দুর্দান্ত টটেনহামে অসহায় চেলসি
মাউরিসিও সারির অধীনে এই মৌসুমে অপরাজিত ছিল চেলসি। ম্যানচেস্টার সিটি, লিভারপুল তাদের সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে জয় দিয়ে। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগে অপরাজেয় দলের সংখ্যা তিন থেকে দুইয়ে নামিয়ে আনল টটেনহাম হটস্পার। ওয়েম্বলিতে চেলসি হেরেছে ৩-১ গোলে।
এই মৌসুমে ছন্দ হারিয়ে নিজেদের খুঁজছিল টটেনহাম। চেলসির বিপক্ষে অবশেষে দেখা মিলল মাউরিসিও পচেত্তিনোর দুর্দান্ত দলের। চেলসিকে শুরু থেকেই অসহায় বানিয়ে ১৬ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে যায় স্পার্স। ওয়েম্বলিতে টটেনহামের জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন হিউ মিং সন ও হ্যারি কেইন। অবশ্য শুরুটা ডেলে আলির হাত ধরে। ৮ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের ফ্রিকিক থেকে হেডে গোল করে টটেনহামকে এগিয়ে দিয়েছিলেন আলি। এরপর দ্বিতীয় গোলের আগে আরও দুইবার চেলসির রক্ষণ কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন সন। প্রথম দফায় এরিকসেনের সঙ্গে ওয়ান টু করে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে লক্ষ্যে মারতে পারেননি শট। পরেরবার অবশ্য দারুণ এক শট করেছিলেন গোলবারের কোণাকুণি জায়গা থেকে, কিন্তু চেলসি গোলরক্ষক কেপার দারুণ সেভে আর তখন গোল পাওয়া হয়নি সনের।
চেলসির আক্রমণ পুরো ম্যাচেই ছিল মন্থর। সারির শিষ্যরা পুরো ম্যাচেই ধুঁকেছেন, রক্ষণের অবস্থা ছিল আরও বাজে। ১৬ মিনিটে সেই সুযোগেই দুই গোলের লিড নিয়ে ম্যাচ তখনই নিজেদের পক্ষে নিয়ে যান কেইন। ইংলিশ স্ট্রাইকার শট করেছিলেন ডিবক্সের বাইরে থেকে, ডেভিড লুইজ গোলরক্ষকের আশায় শট ব্লক করার বদলে ছেড়ে দিয়েছিলেন জায়গা। কিন্তু কেপা ততোক্ষণে বদলে ফেলেছেন নিজের অবস্থান, পরে কেইনের সেই শট সোজা ঢোকে চেলসির গোলে। প্রথমার্ধটা চেলসির জন্য হতে পারত আরও ভয়ঙ্কর। সেন্টার থেকে টবি অ্যাল্ডারওয়াইরেল্ডকে ঠেকিয়ে ৩০ মিনিটে একবার চেলসিকে রক্ষা করেন কেপা। এরপর বিরতির ঠিক আগে সনের ভলিও গোলে পরিণত হতে দেননি স্প্যানিশ গোলরক্ষক।
কেপা অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে খুব বেশিক্ষণ আটকে রাখতে পারেননি সনকে। ডানদিক থেকে আক্রমণ শুরু করে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে দুর্দান্ত এক ফিনিশে গোল করে ৫৪ মিনিটেই ব্যবধান ৩-০ করেন সন। একপ্রান্তে যখন গোলের পর গোল, অন্যপ্রান্তে হুগো লরিস তখন অবসর সময়ই কাটিয়েছেন। ৩৮ মিনিটে এডেন হ্যাজার্ড শট সেভ করা বাদে তেমন কিছুই করতে হয়নি টটেনহাম অধিনায়ককে। তবে প্রথমার্ধে একটি পেনাল্টি পেতেও পারত চেলসি। এক গোলে পিছিয়ে থাকার সময় হ্যাজার্ডকে ডিবক্সের ভেতর ফেলে দিয়েছিলেন ফয়েথ। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারকে অবশ্য শাস্তি পেতে হয়নি, রেফারির চোখে পেনাল্টি দেওয়ার মতো কিছু মনে হয়নি ওই ঘটনা।
তিন গোলে এগিয়ে থেকেও আলি, কেইনরা আক্রমণেই ধার বাড়িয়েছেন। ভাগ্য ভালো থাকলে হয়ত জয়ের ব্যবধানটা আরও বড়ই হত টটেনহামের। শেষদিকে বদলি নেমে চেলসির হয়ে এক গোল শোধ দিয়েছিলেন অলিভিয়ের জিরু। তাতে অবশ্য খুব বেশি কিছু যায় আসেনি স্পার্সের। ১৩ ম্যাচ শেষে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে চেলসিকে টপকে গেছে পচেত্তিনোর দল। ৩১ বছর পর লন্ডনের প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসির বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ জয়ের স্বস্তিও সঙ্গী হয়েছে তাদের। আর সারির দল মৌসুমে এক ম্যাচ হেরেও নেমে গেছে ৪ এ।
প্রিমিয়ার লিগের ১৩ ম্যাচ শেষে শীর্ষ দুই স্থানে অবশ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। লন্ডন স্টেডিয়ামে ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনির দলকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি আছে সবার ওপরে। ডেভিড সিলভা, রাহিম স্টার্লিং, লিরয় সানের গোলে প্রথমার্ধেই ৩-০ তে এগিয়ে ছিল সিটিজেনরা। পরে সানে করেছেন নিজের দ্বিতীয় গোল। সিটির চেয়ে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা লিভারপুলকে অবশ্য জয়ের জন্য লড়াই করতে হয়েছিল ওয়াটফোর্ডের মাঠে। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের জয় পেলেও, জর্ডান হেন্ডেরসন মাঠ ছেড়েছেন লাল কার্ড দেখে। এর আগেই অবশ্য মোহামেদ সালাহ ও ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ডের গোলে ২-০ তে এগিয়ে ছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। দশ জনের দল নিয়েও পরে জয়ের ব্যবধান বাড়িয়েছে লিভারপুল। ৮৯ মিনিটে রবার্তো ফিরিমিনো করেছেন শেষ গোলটি। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অবশ্য রাতটা মোটেই সুখের হয়নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য। ঘরের মাঠে হোসে মরিনহোর দল গোলশূন্য ড্র করেছেন ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে।