মেসির রাতে উড়ে গেল লেভান্তে
গত মৌসুমে আরেকটু হলেই লা লিগার একমাত্র দল হিসেবে পুরো মৌসুম অপরাজিত থাকতে পারত বার্সেলোনা। কিন্তু লেভান্তের মাঠ সিউদাদ দে ভ্যালেন্সিয়াতে ৫-৪ গোলের সেই হার আর তা হতে দেয়নি। ঐ ম্যাচে বিশ্রামে ছিলেন তিনি, ডাগআউট থেকে অসহায়ভাবে দেখেছেন রেকর্ড গড়ার তীরে এসে বার্সার তরী ডোবানো। লেভান্তের মাঠে ম্যাচটা বার্সার জন্য তাই ছিল কিছুটা প্রতিশোধেরও। এদিন অবশ্য মাঠে ছিলেন লিওনেল মেসি। তিনি করলেন হ্যাটট্রিক, লুইস সুয়ারেজ এবং জেরার্ড পিকেকে দিয়ে করালেন আরও দুটি। আরও এক মেসিময় রাতে লেভান্তেকে ৫-০ গোলে হারিয়ে লা লিগার শীর্ষস্থান সুসংহত করল কাতালানরা। ১৬ ম্যাচ শেষে ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।
লেভান্তের বিপক্ষে লা লিগায় মাত্র ২বার হেরেছে বার্সা, দুবারই হজম করেছে ৫ গোল। এদিনও ম্যাচের শুরুতেই সেরকক একটা আভাস দিচ্ছিল লেভান্তে। প্রথম ১০ মিনিটেই মার্ক আন্দ্রে টার-স্টেগানকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি গত মৌসুমের সেই ম্যাচের নায়ক বোয়াটেং। ম্যাচের শুরুটা দুর্দান্ত হওয়ায় আত্মবিশ্বাসটাও বেড়ে যায় লেভান্তের। একের পর এক আক্রমণে মেসিদের ম্যাচে থিতুই হতে দিচ্ছিলেন না তারা। ১৮ মিনিটে লেভান্তে অধিনায়ক মোরালেসের জোরাল শট ফিরিয়ে দেন স্টেগান। এর মিনিট ছয়েক পর ভাগ্যের জোরে লিডটা নিতে পারেনি তারা। ২৪ মিনিটে বোয়াটেংয়ের জোরাল শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। বোয়াটেংয়ের শটের পরই পিকের সাথে কথা বলে নিলেন তিনি। আর্মব্যান্ডটা টেনে আরও শক্ত করে পড়লেন হাতে, যেন দায়িত্বটা তুলে নিলেন নিজ কাঁধেই। এরপরের অধ্যায়টা কেবলই মেসির।
দৃঢ়প্রত্যয়ী মেসি সময় নিলেন মাত্র তিন মিনিট। ৩৫ মিনিটে তিনজন ডিফেন্ডারের চার্জেও চমৎকার এক পাস বাড়ালেন সুয়ারেজের দিকে। জোরাল ভলিতে গোল করে ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরাটা উদযাপন করে নিলেন 'এল পিস্তোলেরো'। বার্সার বিপক্ষে সুযোগগুলো হাতছাড়া করার খেসারত দিল লেভান্তে। লিডটা দ্বিগুণ করতেও সময় নেয়নি বার্সা। ৪৩ মিনিটে মোরালেসের ভুলে মাঝমাঠে বল পেয়ে যান সার্জিও বুস্কেটস। তার চমৎকার থ্রু পাসে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান মেসি। চাইলেই বাঁ-পায়ে ফিনিশ করতে পারতেন, কিন্তু মাথায় হয়ত পেলের সেই 'মেসি কেবল বাঁ-পায়ের ফুটবলার' উক্তিই ঘুরছিল তার। ডানপায়েই পরাস্ত করলেন গোলরক্ষক ঐয়েরকে।
প্রথমার্ধে একাই বলতে গেলে লেভান্তের সম্ভাবনা নি:শেষ করে দিয়েছিলেন। যা-ও বাকি ছিল, ৪৭ মিনিটে গোল করে তা-ও মিটিয়ে দিলেন মেসি। জর্দি আলবার মাইনাস থেকে বাঁকানো শটে তখনই জয় নিশ্চিত করেন তিনি। কিন্তু মেসির ক্ষুধা তাতেও কমল না। জয় নিশ্চিত জেনেও আক্রমণের ধার এতটুকু কমায়নি বার্সা। ৫৪ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে মেসির ফ্রিকিক দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন ঐয়ের। তবে মেসি হ্যাটট্রিক পেয়েছেন ঠিকই। ৬০ মিনিটে আর্তুরো ভিদালের নি:স্বার্থ পাসে গোলের সামনে থেকে আলতো টোকায় হ্যাটট্রিক করেন তিনি। হার নিশ্চিত জেনে এরপর ব্যবধান চার গোলে রাখতেই 'বাস পার্ক' করে ফেলে লেভান্তে।
কিন্তু লাভ হয়নি খুব একটা। মেসিকে আটকাতেই হিমশিম খেতে হয়েছে, সুয়ারেজ এবং ডেম্বেলেরাও এই সুযোগে ঐয়েরকে পরীক্ষায় ফেলেছিলেন কয়েকবার। ৭২ মিনিটে ডেম্বেলের শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। এর মিনিট চারেক পর প্রতি-আক্রমণে তাকে ভয়ঙ্কর ট্যাকেল করে লাল কার্ড দেখেন এরিক কাবাকো। শেষদিকে ঐ ১০ জন নিয়ে ডিফেন্সই করে গেছে লেভান্তে। কিন্তু 'ফাইভ স্টার পারফরম্যান্স'-এ পাঁচ নম্বর গোল ঠিকই পেয়েছে বার্সা। ৮৮ মিনিটে মেসির পাস থেকে ঐয়েরকে বোকা বানিয়ে গোল করেন পিকে। তিন গোল, দুই অ্যাসিস্টে ম্যাচ বল নিয়েই ফিরেছেন মেসি। ব্যালন ডি'অরের র্যাঙ্কিং বা পেলের মন্তব্য- তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা সবকিছুকেই আবারও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিলেন 'লা পুলগা'।
- ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন মেসি।
- সেরা পাঁচ লিগে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ১০ গোল এবং ১০ অ্যাসিস্ট কেবল মেসির।
- গত নয় বছরের আটটিতেই ৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন মেসি।
- ২০১১ সালে ওসাসুনার পর এবারই লিগের কোনও ম্যাচে হ্যাটট্রিক এবং জোড়া অ্যাসিস্ট করলেন মেসি।