ঢাকাকে হারিয়ে শেষ চারে চিটাগং
চিটাগং ভাইকিংস ১৭৪/৫, ২০ ওভার (ডেলপোর্ট ৭১, মুশফিক ৪৩, রাসেল ৩/৩৮)
ঢাকা ডায়নামাইটস ১৬৩/৯, ২০ ওভার (সাকিব ৫৩, রাসেল ৩৯, আবু জায়েদ ২/২৫, শনাকা ২/৩৪)
চিটাগং ১১ রানে জয়ী
সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আশেপাশে কান পাতলেই টিকিটের জন্য হাহাকার। গ্যালারিঠাসা দর্শক, কিন্তু মুখে নেই হাসি। থাকবে কীভাবে, চিটাগং ভাইকিংস যে ঘরের মাঠেই জিততে ভুলে গিয়েছিল! অবশেষে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১১ রানে হারিয়ে জয়খরা কাটাল চিটাগং, ১৪ পয়েন্ট নিয়ে উঠে গেল শেষ চারে। আর টানা চতুর্থ হারে ঢাকার শীর্ষ চার নিয়েই এখন সংশয়।
চট্টগ্রামের উইকেটে ১৭৪ খুব বেশি রান নয়। কিন্তু যেরকম শুরু দরকার, ঢাকার হলো ঠিক তার উলটো। প্রথম ওভারেই রাহীর বলে আউট সুনীল নারাইন। তৃতীয় ওভারে আউট রনি তালুকদারও, সেই রাহীর বলেই। ১৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলল ঢাকা। পরের ওভারে যখন মিজানুরও নেই, ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে ঢাকা। সেখান থেকে সাকিব আল হাসান আর ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে উঠে আসা নুরুল হাসান সোহান মিলে টেনে তুললেন ঢাকাকে।
নাঈমের এক ওভারে ছয়-চার-ছয় নিলেন সোহান, ৯ ওভার শেষে ঢাকা পৌঁছে গেল ৭১ রানে। ২৩ বলে ৩৩ রান করে ডেলপোর্টের বলে এলবিডব্লু সোহান, ক্রিজে পোলার্ড আর সাকিব। কিন্তু এরপর পোলার্ড যা করলেন, সেটা ব্যাখ্যার অতীত। ডেলপোর্টের বল ফিল্ডারের হাতে যাওয়ার পরও দৌড় দিলেন, হাস্যকরভাবে রান আউট হয়ে ফিরলেন প্রথম বলেই।
তবে সাকিব আর রাসেল ছিলেন, সুযোগ ছিল ঢাকার তখনও। রাসেল তাঁর মতো করে ঝড় শুরু করেছিলেন, ডেলপোর্টের এক ওভারে চার-ছয়ও নিলেন। তবে ডেলপোর্টের বলেই হয়ে গিয়েছিলেন বোল্ড, কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে সেটি ছিল নো বল। কিন্তু রাসেল পারলেন না সুযোগটা কাজে লাগাতে, ২৩ বলে ৩৯ রান করে আউট শানাকার বলে।
তখন অবশ্য ঢাকার সামনে সমীকরণটা সহজ বানিয়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু সাকিব একা আর পারলেন না। শুভাগত ৫ রান করে আউট, শেষ ২ ওভারে দরকার হলো ২৬ রান। সাকিব দ্বিতীয় বলে চার মারলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না। ৪২ বলে ৫৩ রান করে আউট হলেন পরের বলেই। শেষ ওভারে ৬ রানের বেশি হলো না, চিটাগং জিতল ১১ রানে।
তার আগে ব্যাট হাতেও চিটাগংকে পথ দেখিয়েছেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। এই টুর্নামেন্টে রান পাচ্ছিলেন না , আগের ম্যাচে তো লোয়ার অর্ডারেই নেমে গিয়েছিলেন। আজ আবার ওপেনিংয়ে এলেন, অবশেষে পেলেন রানের দেখা। শুরুটা অবশ্য মন্থর ছিল চিটাগংয়ের, প্রথম ৩ ওভারে রান এলো মাত্র ৭। তবে মোহাম্মদ শাহজাদ কি আর বেশিক্ষণ চুপ করে বসে থাকতে পারেন? রাসেলের চতুর্থ ওভারেই চারটি চার মারলেন। কিন্তু এক ওভার পরেই উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে এলেন, সুনীল নারাইনের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড। ১৫ বলে ২১ রান করে আউট শাহজাদ, পাওয়ারপ্লেতে রান এলো ৪৪।
ডেলপোর্ট প্রথম আগ্রাসী হলেন ১১তম ওভারে সাকিবের বলে পর পর দুই ছয় মেরে। ইয়াসির আলীও দুইটি চার পেয়ে গেছেন, তবে আজ আর ইনিংসটা বড় করতে পারলেন না। ২০ বলে ১৯ রান করে আউট হলেন নারাইনের বলেই। মুশফিক এলেন, আর সাগরিকার গ্যালারি উত্তাল হওয়াও শুরু করল এরপর। এর মধ্যে ৪৩ বলে টুর্নামেন্টের প্রথম ফিফটি পেয়ে গেছেন ডেলপোর্ট, অন্য পাশে রুবেলের বলে প্রথম ছয় পেয়ে গেছেন মুশফিক।
তবে চট্টগ্রাম ১৮০র স্বপ্ন দেখতে শুরু করল ১৮তম ওভারে এসে, রুবেলের ওই ওভার থেকে ১৫ রান করলেন মুশফিক-ডেলপোর্ট। বিশেষ করে লেংথ ডেলিভারিটা যেভাবে তরবারির মতো চালিয়ে মুশফিক মিড উইকেটের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেললেন, অনেক দিন মনে রাখার মতো তা। ১৯তম ওভারেও এলো ১২ রান, চট্টগ্রামের রান ২ উইকেটে ১৬৭।
তবে শেষ ওভারে এসে গড়বড় হয়ে গেলো সব, রাসেল পর পর তিন বলে পেলেন তিন উইকেট। ২৪ বলে ৪৩ রান করে আউট মুশফিক, ৫৭ বলে ৭১ রান করে আউট ডেলপোর্ট। শেষ বলে সিকান্দার রাজা ছয় না পেলে রান ১৭৪ও হয় না। কে জানত, সেটাই হয়ে যাবে জয়ের জন্য যথেষ্ট?