• বিপিএল ২০১৯
  • " />

     

    দেশীদের আঁধারেও উজ্জ্বল তিন 'ম'

    দেশীদের আঁধারেও উজ্জ্বল তিন 'ম'    

    যন্ত্রণাদায়ক ধারাভাষ্য, নিম্নমানের সম্প্রচার, লো স্কোরিং উইকেট, মাঠে দর্শকদের নিম্নগামী গ্রাফ- মাঠ আর মাঠের বাইরের নানা ঝামেলায় বিপিএল যখন জেরবার, ঢাকা পর্বের শেষ তিন দিনে হঠাৎ করেই দারুণ জমজমাট। শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকা-রংপুরের ম্যাচ দিয়ে শুরু, এরপর খুলনা-চিটাগংয়ের সুপার ওভারের পর সিলেট পর্বের আগে শেষ দিনে রাজশাহী-রংপুর আর চিটাগং-কুমিল্লার আরও দুইটি রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ হলো। কিন্তু ঢাকার প্রথম পর্ব শেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য গর্ব না হোক, অন্তত আশা করার মতো কী হয়েছে? বিদেশীদের দাপটের ভিড়ে ইতিবাচক দিকগুলো আসলে হাতেই গুণে ফেলা যাবে। তার মধ্যেও মিরাজের অধিনায়কত্ব, মাশরাফি-জুনাইদের বুড়ো হাড়ের ভেলকি, আর মুশফিকের ওই চোখ ধাঁধাঁনো ইনিংসের কথা আসবে আগে।

    গত বারের চেয়ে এবারের বিপিএলে বিদেশী কমেছে একজন। কিন্তু চার জন হলেও ব্যাট হাতে বিদেশীদের দাপট কমেনি। রাজশাহী কিংস ছড়া বাকি সব ফ্র্যাঞ্চাইজিতেই টপ অর্ডারে বিদেশীরাই আলো ছড়াচ্ছেন। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি রান করাদের তালিকায় প্রথম তিনটা নামই তাই বিদেশী। রংপুরের রাইলি রুশো আছেন সবার ওপরে, এরপর সিলেটের নিকোলাস পুরান আর ঢাকার হজরতউল্লাহ জাজাই। চারে মুশফিকুর রহিম আছেন, তবে পাঁচ আর ছয়ের নামটাই বেশি বিস্ময় জাগাবে। নিজেদের সেরা সময় পেছনে ফেলে আসা খুলনার জুনাইদ সিদ্দিকী আর ঢাকার রনি তালুকদার আছেন এর পরেই।

    সেই তুলনায় দেশীদের মধ্যে যাদের ওপর আশাটা বেশি ছিল, তারাই হতাশ করেছেন বেশি। তামিম ইকবাল এখনও ছন্দ খুঁজে পাননি, চার ম্যাচে তাঁর রান ৬০। জাতীয় দলের হয়ে সীমিত ওভারে ফর্মে থাকা লিটন দাস, সৌম্য সরকারও ব্যর্থ। লিটন তিন ম্যাচে একবারও পারেননি দুই অঙ্ক ছুঁতে, আর সৌম্য চার ম্যাচে ২০ পেরুতে পারেননি একবারও। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটও খুলনার হয়ে আসছে না। বরং রংপুরের মোহাম্মদ মিঠুনই কিছুটা রান করছেন।

    ব্যাটিং থেকে বাংলাদেশের হিসেবে তৃপ্তি খোঁজার মতো কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিলই। আফিফ এক ম্যাচে দারুণ করেছেন, জাকির সর্বশেষ দুই ম্যাচে রান পেয়েছেন, একটি হয়েছেন ম্যাচসেরা। বরং মেহেদী হাসান মিরাজই চমকে দিয়েছেন সবাইকে। বাংলাদেশীদের মধ্যে টুর্নামেন্টে প্রথম ফিফটি তাঁরই করা, সেটিও এসেছে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করে।

    মিরাজ অবশ্য চমকে দিয়েছেন আরও একটা জায়গায়। রাজশাহী টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাঁকে অধিনায়ক করে প্রথম চমকটা দিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে মিরাজ খেই হারিয়ে ফেললেও পরের তিনটি ম্যাচেই প্রতিনিয়ত দিয়েছেন উন্নতি আর পরিণতবোধের ছাপ। মাশরাফি যেমন বলেছেন, ভবিষ্যতের জন্য হাতেখড়িটা এবারের বিপিএলে ভালোমতোই হয়ে যাচ্ছে অধিনায়ক মিরাজের।

    বোলিংয়ে অবশ্য বাংলাদেশীদেরই জয়জয়কার। এবং যথারীতি সবার ওপরে মাশরাফিই। রংপুর সর্বশেষ দুই ম্যাচ হেরে ধুঁকলেও অধিনায়ক প্রতি ম্যাচেই উজ্জ্বল। এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট, এর মধ্যে একটি আছে ৪ উইকেট। শীর্ষ দশে বিদেশী আছেন শুধু একজন, তিনি সম্ভবত এখন পর্যন্ত ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট রবি ফ্রাইলিঙ্ক। এর পর শফিউল, সাইফ উদ্দিন, তাসকিন, সাকিব, রুবেল... সব নামই দেশি। আরেকটা জায়গায় দেশীরা সবার ওপরে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ ওভার করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে নাঈম হাসানের ইকোনমিই সবচেয়ে কম, ৪.১২। পাঁচের নিচে ইকোনমি আছে শুধু আরেকজনের, রংপুরের বেনি হাওয়েল।

    একদম আনকোরাদের মধ্যে চমক দেখিয়েছেন যেমন ঢাকার আল ইসলাম আলিস। তবে এই ডানহাতি অফ স্পিনারকে নিয়ে এখনই উচ্ছ্বসিত হওয়া যাচ্ছে না, সন্দেহজনক অ্যাকশনের জন্য যে এর মধ্যেই আম্পায়ারদের কাঠগড়ায় নাম উঠেছে তাঁর। শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে বিপিএলের আরও অনেক আঁধারের মধ্যে এও একটা দাগ হয়ে থাকবে।