যান মার্কিং করা, ডিফেন্স লাইন পার হওয়া মুশকিল আসান করা - কার্ল রাপানের ভেরুইয়ারের মতোই অনেকটা। সেই সাথে একটা বাড়তি দায়িত্ব, বলের দখল পেলে লম্বা পাসে দুই পাশের দুইজন ফুল ব্যাক - জিয়াকিন্তো ফাচেত্তি এবং জেয়ার ডি কস্তাকে রিলিজ করা। তৈরী হল একটি নতুন ফুটবলিং পজিশন ‘লিবেরো’। হেরেরা ট্রাডিশনাল ৫-৩-২ ফর্মেশনকে নিজের মতো সাজিয়ে নিয়েছিলেন।

     

    মজার ব্যাপার হচ্ছে ডিফেন্সের সময় একরকম ফর্মেশন এবং আক্রমণের সময় আরেক- এরকম ফর্মেশন যে হতে পারে সেটা সবচেয়ে কার্যকরী ভাবে হেরেরাই প্রথম দেখিয়েছিলেন। তাঁর ফর্মেশনের প্রথম ব্যক্তি হবেন একজন লিবেরো, তার সামনে থাকবে ২ বা ৪ জন ডিফেন্ডার(ডিফেন্স বা অফেন্সের ওপর নির্ভর করে), এর পর ৫ বা ৩ জনের মিডফিল্ড এবং সবার সামনে দুইজন ফরোয়ার্ড। ফরোয়ার্ডদের মাঝেও একটা নতুন জিনিস আনলেন হেরেরা।

     

    সান্দ্রো মাজোলা তখন ছিলেন সকল রক্ষণভাগের আতংক। তাঁর অস্বাভাবিক ক্ষীপ্রতা এবং নিখুঁত ফিনিশিংয়ের জেরে যেকোন 'হাফ চান্স'-কেই তিনি গোলে রূপ দিতে পারতেন। হেরেরা মাজোলাকে খেলালেন প্রধান ফরোয়ার্ড জিয়াকোমোর একটু পেছনে। তাঁর দায়িত্ব ছিল সুযোগ পেলেই টার্গেটম্যান জিয়াকোমোকে গোলের জন্য সেট আপ করে দেওয়া। মাজোলার জন্য তৈরী হল আরেকটি পজিশন ‘ফ্যান্টাসিস্তা’ যাকে আমরা আজকাল বলি 'অ্যাডভান্সড প্লেমেকার'। তবে হেরেরার কৌশলে সবচেয়ে অভিনব ছিল তাঁর দুই উইঙ্গার/ফুল ব্যাক এবং লিবেরোর ভূমিকা।

     

     

     অফেন্স                                                                   ডিফেন্স

     

     

    লিবেরো হিসেবে পিচ্চির দায়িত্ব ছিল বল পায়ে পেলেই লম্বা পাসে জেয়ার বা ফাচেত্তির কাছে সেটা চালান করে দেওয়া। স্ট্রাইকার থেকে ফুল ব্যাকে পরিণত হওয়া জেয়ার তাঁর বিস্ফোরক দৌড়ে এগিয়ে যেতেন। তিনিই সম্ভবত ফুটবলের প্রথম 'ইনভার্টেড উইঙ্গার'। অপরদিকে রাইট উইংয়ে ফাচেত্তিও একই কাজ করতেন। জন্মগতভাবে বাম পাঁয়ের এবং ব্যাক লাইনের  খেলোয়াড় হওয়া সত্বেও ফাচেত্তির ফিনিশিং ছিল দুর্দান্ত। তাঁর ইন্টারের হয়ে ৪৭৬ ম্যাচে ৫৯ গোল আজো যেকোন উইং ব্যাকের জন্য ঈর্ষণীয় একটি রেকর্ড।

     


    আরো পড়ুনঃ 

    ট্যাকটিকসে হাতেখড়ি-২ঃ গেগেনপ্রেসিং


     

