লিভারপুলকে বিপদে ফেলে এগিয়ে গেল পিএসজি
লিভারপুলের বিপক্ষে পিএসজির জয়, চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকার ম্যাচে জয়, ডাগ আউটে এক জার্মান কোচের বিপক্ষে আরেক জার্মান কোচের জয়- প্রাক ডি প্রিন্সেসে চ্যাম্পিয়নস লিগের রাতটা অসাধারণ হয়ে থেকেছে পিএসজির জন্য। অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের কাছে হারের প্রতিশোধও নেওয়া হয়ে গেছে, পিএসজি জিতেছে ২-১ গোলে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ 'সি' এর খেলা নাটকীয় সমাপ্তির দিকেই যাচ্ছে।
রেডস্টার বেলগ্রেডের বিদায় নিশ্চিত হয়েছে নেপলসে। নাপোলি ৩-১ গোলে জিতে গ্রুপের শীর্ষে আছে ৯ পয়েন্ট নিয়ে। কিন্তু নকআউট পর্ব এখনও নিশ্চিত নয় তাদের। লিভারপুলকে টপকে ৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকা পিএসজির ভাগ্যও ঝুলে আছে, তবে নিজেদের হাতেই আছে ভাগ্য। শেষ ম্যাচে সার্বিয়ায় রেডস্টার বেলগ্রেডকে হারালেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত পিএসজির। আর হেরে গেলে লিভারপুল-নাপোলি ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করবে তাদের ভাগ্য।
ঘরের মাঠে পিএসজি আক্ষরিক অর্থেই কিক অফের শুরু থেকেই আক্রমণ চালিয়েছিল লিভারপুলের ওপর। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এডিনসন কাভানি ম্যাচের প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন। পিএসজির গোল পাওয়াটা সময়ের ব্যাপারই ছিল। খুব বেশি দেরিও করতে হয়নি তাদের গোল পেতে। আগের ম্যাচে নাপোলির বিপক্ষে হার এড়ানো গোল করা হুয়ান বার্নাট লিভারপুলের বিপক্ষে কাজের কাজটা করে ফেলেন। মার্ক ভেরাত্তি দারুণ খেলছিলেন, তিনিই শুরু করেছিলেন আক্রমণের। ডিবক্সের বাইরে থেকে বামদিকে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে পাঠিয়েছিলেন বল। এমবাপ্পের ক্রস প্রথমে ভার্জিল ভ্যান ডাইক ক্লিয়ার করলেও সেটা গিয়ে পড়ে বার্নাটের কাছে। তিনি কাট করে এরপর ১৪ মিনিটে গোল করে এগিয়ে নেন পিএসজিকে।
লিভারপুলকে লিভারপুলের কায়দাতেই ঘায়েল করছিল টমাস টুখলের দল। ইয়ুর্গেন ক্লপ অবশ্য পিএসজির আক্রমণের কথা মাথায় রেখে রক্ষণের ডানদিকে একটু বেশি সতর্ক ছিলেন। ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ডের বদলে জোল মাটিপকে নামিয়েছিলেন রাইটব্যাক হিসেবে। তবে তাতেও প্রথমার্ধে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি লিভারপুল। পিএসজির বেশির ভাগ আক্রমণ হয়েছে ওই প্রান্ত দিয়েই। ম্যাচের আধ ঘন্টা না পেরুতেই পিএসজি ত্রয়ী নেইমার-এমবাপ্পে-কাভানি মিলে প্রায় দ্বিতীয় গোলটাও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু অ্যালিসনের দারুণ সেভ তখন গোলবঞ্চিত করেছে কাভানিকে। উরুগুইয়ানকে অবশ্য ৩৭ মিনিটে আরও একবার গোলবঞ্চিত করেছিলেন অ্যালিসন। কিন্তু পিএসজিকে গোল পাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেননি। কাউন্টার অ্যাটাকে বিদ্যুৎ গতিতে নিজেদের অর্ধ থেকে লিভারপুলের ডিবক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন ওই তিনজনই। শুরুটা করেছিলেন নেইমার। এমবাপ্পের সঙ্গে ওয়ান টু, এরপর ক্রস বাম দিক থেকে। কাভানির গোলে করা শট ঠেকালেও এরপর ফিরতি বল চলে নেইমারের কাছে। আক্রমণটা শুরু করেছিলেন যিনি, তার পায়েই শেষ হয় সফল হয়ে। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে নেইমারের চতুর্থ গোলে দুই গোলের লিড পায় পিএসজি।
