বাজে খেলে বড় হার বাংলাদেশের
র্যাঙ্কিংয়ের ব্যবধান, অতীত পরিসংখ্যান আর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স- সব মিলিয়ে জর্ডানের মতো দলের বিপক্ষেও বাংলাদেশের প্রত্যাশা ‘যতোটা সম্ভব কম গোল হজম করা’র দিকেই ছিল। সে বিবেচনায় ০-৪ স্কোরলাইন কি বলছে তা বিজ্ঞ পাঠকরাই বিচার করবেন। তবে শুরুটা যেমন আশা জাগানিয়া ছিল, শেষ অব্দি সেটা ধরে রাখা গেলে ফলাফল অন্যরকমও হতে পারত। না কোন অতিমানবীয় ফুটবল খেলে নয়, নিজেদের স্বাভাবিক খেলা দিয়েই গত বিশ্বকাপ বাছাইয়ের চূড়ান্ত প্লে-অফ খেলে আসা জর্ডানের বিপক্ষে চমকে দেয়া ফল পেতে পারত বেঙ্গল টাইগাররা। কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলতে হয়, অতিথিদের অগোছালো ফুটবলের সুবিধে নেয়ার পরিবর্তে সময়ের সাথে মামুনুলদের খেলার মানে কেবল নিম্নগতিই দেখা গেলো।
অনুশীলনে চোট পেয়ে শেষ মুহূর্তে প্রথম একাদশ থেকে ছিটকে পড়েন বাংলাদেশের নিয়মিত গোলরক্ষক মোহাম্মদ শহিদুল আলম সোহেল। অসুস্থতার কারণে মাঠে ছিলেন না দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসও।
খেলার সাত মিনিটের মাথায় বাংলাদেশের ডিফেন্ডার নাসিরুল ইসলামের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে আক্রমণে যান জর্ডানের ফাদেল হাসান। বক্সের ভিতর থেকে নেয়া দুর্বল শট রুখে দেন গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। খানিক বাদে আরও একটি শট বাংলাদেশের গোলবারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। এগারো মিনিটে আবদুল্লাহ দীব সালিমের বাকাঁনো ফ্রি কিক কর্নারের বিনিময়ে ফেরান লিটন। শুরুর দিকে বাংলাদেশ সেভাবে আক্রমণে যেতে না পারলেও রক্ষণদুর্গ দুর্ভেদ্য রাখার আভাসই দিচ্ছিল। তবে বারো মিনিটের মাথায় সুরটা কেটে দেন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় আতিকুর রহমান মিশু। ডি-বক্সের মধ্যে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে হাতে বল লাগিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন এই ডিফেন্ডার, পেনাল্টি থেকে জর্ডানকে এগিয়ে দেন আব্দুল্লাহ দীব সালিম।
কুড়ি মিনিটের মাথায় সমতায় ফেরার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। মামুনুলের কর্নারে ঠিকভাবে মাথা ছোঁয়াতে পারেন নি ইয়াসিন। বল চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে।
ছোট ছোট পাসে বলের নিয়ন্ত্রণ বেশ ভালোই রাখছিলেন মামুনুলরা। তবে প্রতিপক্ষের বিপদসীমায় গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলায় গোলের দেখা মেলে নি। ৩২ মিনিটের মাথায় জামাল ভুঁইয়ার লম্বা পাস থেকে বল নিয়ে জর্ডানের রক্ষণদুর্গে ঢুকে পড়েছিলেন জুয়েল রানা। তবে স্নায়ুচাপের কাছে হেরে গিয়েই কিনা, দুই ডিফেন্ডার এমনকি গোলরক্ষককে পিছনে ফেলেও গোলমুখে শট নিতে পারলেন না। দুর্বল পাসে যতক্ষণে সেন্টার ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলির দিকে বল বাড়িয়েছেন, আক্রমণ সামলে দাঁড়িয়ে গেছেন জর্ডানের গোলরক্ষক।
পরের মিনিটেই পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করে জর্ডান। তবে যেভাবে গোল হল তাতে প্রতিপক্ষের কৃতিত্বের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যর্থতাই বেশী। ডি-বক্সের মধ্যে বল ক্লিয়ার করায় মাত্রাতিরিক্ত সময় নেয়ার খেসারতটা আরও এক গোল হজম করেই দিতে হল। জোরালো শটে এ যাত্রায় লক্ষ্যভেদ করেন মান্দার আবু আমারা।
৪৪ মিনিটে প্রায় একক প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষের রক্ষণ দুর্গ ভেঙেছিলেন জুয়েল রানা। এ যাত্রায় গোলরক্ষককে একা পেয়েও দুর্বল শটে বল পাঠান প্রান্তরেখার বাইরে।
বিরতির পর মাঠে নেমে প্রাথমিকভাবে মাঝমাঠের দখল নিতে চেষ্টা করে বাংলাদেশ। পাল্টা আক্রমণে একাধিকবার বল নিয়ে উপরে উঠেও শেষ মুহূর্তে বারবার খেই হারিয়ে ফেলেন জুয়েল রানা। সময়ের সাথে যেন প্রথমার্ধের তেজটুকুও হারিয়ে ফেলতে থাকে বাংলাদেশ। এলোমেলো পাস, লক্ষ্যবিহীন শটে খেলার মান কেবল অবনতির দিকেই গড়াচ্ছিল। অগোছালো ফুটবলের মাশুল দিয়ে ৫৭ মিনিটের মাথায় আরও একবার পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। আব্দুল্লাহ দীব সালিমের মাঝারি গতির শট বাংলাদেশের একাধিক ডিফেন্ডার, গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। মিনিট দুয়েক বাদে বাংলাদেশের এলোমেলো রক্ষণদুর্গ ভেঙ্গে ব্যবধান আরও বাড়ান ইয়াসিন আল বাখত।
খেলার শেষভাগে ডিফেন্ডার মিশুর বদলি হিসেবে নেমে ৮০ মিনিটের দিকে ক্ষিপ্র গতিতে বল পায়ে বিপদসীমায় ঢুকেছিলেন বাতেন মজুমদার কমল। তবে দুর্বল শটে রক্ষণদুর্গ পুরোপুরি ভেদ করতে ব্যর্থ হন তিনি। খানিক বাদে ডি-বক্সের মধ্যে সুবিধেজনক জায়গায় ক্রস পাসে বল পেয়েও গোলরক্ষকের হাতে তুলে দেন এমিলি। ব্যবধান কমানোর শেষ সুযোগটুকুও সেখানেই হারায় বাংলাদেশ।
এক ড্র আর তিন হারে এশিয়ান বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বে গ্রুপ-বি’তে একেবারে তলানিতে রয়েছে বাংলাদেশ। অপরদিকে ৩ জয়, এক ড্র থেকে ৭ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে গ্রুপে সবার উপরে অবস্থান জর্ডানের।
আগামী ১৩ই অক্টোবর কিরগিজস্তানের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের মাঠে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে মামুনুল বাহিনী।