• লা লিগা
  • " />

     

    এল ক্লাসিকোর আগে ৫ প্রশ্ন

    এল ক্লাসিকোর আগে ৫ প্রশ্ন    

    রাত ৯.১৫ মিনিটে এল ক্লাসিকো মুখোমুখি বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। ন্যু ক্যাম্পের এল ক্লাসিকোর আগে জমেছে অনেক প্রশ্ন। লা লিগার দুইয়ে আছে বার্সেলোনা, কিন্তু স্বস্তিতে নেই। আটে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান ৪। জিতলেই বার্সার ধারে কাছে চলে আসবে রিয়াল, আর হেরে গেলে রিয়ালের আরও দূরে সরে যাবে বার্সা। 

    রঙ হারিয়েছে এল ক্লাসিকো?
    স্প্যানিশ লা লিগার একটা ম্যাচ, অথচ এই ম্যাচের আগে একরকম থমকেই যায় বিশ্ব। এল ক্লাসিকো বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে আরও আগেই। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে ক্লাসিকোর চাহিদা আরও বেশি। কিন্তু ১১ বছর পর এল ক্লাসিকো ফিরে যাচ্ছে পুরনো এক রূপে। যেখানে নেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসিদের কেউই। শেষ যেবার এমনটা হয়েছিল তখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফুটবল নিয়ে এখনের মতো এতো হৈ চৈ ছিল না। বাংলাদেশেও ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়মিত খবর রাখা লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোণা অল্প কয়েকজন। এল ক্লাসিকোর বৈশ্বিক এই রূপে ধারন করার পেছনে রোনালদো-মেসির দ্বৈরথের অবদান অনেকখানিই।

    রোনালদো চলে গেছেন স্পেনেরই বাইরে, জুভেন্টাসের যোগ দিয়েছেন গেল গ্রীষ্মে। আর হাত ভেঙে মেসিও নেই মাঠে। এল ক্লাসিকোর ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদো, তারাই নেই ম্যাচে! এতো তাড়াতাড়িই যে মেসি-রোনালদোবিহীন এল ক্লাসিকো দেখতে হবে তা কে ভেবেছিল? গত মে মাসে শেষ ক্লাসিকোতেও তো মনে হল এই দুইজনের ধ্রুপদী লড়াইয়ের আমলে জন্মে ধন্য আমাদের জীবন! গেল সপ্তাহে মেসির ইনজুরিটাই হুট করে দাঁড় করিয়ে দিল কঠিন এক বাস্তবতার সামনেই। যে দিনটা হয়ত এতো আগেই না আসলেও পারত!

    তাতে কি এল ক্লাসিকোর আবেদন কমেছে? রিয়াল-বার্সার দ্বৈরথ একদিনের না, সেই লড়াই রোনালদো-মেসির মধ্যেই তাই সীমাবদ্ধও নয়। এই দুইজনের অনুপস্থিতিতে অনেকদিন পর এল ক্লাসিকো যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই কথাগুলোই। ফুটবলের 'বিশুদ্ধতম' লড়াইয়ে' তাই ভাটা হয়ত পড়ছে না, তবে রঙ বদলাচ্ছে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।  

     

    মেসি-রোনালদোর জায়গা নেবেন কারা?
    রোনালদো হিসাবেই নেই। নতুন কোচ হুলেন লোপেতেগি মৌসুম শুরুর আগে থেকেই জানেন সেই কথা। তবুও রোনালদোর জায়গায় নতুন কোনো খেলোয়াড় কেনেনি রিয়াল মাদ্রিদ। মৌসুমে গড়ে যিনি ৫০ গোল করতেন তাকে ছাড়া রিয়ালের হুট করে ছন্নছাড়া দলে পরিণত হওয়ার পেছনে তাই কারণ আছে অনেক। রোনালদোর অভাবটা হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। বার্সেলোনাও অবশ্য এই মৌসুমে এখনও পর্যন্ত নিজের সেরাটা খেলতে পারেনি। মেসির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বরং বেড়েছেই আরও। যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে বার্সার ম্যাচ উৎসাহ যোগানোর কথা বার্সাকে। ২০১৫ সালে এল ক্লাসিকোতে পুরোপুরি ফিট না থাকায় দ্বিতীয়ার্ধে নেমেছিলেন মেসি। তার আগেই অবশ্য ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছিল বার্সা। ওই ম্যাচে অবশ নেইমার অবদান রেখেছিলেন বার্সার জয়ে। নেইমারের জায়গায় আসা উসমান ডেম্বেলে এখনও নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি বার্সার একাদশে। ইন্টারের বিপক্ষে ম্যাচেও মাঠে নামা হয়নি তার। উলটো রাফিনহাকে নামানোর সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বার্সেলোনার জন্য। মেসির অনুপস্থিতিতে রাফিনহা, ডেম্বেলেরা তো আছেনই, নামতে পারেন ম্যালকমও। অবশ্য এই মৌসুমে এখনও সেভাবে মাঠেই নামার সুযোগ হয়নি এ ব্রাজিলিয়ানের।