প্রথমার্ধে দারুণ খেলেও অবশ্য স্বস্তিতে বিরতিতে যেতে পারেনি প্যারিসিয়ানরা। সংশয় কাটিয়ে একাদশে ফিরেছিলেন সাদিও মানে। তিনিই পিএসজির ডিবক্সের ভেতর ঢুকেছিলেন বল নিয়ে, ডি মারিয়ার আনাড়ি স্লাইড ট্যাকেলে এরপর ম্যাচে ফেরার আলো দেখতে পায় লিভারপুল। রেফারি যদিও প্রথমে পেনাল্টি দিতে চাননি, পরে গোললাইনের পেছনে সহকারির পরামর্শে নিজের সিদ্ধান্ত বদলান। জিয়ানলুইজি বুফনকে ভুল দিকে পাঠিয়ে এরপর স্পটকিক থেকে জেমস মিলনার এক গোল শোধ করেন ৪৫ মিনিটে।
বিরতির পর লিভারপুলকে অপেক্ষায় রেখে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু দেরি করেই মাঠে এসেছিল পিএসজি। প্রাক ডি প্রিন্সেস শুরু থেকেই একই তালে মাতিয়ে রেখেছিলেন পিএসজি সমর্থকেরা। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের গলার আওয়াজ কিছুটা স্তিমিত হলো। মিনিট দশেক যাওয়ার পর লিভারপুল সমর্থকদের গানও শোনা গেল। বিরিতির আগে পাওয়া লাইফলাইনটা ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছিল লিভারপুল। আর ভালো শুরুর পরও তখন ভড়কে যাওয়া পিএসজির আক্রমণেও ধার কমে এসেছিল। ৬০ মিনিটে রবার্তো ফিরমিনো ভালোভাবে হেডটা করতে পারলে হয়ত সমতায়েই চলে যেত ম্যাচ। এরপর টুখল দুই বদলি নামিয়ে নিজের কৌশলেও বদল করেন। দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে নামেন দানি আলভেজ, আর তার সঙ্গে চুপো মটিং।
এর কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমবারের মতো গোলের সুযোগ তৈরি করে পিএসজি। ওই আক্রমণের পুরো চিত্রটাই ব্রাজিলিয়ান। নেইমারের কর্নার থেকে মার্কিনহোসের হেড, অ্যালিসনের দুর্দান্ত সেভ। ৭০ মিনিটে অ্যালিসনের ওই সেভই লিভারপুলকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখে। ৮৩ মিনিটে অ্যান্ড্রু রবার্টসন ভালো একটা ক্লিয়ার করেও এমবাপ্পেকে গোলবঞ্চিত করেন। সেই ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে অবশ্য শেষদিকে আর ম্যাচে ফেরা হয়নি লিভারপুলের। শেষদিকে নামা স্টারিজ, শাকিরিরাও আর সিলভা-মার্কিনহোসের দুর্গ ভাঙতে পারেননি। শেষদিকে বরং স্বাচ্ছন্দ্যেই ম্যাচ জিতেছে পিএসজি, নেইমারও শেষদিকে নিজের কৌশল দেখিয়েছেন এক গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচেও!
পিএসজির কাছে হেরে অবশ্য লিভারপুলের সমীকরণটা কঠিন হয়ে গেছে। আগের মৌসুমের রানারআপরা পড়ে গেছে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ের শঙ্কায়। শেষ ম্যাচে লিভারপুলের শুধু জয় পেলেই হবে না, সেটা হতে হবে অন্তত দুই গোল ব্যবধানের। ১-০ গোলে জিতলে অবশ্য নাপোলির সঙ্গে তখন টাই হবে, সেক্ষেত্রে বেশি গোল করার সুবাদে লিভারপুল উঠে যাবে পরের রাউন্ডে। লিভারপুলের ভরসা একটাই, ম্যাচটা অ্যানফিল্ডে!