ঝড় তুললেন ডি ভিলিয়ার্স-হেলস, দেখল ঢাকা
স্কোর
ঢাকা ডায়নামাইটস ২০ ওভারে ১৮৬/৬ (রনি ৫২, পোলার্ড ৩৭*; ফরহাদ ২/৩২)
রংপুর রাইডার্স ১৮.২ ওভারে ১৮৯/২ (ডি ভিলিয়ার্স ১০০*, হেলস ৮৫*; রাসেল ২/৩০)
ফলঃ রংপুর ৮ উইকেটে জয়ী
ক্রিস গেইল পারছেন না, আজও হলো না তাঁর। রাইলি রুশো আগে পারলেও পারেননি আজ। কিন্তু রংপুর রাইডার্সের টপ অর্ডারের ঝড় কি আর তাতে থামানো যায়? এবি ডি ভিলিয়ার্স তো বাকিদের ব্যাটিং দেখার জন্য আসেননি বিপিএলে, অ্যালেক্স হেলসও পেয়ে গেছেন ছন্দ। ঢাকা ডায়নামাইটসের করা ১৮৬ রানের লক্ষ্যও তাই হয়ে গেল মামুলি, রংপুর সেটা টপকে গেল ১০ বল হাতে রেখে। আগের ম্যাচের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিল রংপুর, ১২ পয়েন্ট নিয়ে উঠে গেল পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই। আর ৯ ম্যাচে ঢাকার পয়েন্ট রইল ১০-ই।
অথচ ঢাকার শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। এবারের মৌসুমে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে ঢাকার শাহাদাত হোসেন প্রথম ওভারে দিয়েছিলেন ৪ রান। ক্রিস গেইলের প্রতিটি শট মনে করিয়ে দিচ্ছিল, তাঁর ব্যাট কথা বলছে না। আন্দ্রে রাসেলের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলটা মারতে গিয়ে টাইমিং হলো না ঠিকমতো, ক্যাচ তুলে দিলেন মিড অনে। ১ রান করে আউট গেইল, তবে ঢাকা সত্যিকারের আশা পেল পরের বলে। রাসেলের বলটা পুল করতে গিয়ে রুশোর গ্লাভসে লেগে উঠে গেল, কিপার নুরুল হাসান ধরলেন সহজ ক্যাচ। দুই বলের ব্যবধানে নেই গেইল-রুশো, ৫ রানের মধ্যে নেই রংপুরের ২ উইকেট।
ডি ভিলিয়ার্স প্রথম বলেই মারলেন ছয়, পরের ওভারে হেলসও সাকিবের বলে মারলেন চার-ছয়। ডি ভিলিয়ার্স রাসেলের পরের ওভার থেকে নিলেন ১৭ রান, আক্ষরিক অর্থেই ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিংয়ে উইকেটের চার পাশে শট খেলতে শুরু করলেন। কাজী অনীককে ছয় মেরে ২৪ বলে পেলেন এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম ফিফটি। হেলস একটু পিছিয়ে পড়েছিলেন, নারাইনের বলে চার মেরে ফিফটি পেলেন ৩৪ বলে।
ডি ভিলিয়ার্স অবশ্য এরপর একটু বিরতি দিয়েছেন। নারাইন-রুবেলকে ছয় মেরে হেলস তাঁকে ছুঁয়ে ফেললেন, দুজনেই ঢুকে গেলেন সত্তরের ঘরে। এরপর রুবেলের ওপর দিয়েই তোপ চালিয়েছেন ডি ভিলিয়ার্স, পর পর তিন বলে মেরেছেন তিন চার। দেখতে দেখতে ঢুকে গেলেন নব্বইয়ে ঢুকে গেলেন, টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পেলেন ৫১ বলে। ১০ বল বাকি থাকতেই ৮ উইকেটে জিতে গেল রংপুর।
অথচ রংপুরের ব্যাটিং অর্ডারের কথা ভেবেই হয়তো আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। প্রথম কয়েক ওভারে হজরতউল্লাহ জাজাজি আর সুনীল নারাইনকে খোলসেই বেঁধে রেখেছিলেন মাশরাফিরা। জাজাই আরও একবার ব্যর্থ, ধুঁকতে থাকা ১৮ বলে ১৭ রানের ইনিংসটা শেষ হলো ফরহাদ রেজার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। নারাইনই যা একটু হাত খুলে খেলতে শুরু করেছিলেন, কিন্তু আবারও দৃশ্যপটে ফরহাদ। এবার বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা মাথার দারুণ ক্যাচে ফেরালেন নারাইনকে, ১৯ বলে ২৮ রানের ইনিংস শেষ হলো অপুর বলে। ৫১ রানে ২ উইকেট নেই রংপুরের, রান রেট তখন আটেরও কম।
সাকিব আল হাসান আর রনি তালুকদার নেমে সেটি দ্রুত বাড়ানো শুরু করলেন। মাশরাফির এক ওভারে দুই চার মারলেন আকিব, রনি মারলেন আরও একটি। আবার শহিদুলের ওভারে সাকিব মারলেন একটি, রনি মারলেন দুইটি। ১০০ রান চলে এলো ১১ ওভারের মধ্যেই। আবারও ফরহাদের আঘাত, এবার ১২ বল ২৫ রান করে বোল্ড সাকিব। রাসেল অপুর বলে চার ছয়ে বড় কিছুর আভাস দেখাচ্ছিলেন, কিন্তু দিনটা যে ফরহাদের! মাশরাফির বলে বিপজ্জনক রাসেলের ক্যাচটা প্রায় উড়ে গিয়ে ধরলেন বাউন্ডারিতে, বিপিএলে বাংলাদেশের কারও সম্ভবত এটিই সেরা ক্যাচ। ৮ বলে ১৪ রানে ফিরলেন রাসেল, রংপুরের ২০০র স্বপ্ন বড় ধাক্কা খেলো।
রনি অবশ্য দারুণ খেলছিলেন, ২৯ বলে পেয়ে গেলেন ফিফটিও। কিন্তু শফিউলের বলে ফিরে গেলেন ৩২ বলে ৫২ রান করে। এরপর ঢাকার যা একটু আশা ছিল পোলার্ডের ওপরেই, কিন্তু সেভাবে ঝড় তুলতে পারলেন কই? শুভাগত কিছু করতে পারলেন না, নুরুল হাসান সোহান তো বল ব্যাটেই লাগাতে পারছিলেন না। পোলার্ড ঠিক করলেন, যা করার তাঁকেই করতে হবে। শেষ ওভারে দুই চার মারলেন বটে, কিন্তু তিনটি বলে সিঙ্গেলও নিলেন না। শেষ পর্যন্ত ১৮৬ রানেই থামল ঢাকা। খুব খারাপ মনে হচ্ছিল না স্কোরটা, কিন্তু ডি ভিলিয়ার্স-হেলসে সেটা যে এত মামুলি হয়ে যাবে, কে ভেবেছিল?