এবার সামনে জর্ডান-পরীক্ষা
২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে উরুগুয়ে বাধা না টপকাতে পেরে খেলা হয়নি বিশ্বকাপ। প্লে অফে প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে কাভানি, ফোরলানদের কাছে ৫-০ গোলে উড়ে গেলেও, পরের লেগে মন্টেভিডিওতে গিয়ে ০-০ গোলে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর জর্ডান দলের প্রথম বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হয় আরো। ৩ বার এশিয়া কাপে অংশ নেয়া জর্ডান দলের কোয়ার্টারের বাধা পেরোতে পারেনি এখনো। কাগজে কলমে তাই অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে কম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও, স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ দল।
মাত্র ক’দিন আগেই ৫-০ গোলে হেরে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরত আসা দলের মাঝমাঠের কান্ডারি জামাল ভুঁইয়াকে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী মনে হলো। ঘরের মাঠে খেলা, নাকি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র এক গোল হজম করা- কোনটি প্রত্যয় যোগাচ্ছে তা অবশ্য অজানাই রয়ে গেলো। আজ বিকেল ৫টায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী জর্ডান। বাস্তবতার নিরিখে বি গ্রুপের সব শেষ স্থানটি এড়াতে হলে বাংলাদেশ দলকে প্রায় অসম্ভব কিছু একটাই করে দেখাতে হবে আজকের এই ম্যাচে।
এ ম্যাচের আগে বাংলাদেশ শিবিরে বারবার ফিরে আসছে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটি। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল অনুমেয়ই। সেদিক থেকে উল্টো প্রথম ২৯ মিনিটে ৪ গোল খেয়ে বাংলাদেশ দলের পরে ম্যাচে ফিরে আসাটাই আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। কিন্তু আজও কি সেদিনের মত রক্ষণাত্মক কৌশল নিয়েই মাঠে নামবে ডি ক্রুইফ শিষ্যরা? প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হওয়ায়, বাংলাদেশ দলের কিছুটা রক্ষণাত্মকই খেলার কথা। কিন্তু গত ম্যাচের নেতিবাচক দিক গুলো থেকে ফিরে আসতে পারে কিনা বাংলাদেশ দল সেটিই দেখার বিষয়। আগের ম্যাচে লড়াই করার কথা বলেছিলেন মামুনুলরা। খেলা চলাকালীন বার বার পরে গিয়ে সময় নষ্ট করা, মাঠে অযথা স্ট্রেচার প্রবেশ করানো, মাঝমাঠ থেকে পাওয়া ফ্রি-কিক থেকে সরাসরি গোলবারে মারা- এই ব্যাপারগুলো ঠিক লড়াই এর সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ঠোঁটকাটা মানুষ হয়তো নেহায়েত আত্মসমর্পণ বলেই আখ্যায়িত করবেন। তবু ঘরের মাঠে আক্রমণাত্মক বাংলাদেশ দলকেই দেখতে চাইবেন দর্শকেরা। গত ম্যাচে কাউন্টার অ্যাটাকিং খেলার কৌশল নিয়ে নেমে খুব একটা সুবিধা হয়নি। সবচেয়ে বেশী সমালোচিত হয়েছিলেন এনামুল। মূল একাদশ থেকে তাঁর বদলে জাহিদকে নামানো এখন সময়েরই দাবী। আগের ম্যাচেও কেন জাহিদকে নামানো হলো না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে! পেছনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে বাংলাদেশ দল। প্রতিপক্ষ শারীরিক ও কৌশল গত দিক থেকে এগিয়ে থাকায় বাড়তি অনুশীলনে বাড়তি মনোযোগ দিতে হচ্ছে ইয়ামিন, তপু বর্মণদের। আর স্ট্রাইকারদের নিয়মিত ব্যর্থতায় গোলের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে সেট পিসের উপরে। আগের ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা সাথে ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ পারবে কি ঘুরে দাঁড়াতে? এর উত্তর “ফুটবল খেলায় সবই সম্ভব” উক্তিটির উপরেই ছেড়ে দিন।
অপরদিকে গত বিশ্বকাপে খেলতে না পারার হতাশা আরো সুসংহত করেছে এই জর্ডান দলকে। এই গ্রুপের আরেক শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়ার সাথে তাই লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে সরাসরি রাশিয়ার টিকেটের জন্য। গোল ব্যবধানও নির্ধারণ করে দিতে পারে গ্রুপের ভাগ্য। তাই বড় ব্যবধানে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে জর্ডান। শেষ দিনের অনুশীলনেও আক্রমণাত্মক খেলার আভাস পাওয়া গেলো। প্রায় সব খেলোয়াড়ই এশিয়ার উপরের সারির ক্লাবে খেলেন, ইউরোপের একজন। এ বছরের জুনে দলের দায়িত্ব নেয়া বেলজিয়ান কোচ পল পুটও আত্মবিশ্বাসী জয়ের ব্যাপারে, কিন্তু অ্যাওয়ে ম্যাচ হওয়ায় প্রতিপক্ষ র্যাংকিয়ের ১৭৩ দল হওয়া সত্বেও সমীহ করতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে।
এ ম্যাচে বাজে ফলাফল শেষ করে দিতে পারে ডি-ক্রুইফের বাংলাদেশ অধ্যায়। এ ম্যাচ থেকে ভালো কিছু অর্জন করা বাংলাদেশ দলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। ২০১৮ বিশ্বকাপ ও এশিয়াকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ দলের শেষ দু’টি হোম ম্যাচের প্রথমটি এটি। আগামী ১১ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বি গ্রুপের শেষ স্থানটি এড়িয়ে এশিয়া কাপ বাছাই পর্বে টিকে থাকতে বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচটি অনেকটাই “ডু আর ডাই” ম্যাচে রূপ নিয়েছে।