৭ গোলের থ্রিলারে প্যালেসকে হারালো লিভারপুল
ক্রিস্টাল প্যালেসের ভূত আরও একবার চেপে বসেছিল লিভারপুলের ওপর। ২০১৫ সালে এই প্যালেসের কাছে হেরেই শিরোপা স্বপ্ন বিসর্জন দিতে হয়েছিল অলরেডদের। এবার অ্যানফিল্ডেও লিভারপুলকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল প্যালেস। প্রথমার্ধে এগিয়ে ছিল তারা, এরপর লিভারপুল এগিয়েও গিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে। প্যালেসের হার না মানা মনোভাব আবারও তাদের ফিরিয়ে এনেছিল ম্যাচে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর লিভারপুলকে পয়েন্ট হারাতে হয়নি মোহামেদ সালাহর কল্যাণে। তাঁর জোড়া গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। দুইয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে শীর্ষস্থানে এখন ৭ পয়েন্টের লিডে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।
ডিসেম্বরে ম্যান সিটিকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল প্যালেস। সে ম্যাচে গোল করেছিলেন অ্যান্ড্রোস টাউনসেন্ড। অ্যানফিল্ডেও করলেন একই কাজ। অনেকটা ধারার বিপরীতে ৩৪ মিনিটে গোল করে প্যালেসকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন টাউনসেন্ড। বামদিক থেকে শুরু করা আক্রমণে ডিবক্সের ভেতর লেট রান নিয়ে ১০ গজ দূর থেকে সহজ ফিনিশে প্যালেসকে এগিয়ে দেন তিনি।
প্রথমার্ধে লিভারপুল গোলে শট নিয়েছিল ১০ বার, বিপরীতে প্যালেস নিয়েছিল মাত্র দুইবার। কিন্তু তবুও পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় লিভারপুলকে। অবশ্য বিরতির পরই ভোল পালটে ফেলে ক্লপের দল। ৪৬ মিনিটেই ম্যাচে ফেরত আসে তারা। তাতে ভাগ্যও সহায় ছিল লিভারপুলের পক্ষে। ভার্জিল ভ্যান ডাইকের বাড়ানো বল প্যালেস ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ডিবক্সের ভেতর সুবিধাজনক জায়গায় পেয়ে যান সালাহ। এরপর গোলরক্ষকের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে বাকি কাজ সারতে কোনো অসুবিধাই হয়নি মিশরীয় ফরোয়ার্ডের।
দ্বিতীয়ার্ধে সালাহর ওই গোলটা লিভারপুলের জন্য কাজ করেছে টনিকের মতো। এরপর আক্রমণে আরও ধার বাড়ায় লিভারপুল। বাম প্রান্ত দিয়ে নাবি কেইতার বাড়ানো বল ডিবক্সের ভেতর পেয়ে যান রবার্তো ফিরমিনো। এরপর দারুণ ফিনিশে ৫৩ মিনিটেই এগিয়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড এগিয়ে নেন দলকে। তবে লিভাপুলের আক্রমণের তোড়ে তখনও হারিয়ে যায়নি প্যালেস। ম্যাচের ঘন্টাখানেক পার হওয়ার পর কয়েকবার তারা ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল। সেই ইঙ্গিত সত্যিও হয়েছিল জেমস টমকিনসের গোলে। কর্নার থেকে হেডে গোল করে টমকিনস ২-২ করেন স্কোরলাইন।
কিন্তু ম্যাচের রোমাঞ্চ আসলে তখন কেবল শুরু। প্যালেসের বিপক্ষে লিভারপুলের একাদশে ফিরেছিলেন ফাবিনহো ও জেমস মিলনার। ৭৫ মিনিটে সালাহর গোলে এই দুইজনের অবদানই বেশি। ফাবিনহোর উড়িয়ে মারা বল ভলি করে ক্রস করেছিলেন মিলনার। এরপর প্যালেস গোলরক্ষক স্পেরোনিও করলেন ভুল, ক্রসটা ধরে গিয়েও ধরতে পারলেন না ঠিকঠাক। সালাহ ছিলেন জায়গা মতোই, সহজ ট্যাপ ইনে প্রিমিয়ার লিগে নিজের ৫০ তম গোলটা করে অ্যানফিল্ডে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন তিনি।
ম্যাচের বাকি সময় দেখলো আরও দুই গোল আর এক লাল কার্ড। ৮৭ মিনিটে উইলফ্রেড যাহাকে ফাউল করে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন মিলনার। দশ জনের দলে পরিণত হওয়ার আগেই অবশ্য একবার লিভারপুলকে শাস্তি দিতে পারত প্যালসে। ৮৩ মিনিটে ফাবিয়ান শুলপ কর্নার থেকে গোল করার দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেন। সেই ভুলের মাশুল প্যালেস গুনেছে ইনজুরি সময়ে। সাদিও মানেও যোগ দিয়েছিলেন বাকি দুই সতীর্থের সঙ্গে স্কোরারের খাতায়। মানের গোলের গুরুত্ব বোঝা গেছে মিনিট খানেক পরই। ৯৫ মিনিটেই আরও এক গোল শোধ দিয়েছিল প্যালেস। কিন্তু ৯৫ মিনিটে ম্যাক্স মেয়ারের গোলটা শেষ পর্যন্ত সান্ত্বনাই হয়ে থেকেছে প্যালেসের জন্য।
রাতে অন্য ম্যাচে ব্রাইটনকে ২-১ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পল পগবা ও মার্কোস র্যাশফোর্ডের গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। পরে ব্রাইটন এক গোল শোধ করলেও ওল্ড ট্রাফোর্ডে আর ফিরে আশা হয়নি তাদের। ইউনাইটেড ম্যানেজারে ওলে গানার সোলশায়ারের জয়যাত্রা তাই চলছেই!