ইতিহাস গড়ে কাতারের এশিয়া জয়
বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাচ্ছে তারা। কাতারকে নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি এতদিন। সব সমালোচনার জবাব কাতার দিল ইতিহাস গড়ে। এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেই চমক লাগিয়ে দিয়েছিল কাতার। সেখানেই থামল না তারা, ফাইনালে জাপানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিয়েছে তারা।
ইতিহাস, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট- সবকিছুই ছিল কাতারের বিপক্ষে। সেমিফাইনালে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পর মাঠে দর্শকদের বিরূপ আচরণের শিকার হয়েছিল কাতারি খেলোয়াড়েরা। গ্রুপ পর্বে সৌদি আরবকেও হারিয়েছিল কাতার। শেষ পর্যন্ত সেই আরব আমিরাতের মাঠে তাঁরা টুর্নামেন্ট শেষ করলো শিরোপা জিতেই।
জায়েদ স্পোর্ট সিটি স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধেই খেলাটা পকেটে পুরে ফেলেছিল কাতার। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা ফাইনালেও করেছেন গোল। ১২ মিনিটে জন্ম দিয়েছেন অভূতপূর্ব মুহুর্তের, অতিমানবীয় এক গোল করে। আকরাম আফিফের ডান দিক থেকে দেওয়া বল ডিবক্সের ভেতর রিসিভ করেছিলেন আলময়েজ আলি। বল মাটিতে পড়তে না দিয়েই করলেন আরেক টাচ, এরপর দারুণ এক ওভার হেড কিকে খুঁজে পেলেন গোলের ঠিকানা। টুর্নামেন্টে আময়েজের নবম গোলে স্বপ্নের শুরু করে কাতার।
এরপর ২৭ মিনিটে আব্দুল আজিজ হাতেমও দেখার মতো এক গো করলে তখনই শিরোপা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে কাতার। ২৫ গজ দূর থেকে বাম পায়ের বাঁকানো শটে গোল করেন হাতে। প্রথমার্ধে কাতারের তুলনায় জাপান ছিল সাদামাটা। আক্রমণে তেমন সুবিধাই করতে পারেনি তাঁরা। উলটো কাতারই আরও দুইটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল, সেগুলো থেকে গোল পেলে প্রথমার্ধেই ফল নির্ধারণ হয়ে যেতে পারত ফাইনালের।
দুই গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুটা মন্দ করেনি কাতার। ৫৬ মিনিটে হাতেমই দ্বিতীয় গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। ৬৯ মিনিটে অবশ্য জাপান এক গোল শোধ দেয়। তাকুমি মিনামিনো গোল করে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরিয়ে আনেন। এরপর জাপানের আক্রমণেও ধার বাড়ে।
কিন্তু ৮৩ মিনিটে জাপানের সব আশা শেষ হয়ে যায় ভিএআরের সিদ্ধান্তে। কর্নার থেকে হেড করেছিলেন কাতারের খেলোয়াড়, পরে সেই বল হাতে লাগে জাপান অধিনায়ক মায়া ইয়োশিদার। ভিএআরের পরামর্শে পরে নিজেও রিপ্লে দেখেন রেফারি, দেন পেনাল্টির সিদ্ধান্ত। আলময়েজের ৯ গোলের ৫ টিই এসেছিলেন আকরাম আফিফের অ্যাসিস্ট থেকে। আফিফই নিতে গেলেন পেনাল্টি। ৮৩ মিনিটে স্পটকিক থেকে গোল করে ব্যবধান ৩-১ করেন আফিফ। শেষদিকে জাপানও এক গোল শোধ দিতে পারত, কিন্তু ইয়োশিদার হেড অল্পের জন্য চলে যায় বাইরে দিয়ে। বাকি সময়ে মনঃসংযোগ ধরে কাতার আর পথ হারায়নি। ফিফা র্যাংকিং এ ৯৩ থাকা দলটিই এশিয়ার ৪ বারের চ্যাম্পিয়ন জাপানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে শিরোপা জিতে। বিশ্বফুটবলে আগমনী বার্তাটা তাই দিয়েই রাখল কাতার।