• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মেসির রেকর্ডের রাতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বার্সা

    মেসির রেকর্ডের রাতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বার্সা    

    শেষ ষোলর টিকেট নিশ্চিত হয়েছিল আগের রাউন্ডেই। নেদারল্যান্ডসে জিতলে নিশ্চিত হত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াও- এমন সমীকরণ নিয়ে পিএসভি আইন্দহোভেনের মুখোমুখি হয়েছিল এফসি বার্সেলোনা। ডাচ চ্যাম্পিয়নদের প্রেসিংয়ে যখন কিছুটা চাপে বার্সা, ঠিক তখনই আবারও ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন তিনি। গোল করলেন, করালেন, এবং নিশ্চিত করলেন দলের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও। চ্যাম্পিয়নস লিগে আরও এক লিওনেল মেসিময় রাতে পিএসভিকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বার্সা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে (১০৫, রিয়াল মাদ্রিদ) টপকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে যেকোনো এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা নিজের করে নিলেন 'লিও'।

    আজ বার্সার মূল একাদশে বেশকিছু পরিবর্তন এনেছিলেন এর্নেস্তো ভালভার্দে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচের পর মূল একাদশে ফিরেছিলেন উসমান ডেম্বেলে, ইভান রাকিটিচ, ফিলিপ কুতিনিয়োরা। লুইস সুয়ারেজবিহীন বার্সাকে ম্যাচের শুরু থেকেই চেপে ধরেছিল ডাচ চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের ৪ মিনিটেই পেরেইরোর কর্ণার থেকে লুক ডি ইয়ংয়ের শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগান। ম্যাচের ১৬ মিনিটে ভাগ্য সহায় হলে ঠিকই লিড নিতে পারত তারা। কিন্তু প্রায় ২০ গজ থেকে পেরেইরোর জোরাল শট প্রতিহত হয় বার্সার বারপোস্টে। পিএসভির এমন চাপে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেললেও নিজেদের গুছিয়ে নেয় বার্সা। ১৮ মিনিটে কুতিনিয়োর শট গোলের গজখানেক বাইরে দিয়ে না গেলে লিড নিত বার্সাই।

     

     

    পিএসভিও দমে যাওয়ার পাত্র নয়। ২৪ মিনিটে হার্ভিং লোজানো এবং ডি ইয়ং সহজ সুযোগ হাতছাড়া করায় আবারও লিড নিতে ব্যর্থ হয় সাবেক বার্সা মিডফিল্ডার মার্ক ভ্যান বমেলের দল। নিতান্তই নিয়মরক্ষার ম্যাচ হলেও ডাচ কিংবদন্তীর জন্য আজকের ম্যাচটি ছিল বিশেষ কিছুই। দুই ক্লাবেই যে খেলেছেন খেলোয়াড়ি জীবনে! তবে আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ হলেও দু'দলের কেউই কাউকে ছাড় দেয়নি বিন্দুমাত্র। ৩৬ মিনিটে পরপর দুবার আর্তুরো ভিদালের দুটি শট লাইন থেকে ফিরিয়ে দেন ফিলিপ রোসারিও। গোলের সুযোগের বিচারে ভাগ্যকে দুষতেই পারে পিএসভি। প্রথমার্ধের একেবারে শেষদিকে ডি ইয়ং এবং ডামফ্রাইয়ের দুটি প্রচেষ্টাই ফিরে আসে বারপোস্টে প্রতিহত হয়ে। গোলশূন্য প্রথমার্ধে তাই পিএসভি নয়, নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতে পারে বার্সাই।

     

     

    প্রথমার্ধে কিছুটা 'ব্যাকফুট'-এ থাকা বার্সা নিজেদের গুছিয়ে নেয় দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই। সার্জিও বুস্কেটস, আর্তুরো ভিদালদের গোছানো পাসিংয়ে ছন্দে ফেরে কাতালানরা। লিডটা নিতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। ৬১ মিনিটে উসমান ডেম্বেলের সাথে দুর্দান্ত 'ওয়ান টু'-এর পর চারজন পিএসভি ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে চমৎকার বাঁকানো শটে দলকে লিড এনে দেন মেসি। 

    লিড নিয়ে পিএসভির ওপর আরও চড়াও হয় বার্সা। ইভান রাকিটিচ এবং ডেম্বেলে গোলের দুটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া না করলে ব্যবধানটা তখনই দ্বিগুণ করত বার্সা। এজন্য অবশ্য খুব একটা ভুগতে হয়নি তাদের। কারণ ৭০ মিনিটে মেসির ফ্রিকিকে পা ছুঁয়ে ব্যবধান ঠিকই দ্বিগুণ করেন ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে। 

     

     

    দুই গোলে এগিয়ে থাকলেও ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারত বার্সার। রাকিটিচদের মত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করে ব্যবধানটা বাড়াতে পারেননি বদলি ফরোয়ার্ড ম্যালকমও। বার্সার মিসের মহড়ায় হাল না ছাড়া পিএসভিও সুযোগ পেয়েছে বেশ। কিন্তু ছন্দে ছিলেন না তাদের ফরোয়ার্ডরাও। ৭৫ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে জোসেপ বার্গউইনের শট চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। এর মিনিট দুয়েক পর স্টেগানকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন লোজানো। কিন্তু ভ্যান বমেলের দলের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা মিলিয়ে যায়নি তখনও। আরও ভাল করে বলতে গেলে, মিলিয়ে যেতে দেননি অধিনায়ক ডি ইয়ং। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ডি ইয়ংয়ের গোলেই ৮২ মিনিটে ম্যাচে ফেরার আশায় বুঁদ হয় পিএসভি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আশায় গুঁড়েবালি। উল্টো প্রতি-আক্রমণে আবারও ম্যালকম গোলের সুযোগ হাতছাড়া না করলে আরও বড় ব্যবধানের জয় নিতেই মাঠ ছাড়তে পারত কাতালানরা।

    গ্রুপের অন্য ম্যাচে ওয়েম্বলিতে ইন্টার মিলানকে হারিয়েছে টটেনহাম হটস্পার। বদলি ক্রিশিয়ান এরিকসেনের একমাত্র জিতে নক আউট পর্বের আশা জিইয়ে রেখেছে মরিসিও পচেত্তিনোর দল। তবে শেষ ম্যাচে অনেকটা অসাধ্য সাধন করতে হবে তাদের। শেষ ম্যাচে ন্যু ক্যাম্পে বার্সাকে হারাতে হবে। ড্র করলেও অবশ্য হবে, সেক্ষেত্রে ইন্টারকেও পয়েন্ট হারাতে হবে।

    ইন্টার মিলানের সমান ৭ পয়েন্ট নিয়ে অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে দুইয়ে আছে স্পার্স। ইন্টারের শেষ ম্যাচ সান সিরোতে পিএসভির বিপক্ষে। চ্যাম্পিয়নস লিগে কোনো ম্যাচ না জেতা পিএসভির বিপক্ষে লড়াইটা সহজই হওয়ার কথা তাদের।