চ্যাম্পিয়নস লিগ : দ্বিতীয় রাউন্ডের ড্রয়ের আগে
চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ-১৬ এর লাইন আপ ঠিক হয়ে গেছে বুধবার রাতে। সোমবার ড্র এর আগে দলগুলোর হালচাল দেখে নেওয়া যাক।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
লুসিয়ান ফাভ্রের দল বুন্দেসলিগার ফর্মটাই টেনে এনেছে চ্যাম্পিয়নস লিগেও। ঘরের মাঠে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে হারালেও, পরের লেগে হেরেছিল ডর্টমুন্ড। মৌসুমে ওই একটাই হার তাদের। লিগেও শীর্ষস্থানে আছে ডর্টমুন্ড।
বার্সেলোনা
শেষ ষোল মৌসুমের মধ্যে এই নিয়ে বারো বার দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠল বার্সেলোনা। ২০১৩ সালের পর ঘরের মাঠে আর হারেওনি তারা, সেই ধারা চালু ছিল এবারও। গ্রুপপর্ব কোনো ম্যাচ না হারলেও রক্ষণের সমস্যাটা টের পাওয়া গেছে ভালোভাবেই। গ্রুপের বাকি দলগুলো সহজ ছিল না, সে হিসেবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা বার্সার অর্জনই। তবে বেশিরভাগ ম্যাচে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও শেষদিকে নিজেদের দোষেই চাপে পড়তে হয়েছিল বার্সাকে। গত মৌসুমে রোমার কাছে হারের ভয়ঙ্কর স্মৃতিটা ছায়া হয়ে এখনও ভর করছে বার্সার ওপর?
প্যারিস সেন্ট জার্মেই
গ্রুপপর্বের প্রথম ও শেষ ম্যাচের ব্যবধানে পিএসজির উন্নতিটা ছিল চোখে পড়ার মতো। অ্যানফিল্ডে ৩-২ গোলে হারা ম্যাচে পিএসজি খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয় ছিল না বললেই চলে। শেষ রাউন্ড আসতে আসতে সেই এগারো জনকেই ‘একটা দলে’ পরিণত করেছেন টমাস টুখল। গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়ার শঙ্কা জেগেছিল পিএসজির, সেই ভয় কাটিয়ে শেষ দুই ম্যাচের জয় দিয়ে দুর্দান্তভাবে ফিরেছে তাঁরা। টুখলের ৪-৪-২ ও ৩-৩-২-২ ফর্মেশন রক্ষণ ঠিক রেখেও নেইমার আর এমবাপ্পেকে আক্রমণে দিয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। শেষ দুই ম্যাচে নেইমার, এমবাপ্পেরা রক্ষণেও ছিলেন মনোযোগী।
এফসি পোর্তো
এবার গ্রুপপর্বে টানা ৫ ম্যাচ জিতে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে পোর্তো। পর্তুগিজ ক্লাবের সাফল্যের মূল কারিগর স্ট্রাইকার মুসা মারেগা। গ্রুপপর্বেই তিনি করে ফেলেছেন ৬ গোল।
বায়ার্ন মিউনিখ
আমস্টারডামে নিজেদের শেষ ম্যাচে ক্লাসিক লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল আয়াক্স আর বায়ার্ন। ৬ গোলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জেতেনি কেউ। তাতেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়নই হয়েছে জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। তবে বায়ার্নের নড়বড়ে অবস্থাটা ভালোভাবেই জেনে গেছে বাকি দলগুলো। নিকো কোভাচের দলের অবস্থা ঘরোয়া লিগেও সুবিধার না, শীর্ষে থাকা ডর্টমুন্ডের চেয়ে ৯ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে তারা। শেষ ৭ মৌসুমে অন্ততপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার পর্যন্ত গেছে বায়ার্ন। রানার আপদের মধ্যে লিভারপুলকে তাই এড়াতেই চাইবে বাভারিয়ানরা।
ম্যানচেস্টার সিটি
বাজে শুরুর পরও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যান সিটি। লিগের দাপুটে ফর্ম ইউরোপে গিয়ে ফিঁকে হয়েছে বেশ কয়েকবার। অলিম্পিক লিঁওকে এক ম্যাচেও হারাতে পারেনি সিটি, উলটো হেরেছে একটি।
রিয়াল মাদ্রিদ
মৌসুমের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকা রিয়ালকে চ্যাম্পিয়নস লিগ যা একটু স্বস্তি দিয়েছিল। সেটাও শেষ ম্যাচে সিএসকেএ মস্কোর কাছে ৩-০ গোলে হেরে উবে গেছে। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ৯ বছর পর গ্রুপপর্বের ম্যাচ হেরেছে রিয়াল। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের ছন্দপতন সমর্থকদের জন্যে চিন্তার কারণই। তবে অতীত রেকর্ডে অনুপ্রেরণা খুঁজতে পারে রিয়াল। শেষ ৩৮ ইউরোপিয়ান ম্যাচের মাত্র ৬ টিতে হেরেছে তারা।
