বিপিএলে কথা বলছে দেশীদের ব্যাট
ঢাকা পর্বের শেষ ম্যাচের আগেও বিপিএলের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, দেশী ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছে না কেন? সিলেট পর্বের শেষে এসে সেই উত্তর দেরিতে হলেও মিলেছে কিছুটা। মুশফিকুর রহিমের ৭৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস দিয়ে শুরু, এরপর জুনাইদ সিদ্দিকী, লিটন দাস, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের পর আজ রান পেলেন সাব্বির রহমানও। এর মধ্যে পাঁচ বছর পর টি-টোয়েন্টিতে নেমে চমকে দিয়েছেন মার্শাল আইয়ুবও। আজ রাজশাহী কিংসের অনুশীলন শেষে শাহরিয়ার নাফীস বললেন, অভিজ্ঞদের টি-টোয়েন্টিতে রান পাওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার।
মঞ্চটা বিশেষ করে বাংলাদেশের জাতীয় দলের সামনে সাজানোই ছিল। জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ রঙিন পোশাকে রান পেয়েছেন সৌম্য, ইমরুলরা। কিন্তু বিপিএল আসার পর থেকে হঠাৎ করেই যেন বোবা হয়ে গেল তাদের ব্যাট। টুর্নামেন্টের প্রথম সাত ম্যাচ শেষেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের ফিফটি নেই, শেষ পর্যন্ত তা এলো অপ্রত্যাশিতভাবে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে।
এরপর থেকে কথা বলতে শুরু করেছে দেশীদের ব্যাট। বিস্ফোরক ইনিংস যাকে বলে, সেটা প্রথম খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। কুমিল্লার থিসারা পেরেরার ৭৪ রানের ইনিংসের জবাব দিলেন ৪১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে। লিটন দাস প্রথম চার ম্যাচে দুই অঙ্কই ছুঁতে পারলেন না, এরপর ৪৩ বলে ৭০ রান। সাকিব আল হাসান ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে পাঁচ বছর ধরে বিপিএলে ফিফটি পাননি, সেই খরাটা ঘোঁচালেন ম্যাচ জেতানো ৪১ বলে ৬১ রানের ইনিংসে। তামিম ইকবালের ব্যাটও হাসছিল না, নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথম বারের মতো দুই ইনিংসে কোনো রান করতে পারেননি। কাল ৪২ বলে ৭৩ রানের ইনিংসে অবশেষে পেলেন রান। সাব্বির রহমানও রান পাচ্ছিলেন না, সপ্তম ম্যাচে এসে টুর্নামেন্টে প্রথম সেঞ্চুরির সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত না পেলেও ৫১ বলে ৮৫ রানের ইনিংসটা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ। ফিফটি না পেলেও মোহাম্মদ মিঠুন পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ধারাবাহিক।
তবে জাতীয় দলের বাইরে থাকা ব্যাটসম্যানদের রান পাওয়াও ছিল চমক। জুনাইদ সিদ্দিকী গত বছর বিপিএলে দলই পাননি, জাতীয় দলের বাইরে অনেক বছর ধরে। তবে কাল আজ সিলেট-রংপুর ম্যাচের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান ছিল তাঁর। পাঁচ বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন মার্শাল আইয়ুব।
দেশীদের বিশেষ করে অভিজ্ঞদের রান পাওয়াটা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন শাহরিয়ার নাফীস, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি টেস্ট ক্রিকেট ও টি-২০ ক্রিকেট যদিও যোজন যোজন দূরে, তারপরও এখানে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা সবসময় ভালো খেলে। তরুণরাও ভালো খেলে। তবে অভিজ্ঞতার একটা ভালো দাম আছে। যদি বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগ দেখেন, অভিজ্ঞ প্লেয়াররা কিন্তু দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসছে’। নাফীস নিজে অবশ্য অনেক দিন ধরেই জাতীয় দলের বাইরে আছেন, আগের ম্যাচে প্রথম সুযোগ পেয়ে করেছেন ২৫ রান।
রান পাওয়াটা শুধু বাকি আছে সৌম্য সরকারের। মাহমুদউল্লাহও সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচে এসে পেয়েছেন ফিফটি। রাজশাহী সতীর্থ নাফীস অবশ্য মনে করছেন, সৌম্যের রান পাওয়াটা সময়ের ব্যাপার, ‘সৌম্য দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সে খুব ভালো করেছে। আমরা বিশ্বাস করি অতি দ্রুত ও নিজের সেরা ছন্দে চলে আসবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে যেটা হয় সময় খুব কম থাকে, নিজের দিকে ফিরে তাকানোর সময় থাকে না। অনেক সময় দেখা যায়, যারা ভালো খেলছে তারা ভালো খেলতেই থাকে। যারা খারাপ খেলছে, তাদের সেটা চলতে থাকে। আশা করি সৌম্য তাড়াতাড়ি ফর্মে ফিরবে। এবং আমাদের জন্য ভালো পারফর্ম করবে।’