ইন্টারকে হারিয়ে 'প্রতিশোধ' নিল মেসিবিহীন বার্সা
ডান হাতের রেডিয়াল বোন ভেঙ্গে মাঠের বাইরে চলে গেছেন মাসখানেকের জন্য। বার্সেলোনার মূল একাদশে লিওনেল মেসির জায়গা কে নেবেন- তা নিয়েই ছিল হাজারো জল্পনা-কল্পনা। উসমান ডেম্বেলে, মুনির এল হাদ্দাদিদের নাম শোনা গেলেও রাফিনহাকেই মূল একাদশে নামিয়ে দিলেন এর্নেস্তো ভালভার্দে। কিছুটা বিস্ময়করই বলা চলে ভালভার্দের এমন সিদ্ধান্তকে। তবে রাফিনহা মান রাখলেন কোচের, দিলেন আস্থার পূর্ণ প্রতিদান। যার বদলি হিসেবে নেমেছিলেন, তার মূল দায়িত্ব গোল করে দলকে জেতানো। সেই কাজটিই করলেন রাফিনহা। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার এবং জর্দি আলবার গোলে ইন্টার মিলানকে ২-০ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনা। সেই সাথে ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল হারের কষ্টটাও যেন কিছুটা হলেও লাঘব করল কাতালানরা। চ্যাম্পিয়নস লিগে ইতালিয়ান দলগুলোর বিপক্ষে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা ১৪ ম্যাচে নিয়ে গেল ভালভার্দের দল।
২০১০ সালে এই মাঠে অবশ্য ইন্টারকে ঠিকই হারিয়েছিল বার্সা। কিন্তু অ্যাগ্রিগ্রেটে ফাইনালে গিয়েছিল 'নেরাজ্জুরি'রা। আজ যেন সেই প্রতিশোধ নিতেই উঠে পড়ে লেগেছিল কাতালানরা। শুরু থেকেই তাদের খেলায় এক ভিন্নধরণের আগ্রাসন বিরাজ করছিল, যা এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ছিল অভূতপূর্ব। দর্শকসারিতে পরিবার নিয়ে দলকে উৎসাহিত করতে চলে এসেছিলেন মেসি। অধিনায়ককে 'দ্বাদশ খেলোয়াড়' হিসেবে পেয়ে যেন আরও জ্বলে উঠে বার্সা। ম্যাচের ৮ মিনিটেই লিড নিতে পারত তারা। কিন্তু ডিবক্সের মধ্যে থেকে লুইস সুয়ারেজের শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন সামির হান্দানোভিচ। হারের ব্যবধান মাত্র ২ গোলের হওয়ার পেছনে খুব সম্ভবত সবচেয়ে বড় অবদান ইন্টারের গোলরক্ষকেরই। ১৬ মিনিটে গোললাইন থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন ক্লেমেন্ত লংলের হেড। নাহলে তখনই লিড নিতে পারত বার্সা।
কাতালানদের আক্রমণ জোয়ার সামলে বার্সার অর্ধে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি ইন্টার। মাউরো ইকার্ডিদের সামলাতে তেমন সমস্যাতেই পড়তে হয়নি জেরার্ড পিকেদের। ২৭ মিনিটে আবারও লিড নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল বার্সা। কিন্তু আবারও বাঁধা হয়ে দাঁড়ান হান্দানোভিচ। ফিরিয়ে দেন রাফিনহার শট। ব্রাজিলিয়ান লিডফিল্ডারের এই প্রচেষ্টার পরই দর্শকসারিতে মেসিকে দেখা রাফিনহার দিকে করতালি দিয়ে উৎসাহ যোগাতে। এক মুহূর্তের জন্য অধিনায়কের দিকে ঠিকই তাকিয়েছিলেন রাফিনহা। আর তাতেই যেন পেয়ে গেলেন অনুপ্রেরণা। ৩২ মিনিটে হান্দানোভিচও আটকাতে পারেনি তাকে। সুয়ারেজের দুর্দান্ত পাসে বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় দলকে লিড এনে দেন রাফিনহা। গোলের পরই দর্শকসারিতে থাকা মেসির দিকে ইশারা করেন তিনি। দু'হাত মুষ্টিবদ্ধ করা উদযাপনে সতীর্থের জবাবটাও দিতে ভোলেননি মেসি। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে কুতিনিয়োর ফ্রিকিক গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে গেলে লিডটা আর বাড়ানো হয়নি বার্সার।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচে ফেরার আশায় মারিও পলিতানোকে নামিয়ে দেন ইন্টার কোচ লুচিয়ানো স্পালেত্তি। আক্রমণের ধারটা বাড়লেও প্রথমার্ধের মতই বার্সার রক্ষণভাগকে বিপাকে ফেলতে পারেনি ইন্টার। উল্টো প্রতি-আক্রমণে বার্সাই ছিল বয়ঙ্কর। ৫৯ মিনিটে আবারও বার্সা এবং ব্যবধান দ্বিগুণের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান হান্দানোভিচ। ফিরিয়ে দেন সুয়ারেজকে। ৬২ মিনিটে গোলের মাত্র গজ তিনেক দূর থেকেও লংলের শট ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। ৭১ মিনিটে কুতিনিয়ো, হান্দানোভিচকে পরাস্ত করলেন ঠিকই, কিন্তু তার শট প্রতিহত হল বারপোস্টে। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও জয় নিয়েই ফিরেছে ইন্টার। আজও ন্যু ক্যাম্প থেকে এমন কিছুরই আশায় ছিল স্পালেত্তির দল। কিন্তু ম্যাচের মিনিট সাতেক বাকি থাকতে ৮৩ মিনিটে ইন্টারের সে স্বপ্নে গুঁড়েবালি করে দেন আলবা। ইভান রাকিটিচের চমৎকার থ্রু পাস নিয়ন্ত্রণে এনে মাপা শটে ইন্টারের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন স্প্যানিশ লেফটব্যাক। চ্যাম্পিয়নস লিগের এই মৌসুমে ডিফেন্ডার হিসেবে গোলে সরাসরি অবদানের তালিকায় সবার উপরে থাকলেন আলবা (১ গোল, ৩ অ্যাসিস্ট)।
আজকের জয়ে ৩ ম্যাচে পূর্ণ ৯ পয়েনন্ট নিয়ে 'বি' গ্রুপে টেবিলের শীর্ষেই থাকল বার্সা। ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্টার। নভেম্বরের ৭ তারিখে সান সিরোতে আবারও মুখোমুখি হবে দুই দল।