পিএসজিকে আটকে দিয়ে সবার ওপরে নাপোলি
চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ 'সি' এ তিন দলের লড়াই যেমন হওয়ার কথা ছিল, তেমনটাই হচ্ছে। নাপোলি-পিএসজি প্রথম লেগের পর, দ্বিতীয় লেগের খেলা হয়েছে ড্র, সান পাওলোতে এবার খেলার ফল ১-১। রেডস্টার বেলগ্রেডকে হয়ত শুরুতেই বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন অনেকে, কিন্তু তারাও বাদ যাচ্ছে না। লিভারপুলকে ২-০ গোলে হারিয়ে সার্বিয়ার দল আরও জমিয়ে তুলেছে এই গ্রুপের দলগুলোর দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সমীকরণ। চার ম্যাচ শেষে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এই গ্রুপের সবার ওপরে উঠে গেছে নাপোলি। দুইয়ে থাকা লিভারপুলের পয়েন্টও সমান, তবে হেড টু হেডে পিছিয়ে তারা। তিনে থাকা পিএসজির পয়েন্ট ৫, আর রেডস্টার চারে আছে ৪ পয়েন্ট নিয়ে।
ইতালিতে নাপোলি-পিএসজির খেলা ড্র হয়েছে, তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উত্তেজনার কমতি ছিল না। প্রথমার্ধে অবশ্য ঘরের দল মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। নেইমার-এমবাপ্পে-ডি মারিয়ারাই নাপোলির রক্ষণকে তটস্থ করে রেখেছিলেন। থমাস টুখলের দল রক্ষণের দিক দিয়েও ছিল দৃঢ়। অবশ্য নিশ্চিতভাবে গোলের সুযোগ তৈরি করতে পিএসজিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রথমার্ধের একেবারে শেষ পর্যন্ত। আর বল দখলের লড়াইয়ে হিমশিত খেতে থাকা নাপোলিও হাফ-চান্স থেকে সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় পিএসজির প্রথমার্ধ সন্তোষজনকই ছিল টুখলের জন্য। মারিও রুইয়ের ফ্রি কিক থেকে ড্রিস মার্টেনসের পায়ে লেগে বল ঢুকতে পারত পিএসজির জালে, ৪৫ মিনিটে লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে নিজেই দারুণ কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন- সেটাও গেছে বাইরে দিয়ে। বল পজেশনে এগিয়ে থেকেও এমবাপ্পে-নেইমাররা প্রথমার্ধে গোল শট নিতে পারেননি আসলে নাপোলির রক্ষণের কারণেই। বিশেষ করে ডিফেন্ডার কুলিবালি একাই পিএসজির বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা থামিয়ে দেন বিপদ হওয়ার আগেই। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোল পাওয়া থেকে পিএসজিকে আর বঞ্চিত করতে পারেনি নাপোলি।
রেফারি অ্যাডিশনাল টাইম দিয়েছিলেন ১ মিনিট। ক্ষীপ্র গতিতে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন এমবাপ্পে। নাপোলির ডিফেন্স লাইন ভেঙে নিজের গতি কাজে লাগিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকবার ঢুকেছিলেন ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ড, তবে এবার জায়গা মতো পেলেন হুয়ান বের্নাটকে। ডিবক্সের ভেতর থেকে বল পেয়ে রিসিভ করে, ঠান্ডা মাথায় বাকি কাজটা সারেন পিএসজি মিডফিল্ডার। পিএসজি গোল পেয়েছিল অ্যাডিশনাল টাইমের ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে। সেটা নিয়ে বিরতির আগেই রেফারির সঙ্গে এক দফা বাগ-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন নাপোলির খেলোয়াড়েরা। দ্বিতীয়ার্ধে নাপোলির বদলে যাওয়ার রহস্য বোধ হয় ওই 'মাথা গরম' করা থেকেই।