    রিয়াল কোচ হুলেন লোপেতেগি রোনালদোর অভাব পূরণ করতে চেয়েছিলেন গ্যারেথ বেলকে দিয়ে। তিনিও ভালো শুরুর পর মিলিয়ে গেছেন। মার্কো আসেনসিও ইস্কোরা তো আছেনই। তবে আপাতত রোনালদোর অভাব খুব তাড়াতাড়ি বোধ হয় কাটিয়ে ওঠা হচ্ছে না রিয়ালের। মৌসুম শুরুর আগেই সেটা আঁচ করা গিয়েছিল, রিয়ালের সাম্প্রতিক ফর্ম দিচ্ছে প্রমাণ।


     

    লোপেতেগির শেষ সুযোগ?
    এল ক্লাসিকোর আগে রিয়ালের দুরবস্থা, অতএব সতর্কবার্তা- ক্লাসিকো হারলেই হতে হবে বরখাস্ত। ফাবিও ক্যাপেলো রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে থাকার সময় ঘটেছিল এই ঘটনা। ক্যাপেলো নিজেই এসব জানিয়েছেন পরে। হুলেন লোপেতেগিও যাচ্ছেন একই সময়ের মধ্যে দিয়ে। রিয়াল মাদ্রিদের ডাগ আউটে ১৩৭ দিন কাটিয়েছেন মাত্র। মধুচন্দ্রিমার সময়ই পাননি, দলে এসেই দেখেন রোনালদো নেই। শুরুতে রিয়ালের পাসিং ফুটবল নজর কাড়ল ঠিকই, কিন্তু ধোপে টিকল না সেটা। চ্যাম্পিয়নস লিগে ভিক্টোরিয়া প্লাজেনকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হারাতেও বেগ পেতে হয়েছে রিয়ালকে। ২-১ গোলের জয়ে ৫ ম্যাচের জয়খরা কাটিয়েছে লোপেতেগির দল। তাতে বার্নাব্যুতে স্বস্তি ফেরেনি এতোটুকুও, বরং প্লাজেনের সঙ্গে জয়টা অসন্তোষ বাড়িয়েছে আরও। চাকরি টেকাতে এবারের ক্লাসিকোই হয়ত লোপেতেগির জন্য ডেডলাইন। ফল বের করতে না পারলে এই সপ্তাহেই ছাঁটাই হয়ে যাবেন- এমন জোর গুঞ্জন ভাসছে অনেকদিন ধরেই।  বার্সার কাছে হারলে লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে ১০ ম্যাচ শেষে নিজেদেরকে ১০ এর বাইরেও খুঁজে পেতে পারে রিয়াল মাদ্রিদ।

     

    গোল উৎসবের ক্লাসিকো?
    দানি কারভাহাল নেই ইনজুরির কারণে। আলভারো অড্রিয়োজোলা নামতে পারেন তার জায়গায়। কিন্তু দলের রক্ষণের কথা ভেবে আরেকটি রক্ষণাত্মক মানসিকতার নাচো ফার্নান্দেজকে নামিয়ে দিতে পারতেন রিয়াল কোচ। রিয়ালের রক্ষণে বাকি লাইন আপ অপরিবর্তিতই থাকার কথা। আর স্যামুয়েল উমতিতির ইনজুরিতে জেরার্ড পিকের সঙ্গে জুটি বাধার কথা লংলের। দুই দলের মিল আছে আরও একটি। এই মৌসুমে নিজেদের রক্ষণের দুরবস্থা ভুগিয়েছে দুই দলকেই। একদিকে রামোস, অন্যদিকে পিকে- এই দুইজনের ভুলগুলোই চোখে পড়েছে বেশি। দুই দলের দুর্বল রক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে একাধিক গোলের। যদিও রক্ষণ পেরিয়ে গেলেও বারপোস্টের নিচে দাঁড়ানো গোলরক্ষকের কয়েকটি দুর্দান্ত সেভও বদলে দিতে পারে খেলার ভাগ্য। মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান অবশ্য অতিমানবীয় ফর্মে আছেন, গোল্ডেন গ্লভস জেতা থিবো কোর্তোয়াদেরও তার আত্মবিশ্বাসের কাছে দমেই যাওয়ার কথা। 


     

    সুয়ারেজ-বেনজেমারও মান বাঁচানোর লড়াই
    মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ওপেন প্লে থেকে লুইস সুয়ারেজের গোল সংখ্যা মাত্র দুই। এই মৌসুমের প্রায় সবগুলো ম্যাচেই সুয়ারেজের ধার কমে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। মেসি, কৌতিনহোর সঙ্গে লিংক আপ প্লে দুর্দান্ত হলেও, ফিনিশের ব্যাপারে কিছুটা অমনোযোগীই হয়ে আছেন সুয়ারেজ।

    আর বেনজেমার গল্পটা অবশ্য ভিন্ন। রোনালদোর সময় তাঁকেই গোল করতে সাহায্য করা ছিল বেনজেমার কাজ। তবে রোনালদো চলে যাওয়ার পর বেনজেমাকে মূল নম্বর ৯ এর মতো খেলতে দেখার যে স্বপ্ন রিয়াল সমর্থকেরা দেখেছিল সেটা অপূর্ণই রয়ে গেছে। এখনও সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বেনজেমা। দুই নাম্বার নাইনের জন্য তাই কঠিন লড়াই। নিজেদের ক্যারিয়ার সতেজ করার মোক্ষম সুযোগও। এল ক্লাসিকোর চেয়ে বড় আসর আর কী হতে?