    প্লেমেকার লুইস সুয়ারেজ এবং সান্দ্রো মাজোলার ডেলিভারি এবং জেয়ার আর ফাচেত্তির চার্জ - ইন্টারের কাউন্টার অ্যাটাক প্রায় কিংবদন্তি পর্যায়ে পৌঁছে গেল অল্পদিনের মাঝে। ১৯৬২-’৬৩ তে মাত্র ২০ গোল হজম করে স্কুডেট্টো ঘরে তুললেন হেরেরা। ঘরের মাঠে যথেষ্ট আক্রমণাত্মক খেললেও বাইরের মাঠে ইন্টারের চরম রক্ষণাত্মক খেলা সাংবাদিক ও দর্শকের চক্ষুশুল হয়ে উঠতে লাগল। ওসবকে হেরেরা থোড়াই পাত্তা দিতেন তখন। টানা তিন বছর সিরি আ’র শিরোপা জিতে নিন্দুকের বুকে আরো জ্বালা ধরিয়ে দিলেন তিনি। এর মাঝে ‘৬৩-তে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ইন্টারের ঘরে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ নিয়ে এলে হেরেরা। পরের বছর ইউরোপের কালো মানিক ইউসেবিওর বেনফিকাকে একমাত্র গোলে হারিয়ে শিরোপা ধরেও রাখলেন তিনি। হয়ে গেলেন ফুটবল কিংবদন্তীর অংশ।

     

    কাতেনাচ্চিওর ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’

     

    হেরেরার কাতেনাচ্চিও ফুটবলের এক অনন্য উদ্ভাবনী কৌশল ছিল যা পরবর্তীতে আরো খেলোয়াড় এবং ম্যানেজারদের অনুপ্রাণিত করে। কেউ কেউ আবার তাঁর এই কৌশলকে আরো চমৎকারভাবে কাজে লাগিয়েছেন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল “ডার কাইজার”। ১৯৬৬-র বিশ্বকাপে লিবেরো পজিশন থেকে ফ্রাঞ্জ ‘ডার কাইজার’ বেকেনবাওয়ারের ভয়ানক চার্জগুলোর কারণে তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যান। কাতেনাচ্চিওকে ঠেকানোর কৌশল চিন্তা করার জন্যও অনেক ম্যানেজার মাথার ঘাম ঝরাতে থাকেন যার ফলশ্রুতিতে রাইনাস মিশেল ফুটবল কে উপহার দেন “টোটাল ফুটবল”। যার দাপটে কাতেনাচ্চিওর প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল একসময়।

     

    বর্তমান যুগের কাতেনাচ্চিও

     

    বর্তমানে কাতেনাচ্চিও হারিয়ে গিয়েছে। কাতেনাচ্চিওর প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য - ম্যান টু ম্যান মার্কিং এবং লিবেরো এখনকার যুগে বিলুপ্ত। তবে আজো কোন দল বেশি রক্ষণাত্মক খেললে স্নেহ (বা অবজ্ঞাভরে) সেটাকে কাতেনাচ্চিও বলা হয়ে থাকে। এখন এমন কি সিরি আ’র ম্যানেজাররাও স্বাভাবিক ৪-৩-৩ বা ৪-৪-২ তে দলকে খেলাতে পছন্দ করেন। তবে এ যুগে বেশ কিছু ম্যানেজার ইতালির জাতীয় দলে কাতেনাচ্চিও ধরনের ফর্মেশন(৩-৫-২) তে খেলানোর চেষ্টা করেছেন। এর মাঝে আছেন সিজার প্রানদেল্লি, জিওভানি ত্রাপাত্তোনি এবং সিজার মালদিনি। কিন্তু কেউই খুব একটা সাফল্যের দেখা পান নি। তবে মাঝে মাঝে কাতেনাচ্চিও ব্যবহার করে ম্যানেজাররা এখনো চমক দেখিয়ে যান। যেমনটি আমরা দেখেছি ২০০৪-র ইউরোর ফাইনালে গ্রিসের কাছ থেকে অথবা ২০১০-র চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে মরিনহোর ইন্টারের কাছ থেকে। কাতানাচ্চিও বিলুপ্ত হলেও এর অনুপ্রেরণা এখনো টিকে আছে কিছু ম্যানেজারের হৃদয়কোণে, বিশ্বাস না করলে মরিনহোকে জিজ্ঞেস করেই দেখুন না!