• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লিভারপুলের সহজ জয়; চেলসি-আর্সেনালের ড্র

    লিভারপুলের সহজ জয়; চেলসি-আর্সেনালের ড্র    

    সালাহ শাকিরির গোলে লিভারপুলের জয়

    গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর তার থেকে প্রত্যাশার পারদটা আর উঁচুতে উঠে যায় লিভারপুল সমর্থকদের। ২০১৮-১৯ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের শুরুটা দারুণ হলেও ঠিক আগের ফর্মটা ফিরে পাচ্ছিলেন না মোহাম্মদ সালাহ। দল ছন্দে থাকলেও সালাহর এমন ফর্মে কিছুটা হতাশই ছিলেন সমর্থকেরা। কিন্তু আজ ফুলহ্যামের বিপক্ষে অ্যানফিল্ডে যেন দেখা মিলল সেই পুরনো সালাহর, যার দুর্দান্ত ফর্ম ছিল লিভারপুলের গত মৌসুমের অন্যতম 'হাইলাইট'। গোল করলেন, খুব সম্ভবত খেললেন মৌসুমে এখন পর্যন্ত নিজের সেরা ম্যাচটাও। আর্সেনালের বিপক্ষে গত সপ্তাহে ড্রয়ের পর নিজেদের মাঠে ফুলহ্যামকে ২-০ গোলে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরল লিভারপুল। প্রিমিয়ার লিগে খেলা ২১ দলের মধ্যে ১৯টির বিপক্ষে জাল খুঁজে পেলেন সালাহ।

    অ্যানফিল্ডে ম্যাচের শুরুটা দারুণ আক্রমণাত্মকই ছিল লিভারপুলের। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে মোহাম্মদ সালাহ, সাদিও মানে এবং রবার্তো ফিরমিনোর সাথে আক্রমণে নেমেছিলেন জেরদান শাকিরি। ম্যাচের প্রথম সুযোগটাও পেয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু ৪ মিনিটে তার দারুণ শটটি দক্ষহাতে ফিরিয়ে দেন সার্জিও রিকো। তবে থেমে থাকেনি লিভারপুল। ইয়ুর্গেন ক্লপের স্বভাবসুলভ আক্রমণজোয়ারে ভাসায় ফুলহ্যামকে। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ান রিকো। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিটেই অন্তত তিনটি নিশ্চিত গোল ফিরিয়ে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক। 'বাস-পার্ক' ট্যাকটিক্সে খেললেও লিড নেওয়ার সবচেয়ে দারুণ সুযোগটা পেয়েছিল ফুলহ্যাম। ২৪ মিনিটে আলেকজান্ডার মিট্রোভিচের পাস থেকে লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে একা পেয়ে যান রায়ান সেসেনিওন। কিন্তু তার শট চলে যায় লিভারপুল গোলের বাইরে দিয়ে। এর মিনিট পাঁচেক পর আবারও সুযোগ পায় ফুলহ্যাম। কিন্তু এবার আন্দ্রে শুর্লের জোরাল শটটি ফিরিয়ে দেন অ্যালিসন। প্রথমার্ধ যখন গোলশূন্য ড্রয়ের দিকে ধাবমান, তখনই মাত্র ১৪ সেকেন্ডে ওলট-পালট হয়ে যায় ফুলহ্যামের আশা-ভরসা।

    ৪১ মিনিটে মিট্রোভিচের হেড জালে জড়ালেও অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোল। যদিও রেফারির সিদ্ধান্ত ভুলই ছিল। সেই ভুলে ফুল ফোটে লিভারপুলের। ফুলহ্যাম উদযাপনে ব্যস্ত থাকার সময়ই ফ্রিকিক নেন অ্যালিসন। ডানপ্রান্তে বল পেয়ে যান সালাহর উদ্দেশ্যে থ্রু বাড়ান ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ড। রিকোকে একা পেয়ে আর ভুল করেননি সালাহ। এক মিনিটেরও কম সময়ে হতাশার চাদর ছেড়ে উল্লাসের জোয়ারে ভেসে উঠে অ্যানফিল্ড।

     

     

    সালাহর গোলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও দারুণ হয় লিভারপুলের। ৫২ মিনিটে মানের আগুনে শট রিকো ফিরিয়ে দিলেও ৫৩ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি ফুলহ্যামের। বাঁ-প্রান্ত থেকে অ্যান্ডি রবার্টসনের ক্রস আলতো ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন শাকিরি। এই গোলের পরই মূলত ম্যাচে ফেরার আশা শেষ হয়ে যায় ফুলহ্যামের। মিলিয়ে যায় এতক্ষণ ধরে তাদের ম্যাচে ফেরার দৃঢ়প্রতিজ্ঞাও। সুযোগ বুঝে আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় লিভারপুলও। কিন্তু রিকোকে আর পরাস্ত করা সম্ভব হয়নি। মাঝমাঠে জাঁ-মাইকেল সেরিকে নামানোর পর নিজেদের কিছুটা গুছিয়ে নেয় ফুলহ্যাম। কিন্তু অ্যালিসনকে তেমন পরীক্ষাতেই ফেলতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটা সময় কিছুটা গা বাঁচিয়ে খেললেও শেষমেশ হেসেখেলেই ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাথ ছেড়েছে ক্লপের দল।  