জুভেন্টাস
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ‘ফ্যাক্টর’টা জুভেন্টাসকে এগিয়ে রাখছে অনেকখানি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও ইয়াং বয়েজের কাছে দুইটি হার অবশ্য তুরিনের ক্লাবের জন্য স্বস্তিদায়ক নয় মোটেই। তবে রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণভাগের দারুণ সমন্বয় জুভেন্টাসকে ভালো কিছুর স্বপ্নই দেখাচ্ছে। বিশেষ করে সিরি আতে শক্ত অবস্থানে থেকে এরই মধ্যে শিরোপার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে জুভেন্টাস। মাসসিমিলিয়ান আলেগ্রির দলের মনোযোগ তাই চ্যাম্পিয়নস লিগে থাকবে আরও বেশি।
রানার্স আপ
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
এবারের ফাইনালের ভেন্যু তাদের ঘরের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানো। ডিয়েগো সিমিওনের অধীনে দুই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলা অ্যাটলেটিকো পাচ্ছে বাড়তি অনুপ্রেরণা। গতবার গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়েছিল অ্যাটলেটিকো, প্রায় দুই বছর পর তাই চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বে খেলবে তারা। গ্রুপপর্বে ডর্টমুন্ডের কাছে বড় হারের পর দ্বিতীয় লেগে অবশ্য প্রতিশোধটা নেওয়া হয়েছে অ্যাটলেটিকোর, কিন্তু শীর্ষস্থানটা আর পাওয়া হয়নি। গ্রুপ চ্যাম্পিয়নরা তাই এড়াতেই চাইবে অ্যাটলেটিকোকে।
টটেনহাম হটস্পার
চড়াই-উতরাই পার হয়ে অবিশ্বাস্যভাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে টটেনহাম। লিগে তৃতীয় অবস্থানে থাকলেও গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাকি দলগুলোর তুলনায় খুব আহামরি বলা যাবে না টটেনহামের ফর্ম।
লিভারপুল
গ্রুপটাই ছিল কঠিন। শেষদিকে অবশ্য কাজের কাজটা ভালোভাবেই করেছে লিভারপুল। গতবারের রানার্স আপরা দলের শক্তিও বাড়িয়েছে। প্রিমিয়ার লিগেও শীর্ষ স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। এক পোর্তোকে বাদ দিলে, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন যে কোনো দলের সঙ্গে লিভারপুলের লড়াই হয়ে যেতে পারে দ্বিতীয় রাউন্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিক্সচার।
শালকে
বুন্দেসলিগায় শালকের অবস্থান ১৪ নম্বরে। কিন্তু ইউরোপে ঘরোয়া লিগের দুর্দশার ছাপ পড়তে দেয়নি শালকে। তবে গত তিনবারই চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ-১৬ বাধা পার করতে পারেনি তাদের।
আয়াক্স
২০০৫-০৬ মৌসুমের পর চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বে উঠেছে আয়াক্স। বায়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে হোম ও অ্যাওয়ে দুই লেগেই হার এড়িয়েছে তারা। দলে আছে এক ঝাঁক নতুন খেলোয়াড়ও। জানুয়ারির দলবদলের মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের ধরে রাখতে পারলে আরও বড় কিছুর স্বপন দেখতেই পারে তারা। ডাচ লিগে পিএসভির চেয়ে দুই পয়েন্টে পিছিয়ে দুইয়ে আছে আয়াক্স।
অলিম্পিক লিঁও
শাখতারের বিপক্ষে নাবিল ফেকিরের গোলে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করেছে লিঁও। ফ্রান্সের দ্বিতীয় দল হিসেবে তারাও আছে চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বে।
রোমা
গত মৌসুমের সেমিফাইনালিস্টরা এবার গ্রুপপর্বের শেষ দুই ম্যাচেই হেরেছে। সিরি আতেও হতাশার এক মৌসুম কাটাচ্ছে রোমা, রয়েছে পয়েন্ট তালিকার ৮ নম্বরে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
হোসে মরিনহোর দলের প্রাপ্তিই বলা যেতে পারে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করা। ইউনাইটেডের সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে জুভেন্টাসের বিপক্ষে গ্রুপর্বের জয়টা তাদের জন্য বড় কিছুই। যদিও বড় দলগুলোর বিপক্ষে নক আউট পর্বে খেলা পড়লে অধারাবাহিক ইউনাইটেডের পক্ষে বাজি ধরার লোক থাকবে কমই।