গানারদের গুঁড়িয়ে উড়ছে লিভারপুল
৩৬৪ দিন। প্রিমিয়ার লিগে অ্যানফিল্ডে লিভারপুল পিছিয়ে পড়েছিল ৩৬৪ দিন পর। পুরো ম্যাচে ওই একটা মুহুর্তই হয়ে ছিল আর্সেনালের। অলরেডরা ম্যাচে ফিরে আসতে সময় নিয়েছে দুই মিনিট। ভুলের শুধরে এরপর লিভারপুল এগিয়ে যেতে সময় নিয়েছিল আরও দুই মিনিট। বাকি সময় আর্সেনালকে যেন শাস্তিই দিল তারা। গুণে গুণে আরও ৩ বার আর্সেনালের জালে বল জড়িয়ে বড় ম্যাচটাও হাতের মোয়া বানিয়ে জিতল লিভারপুল। রাতের প্রথম ম্যাচে দুইয়ে থাকা টটেনহাম হটস্পার হেরে যাওয়ায় তাই শীর্ষস্থানে থাকা লিভারপুল ব্যবধান বাড়িয়েছে আরও। ৫-১ গোলে আর্সেনালকে বিধ্বস্ত করে লিভারপুল হাঁটছে স্বপ্নের পথে।
লিভারপুলের আক্রমণভাগের ত্রয়ী সালাহ-মানে-ফিরমিনোদের সবাই জ্বলে উঠেছেন একসাথে। বাকি দুইজনের চেয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল রবার্তো ফিরমিনো। লিগে আগের ১৯ ম্যাচে গোলই পাননি তিনি। সেই ফিরমিনো করলেন হ্যাটট্রিক, নেতৃত্ব দিলেন লিভারপুলের বড় জয়ে। বছরটা এর চেয়ে ভালোভাবে শেষ করতে পারত না লিভারপুল। ২০ ম্যাচ শেষেও তারা অপরাজিতই থাকল।
অ্যানফিল্ডের ম্যাচে রোমাঞ্চের শুরু ১১ মিনিটে। লিভারপুল ডিফেন্ডার ডেয়ান লভ্রেন ভুল করেই বিপদ ডেকে এনেছিলেন। বাম প্রান্ত দিয়ে অ্যালেক্স ইওবির ক্রস থেকে এরপর মাটিল্যান্ড নিলস গোল করে চমকে দেন লিভারপুলকে। চলতি মৌসুমে অ্যানফিল্ডে করা প্রতিপক্ষের মাত্র তৃতীয় গোল ছিল এটি। পুরো ম্যাচে ওই একটা মুহুর্তেই মনোসংযোগের ব্যঘাত ঘটেছিল লিভারপুলের।
গোল হজমের পর তাই তেঁতে ওঠা অ্যানফিল্ডে ফিরে আসতে সময় লাগেনি ঘরের দলের। আর্সেনালের দায়ও অবশ্য তাতে কম নয়। ১৪ মিনিটে ফিরমিনোই শুরু করেছিলেন আক্রমণ। এরপর ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে পাস ঠেলে দিয়েছিলেন মোহামেদ সালাহকে। ফিরমিনো দৌড় থামাননি, সালাহও বল পেয়ে তেমন কিছু করতে পারেননি। কিন্তু ফিরমিনো নিজের ভাগ্য গড়ে নিলেন নিজেই। আর্সেনাল ডিফেন্ডারদের গায়ে লেগে বলও আসল তার পায়ে, এরপর ফাঁকা বারপোস্টের সামনে বল পেয়ে বাকি কাজ সেরে দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
দুই মিনিট পর আরেক ভুলে কপাল পুড়ল আর্সেনালের। সাদিও মানের চার্জে মিডফিল্ডে বল হারায় আর্সেনাল, এরপর ফিরমিনোই আবার বল পান। দারুণ ফিনিশে ম্যাচের ১৬ মিনিটেই ব্যবধান ২-১ বানিয়ে ফেলেন ফিরমিনো। রক্ষণ থেকে আক্রমণ বিল্ড আপ করা, আর ডিফেন্সের হাই লাইন- দুটিই ভুগিয়েছে আর্সেনালকে। প্রথম গোলটা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন আর্সেনাল ডিফেন্ডাররা, কিন্তু পরের দুইটিতে আর থাকল না সেই