জয়ের ধারায় ফিরল গার্দিওলার সিটি
ক্রিস্টাল প্যালেস এবং লেস্টার সিটির কাছে হেরে হাতছাড়া হয়েছে লিগের শীর্ষস্থান, নেমে যেতে হয়েছিল টেবিলের তিন-এ। গতকাল উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের কাছে টটেনহাম হটস্পার হেরে যাওয়ায় ম্যানচেস্টার সিটির সামনে সুযোগ এসেছিল ২০১৮-১৯ প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্থান পুনরোদ্ধারের। সুযোগটা ঠিকই কাজে লাগিয়েছে পেপ গার্দিওলার দল। সাউদাম্পটনকে ৩-১ গোলে হারিয়ে জয়ের ধারায় ফিরেছে সিটি। স্পার্সকে টপকে ২০ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে উঠে এল 'সিটিজেন'রা।
স্কোরলাইন দেখে অবশ্য বোঝার অবকাশ নেই, জয়ের জন্য সিটিকে ঠিক কতটা ঘমা ঝড়াতে হয়েছে। টেবিলের তলানীর দল হলেও সিটিকে টেক্কাটা সমানে সমান দিয়েছে 'সেইন্টস'রা। ম্যাচে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল তারাই। ৮ মিনিটে জেমস ওয়ার্ড-প্রাউসের ডিফেন্সচেরা থ্রু পাসে অফসাইড জাল ভেঙ্গে সিটি গোলরক্ষক এডারসনকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন চার্লি অস্টিন। কিন্তু দূর্বল নিয়ন্ত্রণে গোলে শটই নিতে পারেননি ইংলিশ ফরোয়ার্ড। অস্টিনের মিসের বেশ চড়ামূল্যই দিতে হয়েছে সাউদাম্পটনকে। এর মিনিট দুয়েক পরই ১০ মিনিটে বের্নার্দো সিলভার মাইনাস থেকে দলকে লিড এনে দেন দাভিদ সিলভা। লিড নেওয়ার পরই সাউদাম্পটনকে চেপে ধরে সিটি। সার্জিও আগুয়েরো, রহিম স্টার্লিং, রিয়াদ মাহরেজদের গতির সামনে রীতিমত অসহায়ই হয়ে পড়েছিল 'সেইন্টস'-এর রক্ষণভাগ। ব্যবধান দ্বিগুণের বেশকিছু সুযোগ পেয়েছিল সিটি।
কিন্তু সাউদাম্পটন গোলরক্ষক অ্যালেক্স ম্যাকার্থি ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ১৮ মিনিটে আগুয়েরোর আগুনে শট অসামান্য দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন তিনি। এর মিনিট পাঁচেক পর আবারও 'কুন'কে গোলবঞ্চিত করেন ম্যাকার্থি। এডারসনও কম যাননা। ৩৩ মিনিটে দারুণ এক সেভে খালি হাতে ফিরিয়েছেন অস্টিনকে। তবে এজন্য খুব একটা ভুগতে হয়নি সাউদাম্পটনকে। ম্যাকার্থির দুর্দান্ত সব সেভের মানও রেখেছে সাউদাম্পটন। ৩৭ মিনিটে সিটি লেফটব্যাক জিনচেঙ্কোর ভুলে বল পেয়ে যান অধিনায়ক পিয়ের-এমেরিক হোয়েবার্গ। আগুনে এক শটে অবশেষে পরাস্ত হন এডারসন, সমতায় ফেরে সাউদাম্পটন। আবারও পয়েন্ট হারানোর আশঙ্কা জেঁকে ধরে সিটিকে। হতাশা প্রকাশ করতে হাতের পানির বোতলটি মাটিতে ছুঁড়ে ফেলেন গার্দিওলা।
তবে দলটা যখন সিটি, তখন শেষ বাঁশির আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় না কোনোকিছুই। আজ যেন আবারও সেটিই প্রমাণ করল গার্দিওলার দল। তবে ভাগ্যও বেশ সহায় হয়েছিল সিটির- তা বলতেই হয়। প্রথমার্ধের একেবারে ৪৫ মিনিটে স্টার্লিংয়ের ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল নিজেদের জালে ঠেলে দেন ওয়ার্ড-প্রাউস। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেন গার্দিওলা-আগুয়েরোরা। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সেই স্বস্তির নি:শ্বাস পরিণত হয় জয় নিশ্চিত করে ফেলার দিগন্তজোড়া হাসিতে। জিনচেঙ্কোর ক্রসে হেড করে ব্যবধান ৩-১ করেন আগুয়েরো। গার্দিওলার অধীনে আজ গোলের 'হাফসেঞ্চুরি' পূরণ করলেন 'কুন'।
প্রথমার্ধের ব্যবধানটা দুই গোলের হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তারই। দ্বিতীয়ার্ধেও অসাধারণ সব সেভে সিটিকে গোলবঞ্চিত করেন ম্যাকার্থি। ৫০ মিনিটে তাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি আগুয়েরো। ৫৩ মিনিটে স্টার্লিং শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দেন ম্যাকার্থি। তবে প্রথমার্ধের মত এবার আর সিটির রক্ষণভাগকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি অস্টিনরা। পুরো দ্বিতীয়ার্ধে এডারসনের গোলে শটই নিতে পারেনি সাউদাম্পটন।
'সেইন্টস'রা না পারলেও প্রথমার্ধের মতই গোলের একাধিক সুযোগ পেয়েছে সিটি। কিন্তু ম্যাকার্থির বীরত্বের সাথে মাহরেজের মিসের মহড়ায় লিডটা আর বাড়াতে পারেনি তারা। ৬৮ মিনিটে ম্যাকার্থিকে একা পেয়েও আগুয়েরোর মতই ব্যর্থ হয়েছেন মাহরেজ। গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন দুই সিলভাও। কিন্তু সাউদাম্পটন ব্যবধান কমাতে না পারায় খুব একটা সমস্যা পোহাতে হয়নি 'সিটিজেন'দের। ম্যাচের শেষদিকে ফার্নান্দিনহোকে ভয়ঙ্কর ট্যাকেল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন সাউদাম্পটনের গোলদাতা হোয়েবার্গ। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধের ঐ ৩ গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে 'সিটিজেন'রা।
এর আগে এনগোলো কান্তের একমাত্র গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে হারিয়েছে চেলসি। তিনে থাকা টটেনহামের সাথে তাই ব্যবধানও কমিয়ে এনেছে মরিজিও সারির দল। তাদের চেয়ে দুই পয়েন্টে পিছিয়ে চেলসি আছে ৪ নম্বরেই।