'মরা' সিলেটকে জাগিয়ে তুললেন লিটন-ওয়ার্নার
স্কোর
সিলেট সিক্সারস ২০ ওভারে ১৮৭/৫ (লিটন ৭০, ওয়ার্নার ৬১*; শফিউল ৩/৩১)
রংপুর রাইডার্স ২০ ওভারে ১৬০/৮ (রুশো ৫৮, মিঠুন ৩৫; তাসকিন ২/৩৪, রানা ২/৪০ )
ফলঃ সিলেট ২৭ রানে জয়ী
নিষ্প্রাণ উইকেট, লো স্কোরিং ম্যাচ- জেগে উঠতে থাকা বিপিএল সিলেটে এসে হঠাৎই যেন ঝিমিয়ে পড়েছিল। অবশেষে স্বাগতিক দলই আবার লাক্কাতুরার চা বাগানে ডাকল উচ্ছ্বাসের বান। লিটন দাসের ঝড়ের পর ‘ডানহাতি’ ডেভিড ওয়ার্নারে সিলেটের গ্যালারিতে উল্লাসের কোরাস। ১৮৭ রান করল সিলেট সিক্সারস, সিলেট পর্বে প্রথমবারের মতো দেখল চার-ছয়ের শো। রাইলি রুশো একা যা একটু চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সেই রান আর টপকানো হলো না রংপুর রাইডার্সের। ২৭ রানে হেরে গেল রংপুর, ছয় ম্যাচে এটি তাদের চতুর্থ পরাজয়। আর সিলেট সিক্সারস পঞ্চম ম্যাচে এসে পেল দ্বিতীয় জয়।
১৮৮ রানের লক্ষ্য সিলেটের উইকেটে এমন কঠিন কিছু ছিল না। মেহেদী মারুফ ৩ রান করেই আউট পেসার মেহেদী হাসান রানার বলে। অ্যালেক্স হেলস সুযোগ পেলেন , কিন্তু আরও একবার ব্যর্থ। রানার ওই ওভারেই অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দিলেন কাভারে লিটনকে। ক্রিস গেইল তখনও ছিলেন, এদিন তাঁর কাছ থেকে দারুণ কিছু আশা করেছিল রংপুর। কিন্তু ৭ রান করে তিনিও আউট সোহেল তানভীরের বলে। ১১ রানের মধ্যে নেই রংপুরের তিন উইকেট ।
তবে রাইলি রুশো ফর্মটা টেনে নিয়ে এলেন ঢাকা থেকে। আফিফের এক ওভার থেকে নিলেন ২২ রান, রানার পরের ওভার থেকে ১৬ রান। ওপাশে মিঠুনও যোগ দিয়েছেন সঙ্গে, ৬ ওভারের মধ্যে চলে এলো ৬২ রান। রুশো ঝড় থামেনি তখনও, ২৭ বলে পেয়ে গেলেন টুর্নামেন্টে নিজের তৃতীয় ফিফটি। কিন্তু ৩২ বলে ৫৮ রান করে বোল্ড হয়ে গেলেন তাসকিনের বলে, রংপুর পেল বড় একটা ধাক্কা। এরপর মিঠুনকেও যখন ৩৫ রানে ফিরিয়ে দিলেন তাসকিন, আশার প্রদীপটা আরও নিভু নিভু রংপুরের। মাশরাফির ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস শেষ পর্যন্ত ব্যবধানই কমাতে পেরেছে হারের।
তার আগে সিলেটের হয়ে শুরুটা করেছিলেন লিটন আর সাব্বির রহমানই। এই টুর্নামেন্টে নিষ্প্রভই ছিলেন লিটন, এই টুর্নামেন্টে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি একবারও। আজ প্রথম ওভারেই জানা দিলেন, দিনটা তাঁর হতে চলেছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রথম ওভারে চার দিয়ে শুরু, তৃতীয় ওভারে মারলেন আরও দুই চার। সোহাগ গাজীকে ছয় মেরে সেই পার্টিতে যোগ দিলেন সাব্বিরও, ওই ওভারে লিটন মারলেন আরও একটি ছয় ও চার। পাওয়ারপ্লে শেষে সিলেটের রান হয়ে গেল ৬১।
লিটন অনেকটা দেখতে দেখতেই পৌঁছে গেলেব ফিফটিতে, ২৯ বলে পেলেন এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম ফিফটি। তবে শুরুটা পেয়েও সাব্বির সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না, বেনি হাওয়েলের নাকল বলে ২০ বলে ২০ রান করে হয়ে গেলেন এলবিডব্লু। ডেভিড ওয়ার্নার এর আগে একটি ফিফটি পেয়েছিলেন বটে, তবে নিজেকে ঠিক সেভাবে চেনাতে পারছিলেন না। আজ মঞ্চটা প্রস্তুত ছিল তাঁর জন্য।
শুরুতে অবশ্য লিটনই ছিলেন মূল কুশীলব, ওয়ার্নার ছিলেন শুধু পার্শ্বঅভিনেতা। ১২তম ওভার থেকে ওয়ার্নার খেলতে শুরু করলেন হাত খুলে। মাশরাফির দ্বিতীয় স্পেলে এসে ছয়ের পর মারলেন দুই চার, সেই ওভারে ১৯ রান নিল সিলেট। কিন্তু লিটনের সাথে ৫৬ রানের জুটিটা ভেঙে গেল রান আউটে। গেইলের বলে দুই রান নিতে গিয়েছিলেন দুজন, কিন্তু লিটন দ্বিতীয় রানে নন স্ট্রাইকে পৌঁছানোর আগেই হাওয়েলের থ্রোতে বল ধরে গেইল ভেঙে দিয়েছেন স্টাম্প। ৪৩ বলে ৭০ রান করে আউট লিটন।
নিকোলাস পুরান চারে নেমে এলেন, ৫ রানের মাথায় হাওয়েল তাঁর সহজ ক্যাচও ফেলে দিলেন। শফিউলের বলে পর পর চার ও ছয়ে আরও একটা ঝড়ের আভাস যখন দিচ্ছেন, তখনই শফিউলের স্লোয়ারে বোল্ড ২৬ রানে। আজকের ম্যাচের সবচেয়ে বড় চমকের শুরু এরপর।
১৯তম ওভার করতে এলেন গেইল, প্রথম তিন বলে ওয়ার্নার পেলেন দুই রান। এরপর স্টান্স বদলে পুরোপুরি ডান হাতি হয়ে গেলেন। প্রথম বলটা গেইলের মাথার ওপর, পরের বলে চার, শেষ বলে রিভার্স সুইপে চার। ডান হাতি ওয়ার্নার তিন বলে নিলেন ১৪ রান।
শেষ ওভারে অবশ্য সেভাবে আর ঝড় তুলতে পারল না সিলেট, ওয়ার্নার অপরাজিত রইলেন ৩৬ বলে ৬১ রান করে। ১৮৭ রানে থামল সিলেট, দিন শেষে সেটাই হয়ে গেল যথেষ্টরও বেশি।