সেঞ্চুরি, হ্যাটট্রিক, ৮০ রানে জয়- কুমিল্লা দেখাল সবকিছুই!
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ২৩৭/৫, ২০ ওভার (লুইস ১০৯*, ইমরুল ৩৯, শামসুর ২৮*)
খুলনা টাইটানস ১৫৭ অল-আউট, ১৮.৫ ওভার (টেইলর ৫০, রিয়াজ ৩/১৪, আফ্রিদি ৩/২৭)
কুমিল্লা ৮০ রানে জয়ী
সেঞ্চুরি। হ্যাটট্রিক। ৮০ রানের জয়। কুমিল্লা যেন ভুলেই গেল, ফরম্যাটটার নাম টি-টোয়েন্টি! অথবা বলা যায়, টি-টোয়েন্টির সংক্ষিপ্ত ফ্রেমেই তারা করে ফেললো এতো কিছু। খুলনা বিধ্বস্ত ছিল আগেই, এবার সেই বিধ্বস্ত ভূমিতে কুমিল্লা চালালো আরেক দফা তান্ডব। ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেও কুমিল্লা।
প্রথম ইনিংসেই খুলনাকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়ার কাজটা এগিয়ে রেখেছিলেন এভিন লুইস। চতুর্থ ম্যাচে চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন তিনি ব্যাটিংয়ের সময়, ৩৪ বলে সে ইনিংসে করেছিলেন ৩৮। চোট কাটিয়ে ফিরলেন, তুললেন টর্নেডো। লুইসে লন্ডভন্ড হয়ে গেল খুলনা টাইটানস। লুইসের ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও বিপিএলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ২৩৭ রান তোলা কুমিল্লা পরে খুলনাকে আটকে দিয়েছে ১৫৭ রানেই, ওয়াহাব রিয়াজের হ্যাটট্রিক ও শহিদ আফ্রিদির ৩ উইকেটের কল্যাণে।
চট্টগ্রামে বিপিএল দেখছে অনেক অনেক রান, সেখানে অবশ্য প্রথমে একটু চুপচাপই ছিল কুমিল্লা। প্রথম ১১ ওভারে কুমিল্লার রান ছিল ৮৩, ২ উইকেটে। ১২তম ওভারে মাহমুদউল্লাহর ওভারে এলো ১৭। ঝড়টা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। শেষ ৯ ওভারে কুমিল্লা তুললো ১৫৪ রান, ওভারপ্রতি ১৭.১১ হারে! এ ঝড়ের পেছনে মূল অবদান এভিন লুইসের, এই ক্যারিবীয় ৪৯ বলে করেছেন অপরাজিত ১০৯ রান, ৫ চারের সঙ্গে মেরেছেন ১০টি ছয়!
লুইসের এই ইনিংসটি এ বিপিএলের সর্বোচ্চ, সেঞ্চুরির হিসেবে চতুর্থ। শুরুটা কুমিল্লার জন্য দৃঢ়ই করেছিলেন তামিম ইকবাল ও লুইস। পরপর দুই বলে তামিম ও এনামুলকে ফিরিয়ে খুলনাকে ঠিক পথে রেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ৮ থেকে ১১- এই ৪ ওভারে উঠেছিল মাত্র ২৬। তবে লুইসের ভেতরের দানব যে এরপরই জেগে উঠবে, সেটা কে জানতো! মোহাম্মদ সাদ্দামের ১৪তম ওভারে উঠলো ২৮ রান, শরিফুলের করা পরের ওভারে ২২। লুইস সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন শেষ ওভারে গিয়ে, সাদ্দামের বলে ছয় মেরে। সাদ্দাম ৪ ওভারে গুণেছেন ৫৯ রান, যা বিপিএলে ৪ ওভারে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড।
লুইসের ঝড়ের সঙ্গে ক্যামিও খেলেছেন ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমানও। কায়েস করেছেন ২১ বলে ৩৯, শামসুরের রান ১৫ বলে ২৮। সব মিলিয়ে কুমিল্লা গেছে ২৩৭ রান পর্যন্ত, যা বিপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্কোরের চেয়ে মাত্র ২ রান কম। তিনদিন আগে এ ভেন্যুতেই রংপুর রাইডার্স তুলেছিল ৪ উইকেটে ২৩৯ রান, চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে।
এমনিতেই খুলনার অবস্থা এ টুর্নামেন্টে সুবিধার নয়, তার ওপর এতো বড় লক্ষ্য তাদের কাছে যেন অসম্ভবের চেয়েও বেশি কিছু। প্রথম ওভারে ব্রেন্ডন টেইলরের তিন চারে উঠলো ১৪ রান। তবে এরপর অসম্ভব লক্ষ্যটা শুধু দূরেই সরে গেছে খুলনার কাছ থেকে।
পাওয়ারপ্লেতেই মেহেদি হাসান নিজের দুই ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৯ রান, জুনাইদ সিদ্দিককে ক্যাচ বানিয়ে প্রথম ব্রেকথ্রু দিয়েছেন তিনিই। খুলনারও পেখম মালা হয়নি আর, ব্রেন্ডন টেইলরের ৩৩ বলে ৫০ রানের ইনিংস গড়তে পারেনি কোনও পার্থক্যই। টেইলরের আগে মাহমুদউল্লাহ ও ডেভিড মালানকে ফিরিয়েছেন আফ্রিদি।
কার্লোস ব্রাথওয়েট, নাজমুল হোসেন শান্ত ও আরিফুল হকও কিছু করতে পারেননি, প্রথম দুজনকে যথাক্রমে ফিরিয়েছেন পেরেরা ও সাইফউদ্দিন। আফ্রিদির সরাসরি থ্রো-তে রান-আউট হয়েছেন আরিফুল। ১৯তম ওভারে এরপর হ্যাটট্রিক হয়ে গেছে রিয়াজের।
প্রথমে ডেভিড ভিসে দিয়েছেন মিডউইকেটে ক্যাচ, তাইজুল হয়েছেন বোল্ড। হ্যাটট্রিক বলে মিড-অফে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন সাদ্দাম।
সেঞ্চুরি, হ্যাটট্রিক, ৮০ রানের জয়- কুমিল্লা যেন ভুলেই গেল ফরম্যাটটার নাম টি-টোয়েন্টি!