    সারির রেকর্ডে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন পিকফোর্ড

    স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ম্যাচের শুরু থেকেই অন্য ম্যাচগুলোর মত বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল চেলসিই। তবে মার্কো সিলভার এভারটনের বিপক্ষে খুব একটা কাজে দেয়নি 'সারি বল'। আক্রমণের চেয়ে মাঝমাঠের দখল নিজেদের করে নিতেই ব্যস্ত ছিল দু'দল। প্রথমার্ধে সবচেয়ে বেশি সময় বল পায়ে কাটিয়েছেন চেলসির মাতেও কোভাচিচ, জর্জিনহো এবং এভারটনের গিলফি সিগুর্ডসনরা। কিন্তু ফরোয়ার্ডের বল যোগাতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছেন তারা। ম্যাচের গোলের প্রথম সুযোগই  এসেছে  খানিকটা দেরি করেই, ৪০ মিনিটে। উইলিয়ানের ফ্রিকিকে মার্কোস আলোন্সোর দুর্দান্ত ভলি দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন এভারটন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। প্রথমার্ধের শেষদিকটা ছিল বিতর্কে ঠাসা। ডিবক্সে এভারটন ডিফেন্ডার মাইকেল কিন, আলভারো মোরাতাকে ফেলে দিলেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। এর মিনিটখানেক পর আবারও বল দখলের লড়াইয়ের মাঝে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন এভারটনের বার্নার্দ এবং অ্যান্টোনিও রুডিগার। এমন সময় বার্নার্দ, রুডিগারকে ঢুঁশ দিলেও দুজনকেই হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। পরপর দুটি সিদ্ধান্ত নিজেদের বিপক্ষে যাওয়ায় প্রথমার্ধ শেষে রেফারির ওপর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের অসন্তোষটা বোঝা যায় স্পষ্টই। 

     

     

    অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে চেলসি। ৪৬ মিনিটেই লিড নিতে পারত তারা। কিন্তু এবারও চেলসিকে খালি হাতেই ফিরিয়ে দেন পিকফোর্ড। এর মিনিট পাঁচেক পর উইলিয়ানের পাস থেকে হ্যাজার্ডের ক্রস অল্পের জন্য নাগাল পাননি মোরাতা, নাহলে তখনই লিড নিত চেলসি। সারির দলের আক্রমণ সামলে দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল এভারটন। ৫৯ মিনিটে সিগুর্ডসনের ক্রস নিয়ন্ত্রণেই আনতে পারেননি লুকাস ডিনিয়ে, আনলে চেলসি গোলরক্ষক কেপাকে একা পেয়ে যেতেন তিনি। 'এন্ড টু এন্ড' ফুটবলে তখন সুযোগ পাচ্ছিল দু'দলই। কিন্তু পিকফোর্ড যেন দুর্ভেদ্য দেয়াল। হ্যাজার্ড, উইলিয়ানদের ফিরিয়ে দিয়েছেন দারুণভাবে। ৬৫ মিনিটে পিকফোর্ডকে পরাস্ত করলেও আলোন্সোর শট বারপোস্টে প্রতিহত হওয়ায় লিড নেওয়া হয়নি চেলসির। ৭২ মিনিটে অবশেষে বল ঠিকই জালে পাঠিয়েছিলেন মোরাতা, কিন্তু অফসাইডের কারণে আবারও ফিরতে হয়েছে দীর্ঘশ্বাস নিয়েই।

    শেষ পর্যন্ত ভাগ্য এবং পিকফোর্ডের কাছে হার মেনে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সারির দলকে। চেলসি জিততে না পারলেও দারুণ এক রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন সারি। আজকের ম্যাচ নিয়ে ইপিএল-এ টানা ১২ ম্যাচ অপরাজিত থাকলেন তিনি, যা চেলসির প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে একজন ম্যানেজারের সেরা সূচনা। 

    শেষ মুহূর্তের গোলে আর্সেনালের ড্র 

    ঘরের মাঠে উল্ভারহ্যাম্পটনের কাছে হারটাই তখন সম্ভাব্য ফলাফল মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আর্সেনালের ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হন হেনরিখ মিখিতারিয়ান। মিখিতারিয়ানের অন্তিম মুহূর্তের গোলেই উল্ভারহ্যাম্পটনের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে আর্সেনাল। ১৩ মিনিটে উল্ভারহ্যাম্পটনকে এগিয়ে দেন ইভান কাভালেরিও। পড়ে গোলের অনেক চেষ্টা করলেও সমতা আনতে পারছিল না উনাই এমেরির দল। অবশেষে ৮৬ মিনিটে সমতাসূচক গোল করে আর্সেনাল ডাগআউটে স্বস্তি ফেরান মিখিতারিয়ান।