সিটির জয়ের রাতে আবারও পয়েন্ট হারাল ইউনাইটেড
চ্যাম্পিয়নস লিগে খুব একটা ভাল সময় না কাটলেও ২০১৮-১৯ প্রিমিয়ার লিগে তারা প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৩ ম্যাচ শেষেও অপরাজিত থেকে টেবিলের শীর্ষেই ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। মৌসুমের 'সারপ্রাইজ প্যাকেজ' বোর্নমাউথের বিপক্ষে তাই ফেভারিট ছিল তারাই। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে দলের মূল স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোকে ছাড়াও সেই ফেভারিট তকমার প্রতি সুবিচার করেছে পেপ গার্দিওলার দল। বোর্নমাউথকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে তারা। সিটি জিতলেও আবারও ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও সেন্ট মেরিজ স্টেডিয়াম থেকে ২-২ গোলের ড্র নিয়ে ফিরেছে হোসে মরিনহোর দল।
এই মৌসুমে দারুণ ফর্মে থাকা আগুয়েরো জায়গায় নেমেছিলেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। আর ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছিলেন বের্নার্দো সিলভা। আগুয়েরোর অভাবটা বুঝতে দেননি সিলভা, হেসুসরাই। ম্যাচের ১৬ মিনিটেই লিড নেয় সিটি। ডিফেন্ডার জিনচেঙ্কোর লম্বা পাস থেকে লিরয় সানের শট ফিরিয়ে দেন বোর্নমাউথ গোলরক্ষক আসমির বেগোভিচ। ফিরতি বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি সিলভা। শুরুতেই লিড নিয়ে আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর সিটি কিছুটা গা ছাড়া খেলাতেই মেতে উঠে। এই সুযোগে ম্যাচে ফেরে বোর্নমাউথ। সিটি গোলরক্ষক এডারসন কয়েকবার কিং, ফ্রেসারদের ফেরালেও ৪৪ মিনিটে আর শেষরক্ষা হয়নি। দুর্দান্ত হেডে দলকে সমতায় ফেরান ক্যালাম উইলসন।
পুরো প্রথমার্ধ দারুণ খেলা সিটি শেষদিকে গোল খেয়ে খেই হারিয়ে ফেলে কিছুটা। দলে নেই আগুয়েরো, অন্যদিকে বোর্নমাউথের জমাট রক্ষণ। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধের বেশ খানিকটা সময় আক্রমণে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি সিটি। ভাগ্যও সহায় হয়নি গার্দিওলার দলের। ৫৩ মিনিটে দুর্দান্তভাবে 'চেরি'দের ৪ ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে স্টার্লিংয়ের নেওয়া শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। তবে ৫৭ মিনিটে আর দমিয়ে রাখা যায়নি সিটিকে। দানিলোর ক্রস বেগোভিচ ফিরিয়ে দিলে ফিরতি বল ঠিকই জালে পাঠান স্টার্লিং। বোর্নমাউথের বিপক্ষে খেলা ৬ ম্যাচের প্রতিটিতেই গোল করলেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি সিটিকে। দুর্দান্ত পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বোর্নমাউথকে রীতিমত নাকানিচুবানি খাইয়েছে 'সিটিজেন'রা। বেগোভিচ না থাকলে ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারত সিটির। তবে ৭৯ মিনিটে বসনিয়ান গোলরক্ষকও আর পারেননি সিটির জয় রুখতে। সানের মাইনাস থেকে ডানপায়ের আলতো টোকায় জয় নিশ্চিত করেন ইলকে গুন্ডোয়ান। সেই সাথে টেবিলের শীর্ষস্থানটা আরও সুসংহত করল গার্দিওলার দল।
সিটির মত অবশ্য এত সহজে জিততে পারেনি ইউনাইটেড। মূল একাদশে জেসি লিনগার্ড, হুয়ান মাতা বা অ্যান্থনি মার্শিয়ালদের কাউকেই না রাখার সিদ্ধান্তটা বেশ বিস্ময়করই ছিল হোসে মরিনহোর। তবে ম্যাচের প্রথন সুযোগটা পেয়েছিল তার দলই। ৩ মিনিটে 'পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক' রেঞ্জ থেকে রোমেলু লুকাকুর শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন সাউদাম্পটন গোলরক্ষক অ্যালেক্স ম্যাকার্থি। লুকাকুর এই মিসের চড়া মূল্যই দিতে হয়েছে ইউনাইটেডকে। ১৩ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে জোরাল মাপা শটে ডেভিড ডি গেয়াকে পরাস্ত করেন স্টুয়ার্ট আর্মস্ট্রং। লিড নিয়েই উল্লাসে ফেটে পড়ে সেন্ট মেরিস স্টেডিয়াম। 'সেইন্টস'দের উল্লাস আরও বাড়িয়ে দেন রাইটব্যাক সেড্রিক সোয়ারেস। ২০ মিনিটে দুর্দান্ত এক ফ্রিকিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পর্তুগিজ রাইটব্যাক। শুরুতেই দুই গোলে পিছিয়ে পড়ায় সমর্থকদের দুয়ো শুনতে হয় ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের।
তবে দুয়োতে কাজ হয় ঠিকই। তার কারণেই লিড নিতে ব্যর্থ হয়েছিল ইউনাইটেড। ৩৩ মিনিটে সেই লুকাকুর গোলেই ব্যবধান কমায় ইউনাইটেড। পল পগবার বাড়ান পাস থেকে মার্কাস রাশফোর্ডের ক্রস জালে পাঠাতে ভুল করেননি বেলজিয়ান স্ট্রাইকার। ১২ ম্যাচ পর গোলের দেখা পেলেন তিনি। লুকাকুর গোলের পর সাউদাম্পটনকে চেপে ধরে ইউনাইটেড। ফলটাও আসে হাতেনাতেই। এবারও গোলের উৎস সেই রাশফোর্ডই। ৩৯ মিনিটে তার মাইনাস থেকে দলকে সমতায় ফেরান অ্যান্ডার হেরেরা। প্রথমার্ধের শুরুটা যাচ্ছেতাই হলেও ঠিকই সমতায় ফেরে মরিনহোর দল।
প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও লড়াইটা হয়েছে সমানে সমান। মাঝমাঠে পগবাদের এক চিলতে জায়গাও দেননি রেডমন্ড, আর্মস্ট্রংরা। লুকাকু, রাশফোর্ডদের রীতিমত পকেটবন্দিই করে রেখেছিলেন হোয়েবার্গরা। ইউনাইটেডের চেয়ে সুযোগ বেশি পেয়েছে সাউদাম্পটনই। তবে ডি গেয়া যেন এক দুর্ভেদ্য দেয়াল। ৫৮ মিনিটে মারিও লেমিনার দূরপাল্লার শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। একইভাবে ফিরিয়েছেন রেডমন্ড, আর্মস্ট্রংদের কয়েকটি প্রচেষ্টা। তবে ৭০ মিনিটে রেডমন্ডের কর্ণার থেকে হোয়েবার্গের হেডটি রীতিমত অসামান্য দক্ষতায় ফিরিয়ে দিয়েছেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক। রেডমন্ডরা যতটা উজ্জ্বল ছিলেন, দ্বিতীয়ার্ধে ঠিক ততটাই নিষ্প্রভ ছিলেন লুকাকু, মার্শিয়ালরা। শেষ পর্যন্ত ডি গেয়ার দক্ষতার জন্যই পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে পেরেছে ইউনাইটেড।