প্রথমার্ধে নিজেদের খোলসের ভেতর ঢুকে থাকা নাপোলি এরপর নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখে। প্রেসিং থেকে শুরু করে সরাসরি আক্রমণে যাওয়া- সবকিছু বদলে নিজেদের চেহারাই পালটে ফেলে কার্লো আনচেলত্তির দল। ৫০-৫৭ মিনিটের মধ্যে জিয়ানলুইজি বুফনকে মোট পাঁচবার পরীক্ষা দিতে হয়। ৫১ আর ৫২ মিনিটে মার্টেনসকেই দুইবার থামান বুফন। প্রথমবার গ্রাউন্ড শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেলে দেন বাইরে, পরেরবার উড়ে আসা বল উঠিয়ে দেন বারপোস্টের বাইরে। গোলরক্ষকের সঙ্গে পিএসজির ডিফেন্ডাররা ছিলেন সজাগ। হোসে মারিয়া ক্যালেয়হনের গোলমুখী শট একবার ব্লক করেন থিলো কেহরের। ক্যালেয়হনকে পাসটা দিয়েছিলেন মার্টেনসই। এই জুটি মিলিয়েই আবারও আক্রমণে ৫৪ মিনিটে। ক্যালেয়হনকে প্রথমে বুফন গোলবঞ্চিত করেন, এরপর ফিরতি বলে মার্টেনসের সামনে ছিল ফাঁকা বারপোস্ট। থিয়াগো সিলভার দুর্দান্ত একটি ব্লকে সে দফায়ও খালি হাতে ফেরেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে এই পুরোটা সময়ই আধিপত্য ছিল নাপোলির। কাউন্টার অ্যাটাকেও পিএসজিকে আটকে দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপটা জিইয়ে রেখে ঘরের দলের ম্যাচে ফেরাটা ছিল সময়ের ব্যাপারই। তবে ৫৭ মিনিটে আরও একবার ফাবিয়ান রুই বুফনের কাছে আটকে গেলে খানিকটা হতাশই হয় নাপোলিকে।
সেই হতাশা কাটে ৬৩ মিনিটে। আর ইতালিতে ফিরে বুফনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সটাও যেন ঢাকা পড়ে তাতে কিছুক্ষণের জন্য। সেই ক্যালেয়হনই ঢুকে পড়েছিলেন ডিবক্সের ভেতর। বুফন আর সিলভা দুইজন মিলেই আটকাতে গিয়েছিলেন তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উল্টো ফাউল করে নাপোলিকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ করে দেন বুফন।
দ্বিতীয়ার্ধে নাপোলির ফিরে আসার মূল কারিগর লরেঞ্জ ইনসিনিয়ে ভুল করেননি স্পটকিক নিতে। বুফন ঠিক দিকেই ঝাপ দিয়েছিলেন, কিন্তু ইনিসিনিয়ের নেওয়া নিখুঁত পেনাল্টি কিকে গোলই লেখা ছিল। পিএসজির ওপর চাপ প্রয়োগের সুফল পেয়ে সান পাওলোতে নাপোলি সমর্থকদের উযাপন বাড়ে দ্বিগুণ। অবশ্য এরপর কিছুটা থিতিয়েই যায় নাপোলির আক্রমণ। বাকি সময়ে বরং পিএসজিই জয়টা বোতলবন্দী করে প্যারিসে রওনা হতে পারত। ৭০ মিনিটে বের্নাটকে ফাউল করার অপরাধে অবশ্য পেনাল্টি দিয়ে খেসারত দিয়ে হয়নি নাপোলিকে। আর খেলা শেষের ৫ মিনিট আগে এমবাপ্পের শট অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে গেলে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বও জাহির করা হয়নি পিএসজির। এর মাঝের সময়ে সাবেক নাপোলি স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানিকেও নামিয়েছিলেন টুখল। সান পাওলোতে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনাই জানিয়েছেন নাপোলি সমর্থকেরা। বাকি সময়ে তিনিও দুয়ো শোনার মতো কিছু করতে পারেনি।