শুভেচ্ছা, মাইক্রোফোনের মাস্টাররা!
সকালে রোদটা এখানে মোলায়েম। হেমন্তের মিষ্টি রোদ যেন সবসময়। যদিও ঘুমাতে যাওয়া বা ওঠা এখানে সম্পূর্ন ঐচ্ছিক, কড়া এককাপ কফি লাগে তবুও, সকালের ঘুমটা ভাঙ্গাতে। নিজেকে চাঙ্গা করতে। কতদিনের অভ্যাস! গলাটারও একটু পরিচর্যা করতে হয়। আজকের দিনটা একটু আলাদা। মিষ্টি রোদটাও যেন বিশেষ কিছুর বার্তা নিয়ে আসছে। কফিটাও বেশী চাঙ্গা করে তুলছে যেন! দশটায় একটা ম্যাচ আছে, পাঁচদিনের প্রীতি টেস্ট ম্যাচ। আজ প্রথম দিন। বাংলাদেশের একটা স্পিনার এসেছে, আজ অভিষেক হবে। আরেক অস্ট্রেলিয়ানেরও অভিষেক আজ। দুজনই বাঁহাতি।
আরেকজনের হদিস নেই। আসার পর থেকেই এই কান্ড শুরু করেছেন। অথচ মর্নিং সেশন তাঁকে ছাড়া শুরু হবে না। কেরি বলে দিয়েছেন, মর্নিং সেশনটা তাঁকে দিয়েই শুরু করাতে। শেষটা আগের মতোই হবে।
রিচির কফিটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনটা যে তাঁর জন্যও স্পেশাল, সেটা কি ভুলে গেলেন তিনি! খেলা শুরুর আগে নাকি দুজনকেই সম্মান জানানো হবে। কেন যে এত কিছু করতে যান, ওই কেরি মানুষটা কে জানে!
‘মর্নিং, টনি’!
অবশেষে এলেন।
‘মর্নিং। হ্যাপি বার্থডে!’
‘ওহ ইয়েশ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ঠু মেট!’
পিচ রিপোর্টটা টনিই করেন। এখন বৃষ্টি নেই তেমন, তবুও আবহাওয়া নিয়ে কিছু একটা বলা চাইই তাঁর। আজ নাকি দুজনকেই থাকতে হবে। টসের কয়েনের দু'দিকে দুজনের মুখাবয়ব আছে। টসের নিয়মটাও তাই আলাদা। দু'দলকে আগে থেকেই বলা হয়েছে, টসের কোনদিকটা পড়লে কে জিতবে! আলাদা করে ‘কল’ করার দরকার নেই। দুই একাদশের নামও দুজনের নামেই, ‘ট্রেমেন্ডাস টনি’ আর ‘শুপার্ব রিচি’। হ্যাঁ, শুপার্বই। ‘এস’ এর পর যাতে ‘এইচ’ থাকে, কেরি সেটা নিজে বলে দিয়েছেন। থাকতেই হবে!
‘মর্নিং এভরিওয়ান! মর্নিং টনি!’
‘ইয়াহ গুড মর্নিং রিচি। ওয়াট এ ম্যাচ উই আর গোয়িং টু হ্যাভ!’
তারপর?
মানজারুল ইসলামের ফ্লাইট বুঝতে নাকি হিমশিম খাচ্ছেন বোলাররা। তবে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন ফিলিপ হিউজ। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ডাবল সেঞ্চুরি করে তাঁর দিকে ব্যাট তুলেছিলেন। বাড়তি একটা প্রেরণা পেলেন যেন তারপর থেকেই!
‘ওয়ান্ডারফুল বোলিং ফ্রম দি ইয়াং ম্যান, ওয়াট এ বোলার, ওয়াট এ স্পিনার! অ্যান্ড হোয়াট অ্যাবাউট দিস লিটল ম্যান ব্যাটিং হিয়ার, রিচি, হোয়াট অ্যাবাউট হিম?’
‘মারভেলাস!’
কানে বাজে এখনও। ওই টেকো মাথার ভরাট কন্ঠ, মাথাভর্তি স্বর্নকেশী ওই ভদ্রলোকের কন্ঠের সেই মাদকতা! নেশা লাগে যেন।
সেই নেশাতে ভর করেই হয়তো এমন কিছুর কল্পনা।
প্রজন্মের কেন শুধু, ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা দুই কমেন্টেটর যে ছিলেন তাঁরা। আর মানুষ হিসেবে, ক্রিকেটার হিসেবে?
রিচি বেনো ছিলেন অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে একটা প্রতিষ্ঠান, ইংলিশদের বোধহয় টনি গ্রেগ আক্ষেপ জুগিয়েই গেছেন আজীবন।
শুভ জন্মদিন, মাস্টারস অব দ্য মাইক্রোফোন!