রোমাকে আফসোসে পুড়িয়ে রিয়ালের জয়
চেঙ্গিস উন্ডার ভুলটা না করলে হয়ত গল্পটা বদলে যেতে পারত। প্রথমার্ধে যেমন দাপট দেখিয়েছিল রোমা, এরপর রিয়াল মাদ্রিদের জয়টা প্রায় অসম্ভবই মনে হয়েছিল। রিয়াল সুযোগও দিয়েছিল রোমাকে, কিন্তু সেগুলো লুফে নিতে না পারার চরম খেসারত দিতে হয়েছে রোমাকে। রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে খেলার দুই অর্ধ গেছে দুইরকম। প্রথমার্ধ ছিল রোমার, কিন্তু তারা থাকল গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালের রাজত্ব, কিন্তু সেই সুযোগে তারা করেছে দুই গোল। রাতের প্রথম ম্যাচে গ্রুপের অন্য খেলায় সিএসকে মস্কো হেরে যাওয়ায়, রিয়াল রোমা দুইদলের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। রোমাকে হারিয়ে রিয়াল শুধু নিশ্চিত করেছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা।
নিজেদেরকে অবশ্য ভাগ্যবানই ভাবতে পারে রিয়াল মাদ্রিদ। রক্ষণে রিয়ালের নড়বড়ে দশার দেখা মিলেছে রোমেও। রোমার আক্রমণের তোড়ে বেশ কয়েকবার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল রিয়ালের রক্ষণ। প্রথমার্ধে অন্তত পাঁচবার দারুণ কিছু সুযোগ তৈরি করেও রোমা লিড নিতে পারেনি আসলে ফরোয়ার্ডদের হেলায়। ১৭ মিনিটে চেঙ্গিস উন্ডারের ক্রসের সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে পারলে স্টিফেন এল শারাউই কাঙ্ক্ষিত লিডটা এনে দিতে পারতেন রোমাকে। শারাউইয়ের রাতটা অবশ্য এরপর আর খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি, ইনজুরি নিয়ে প্রথমার্ধেই জাস্টিন ক্লাইভার্টের বদলি হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাকে। কিছুক্ষণ পর অ্যালেক্সান্ডার কোলারোভের নিখুঁত ক্রস থেকেও বল রিয়ালের জালে ঢোকাতে পারেননি প্যাট্রিক শিক। ম্যাচের আধঘন্টা পার হওয়ার কিছু সময় পর রিয়ালকে পার করতে হয় আরও বেশ কয়েকটি অস্বস্তিকর মুহুর্ত। রাফায়েল ভারান, দানি কারভাহালদের সতর্ক ডিফেন্ডিংয়ের সঙ্গে থিবো কোর্তোয়ার দারুণ এক সেভ মিনিট খানেকের ব্যবধানে রোমার দুইটি আক্রমণ গোলে পরিণত হতে দেয়নি। ৩৩ মিনিটে প্রথমে কর্নার থেকে বল ক্লিয়ার করে গোলের সামনে থাকা কস্তাস মানোলাসকে বল পেতে দেননি ভারান। ফিরতি কর্নার থেকে আবার ফ্রেডেরিকো ফাজিওর শট ব্লক করেন কারভাহাল, ফিরতি বলে কোর্তোয়া খালি হাতে ফেরান শিককে।
আর সেরা সুযোগটা হাতছাড়া করেছিলেন উন্ডার। প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে তার্কিশ ফরোয়ার্ডের সঙ্গী হয়েছে গ্লানি। মৌসুমের সেরা গোল মিসের তালিকায় ঢুকে গেছে সেটা। কারভাহাল ডানপ্রান্তে ভুলটা করেছিলেন নিজের অর্ধে। সেখান থেকে বল পেয়ে শিক ক্রস করলেন, গোলবারের সামনে ফাঁকায় ছিলেন উন্ডার। ওরকম জায়গায় থেকে গোল মিস করার চেয়ে গোল করা ছিল ঢের সহজ কাজ। কঠিন কাজটাই করলেন উন্ডার। নিচ দিয়ে না মেরে, ফাঁকা বারে বল মারলেন আকাশে।
ওই মিসটাই পরে ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থেকেছে। প্রথমার্ধে লুকা মদ্রিচের একটি শট ঠেকানো বাদে তেমন বেগ পেতে হয়নি রবিন ওলসনকে। কিন্তু বিরতির পর রমরমা সেই রোমাকেই ভোগাল রিয়াল। ওলসনের ভুল থেকে শুরু, এরপর ভুল করলেন ডিফেন্ডার ফাজিও। ডিবক্সের সামনে ফাঁকায় ছিলেন বেল, প্রতিপক্ষের কাছ থেকে উপহার পেয়ে বাকি কাজ সেরেছেন তিনি নিখুঁত ফিনিশে। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই গোল করে রোমার মুখের সামনে থেকে এরপরই খেলাটা নিজেদের করে নেয় রিয়াল। ৫৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটা পেতেও খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি সান্তিয়াগো সোলারির দলকে। শর্ট কর্নার নিয়েছিলেন মদ্রিচ, বেল এরপর ডিবক্সের ভেতর করেছেন ক্রস। ফারপোস্টে, হেডে বল নামিয়ে দিয়েছিলেন করিম বেনজেমা। এরপর সহজ ট্যাপ ইনে গোল করেন লুকাস ভাসকেজ।
দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে একরকম হালই ছেড়ে দিয়েছিল রোমা। স্ট্রাইকার এডেন জেকোর অভাবটা হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছে তারা। ৬৬ মিনিটে আরও একবার সেটা প্রতিফলিত হল রোমার খেলায়। ক্লাইভার্ট ক্রস করেছিলেন ডিবক্সের ভেতর ডানদিক থেকে। জায়গামতো থাকল একটি সহজ গোল পেতে পারতেন শিক, সেই কাজটাও তিনি করতে পারেননি ঠিকমতো। এর আগেই অবশ্য খেলা চলে গিয়েছিল রিয়ালের নিয়ন্ত্রণে। মদ্রিচ, ক্রুসরা মাঝমাঠ শাসন করেছেন অনায়াসে। মার্সেলো একটা সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তিন গোলের লিডটাও পাওয়া হত রিয়ালের। বদলি হয়ে নামা মারিয়ানো ডিয়াজও ঝলক দেখাতে পারেননি বাকি সময়ে। আর ইস্কোর সঙ্গে সোলারির ঝামেলাটা টের পাওয়া গেছে আরেকটু স্পষ্ট করেই, স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকে দলেই রোমার বিপক্ষে দলেই রাখেননি তিনি।
এই মাঠেই চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের প্রথম গোলটা করেছিলেন সোলারি। ১৮ বছর পরেও সেখান থেকে তিনি ফিরলেন সুখস্মৃতি নিয়ে। কিন্তু রাতের শুরুটা ফ্রান্সেস্কো টট্টির জন্য ছিল শেষটা তেমন হল না। হল অফ ফেমে জায়গা করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সেরেছিলেন ম্যাচ শুরুর আগে। কিন্তু ম্যাচ শেষে আর হাসিমুখে বাড়ি ফেরা হয়নি তার। রোম পুড়েছে আফসোসে।