সুযোগ। তৃতীয় গোলে ডিফেন্সের হাইলাইন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার খেসারত দিল আর্সেনাল। কর্নার থেকে বল ক্লিয়ার করেও, পরে সালাহর কৌশলের কাছে হার মেনেছে আর্সেনালের ডিফেন্স লাইন। বল পেয়ে বাম দিক থেকে ক্রস করেছেন সালাহ, ভলিতে গোল করেছেন মানে। ম্যাচের তখন ৩২ মিনিট মাত্র, আনফিল্ড দেখে ফেলেছে লিভারপুলের তিন গোল। কিন্তু ঘরের সমর্থকদের উৎসব তখন সবে শুরু। ৪৫ মিনিটে সালাহকে ডিবক্সের ভেতর ফেলে দিয়ে লিভারপুলকে পেনাল্টি উপহার দেন সিড কোলাসিনাচ। সালাহই পেনাল্টি নেন, সেখান থেকে করে ফেলেন লিগে নিজের ১৩ তম গোলটাও। ৪-১ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধেই তাই খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছিল লিভারপুল।
দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলের আক্রমণে ধার বাড়ল আরও। ৪৭ আর ৪৮ মিনিটে দুইবার সালাহ আর মানে গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু গোল আর আসেনি ওই দুই আক্রমণ থেকে। বার্ন লেনোর দারুণ এক সেভ ৬৩ মিনিটে গোল পেতে দেয়নি ফাবিনহোকেও। আর রঙ হারিয়ে সারা ম্যাচে আর নিজেদের খুঁজেই পেল না উনাই এমেরির দল। ৫৪ মিনিটে রামসে-অবামেয়াংয়ের কল্যাণে দারুণ একটা আক্রমণ সাজিয়েছিল গানাররা, কিন্তু অ্যারন রামসের ক্রস থেকে সহজ ফিনিশও করতে পারেন অবামেয়াং। গ্যাবন স্ট্রাইকার অবশ্য ফিনিশ করতে পারলেও আটকে যেতেন রেফারির অফসাইড সিদ্ধান্তে।
পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং পুরো ম্যাচে মাত্র ১৩ বার বল পেয়েছিলেন পায়ে। তার মধ্যে ৬ বারই করেছেন কিক অফ। নিঃসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যপ্রান্তে লিভারপুলের উৎসব দেখেছেন কেবল। ৬৫ মিনিটে দেখলেন ফিরমিনোর হ্যাটট্রিক। কর্নার থেকে লভ্রেনকে ফাউল করেছিলেন কোলাসিনাচ। রেফারিও বাজিয়েছেন পেনাল্টির বাঁশি। স্পটকিক থেকে এরপর হ্যাটট্রিকও পূরণ করে ফেলেন ফিরমিনো। বাকিটা সময় তাই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে ছিল অ্যানফিল্ডে।
বছরের শেষটা তাই শীর্ষে থেকেই হচ্ছে লিভারপুলের। তবে লিডটা কতো পয়েন্টের সেটা নির্ধারণ হবে রবিবার। ম্যানচেস্টার সিটি খেলবে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে। সিটিজেনরা জিতে গেলে তাদের পয়েন্ট হবে ৪৭। তখন দুইয়েও উঠে আসবে পেপ গার্দিওলার দল, আর লিভারপুলের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান দাঁড়াবে ৭ এ। লিগে পরের ম্যাচে শুক্রবার রাতে মুখোমুখি হবে দুই দল। ইতিহাদের ওই ম্যাচটাই তাই হয়ে যেতে পারে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ।