সবটা না হলেও শেষটা ভাল হলো সিলেটের
সিলেট সিক্সারস ১৬৫/৫, ২০ ওভার (ফ্লেচার ৬৬, নওয়াজ ৩৪, সাব্বির ৩২, ভিলজোয়েন ৪/২৯, নাঈম ১/১৪)
চিটাগং ভাইকিংস ১৩৬, ১৮.৩ ওভার (মুশফিক ৪৮, ইয়াসির ২৭, মোসাদ্দেক ২৫, এবাদত ৪/১৭, পারনেল ২/২২)
সিলেট ২৯ রানে জয়ী
সিলেটের বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। বার তিনেক অধিনায়ক বদল হয়েছে তাদের, মাঝপথেই তাদের ফেলে চলে যেতে হয়েছিল ডেভিড ওয়ার্নারকে। তবে শেষটা অবশ্য ভালই হলো সিলেটের। আন্দ্রে ফ্লেচার ও মোহাম্মদ নওয়াজে ভর করে ১৬৫ রান করা সিলেট দারুণ ফিল্ডিং ও বোলিংয়ে আটকে দিয়েছে চিটাগং ভাইকিংসকে। চিটাগংয়ের শেষ চার আগেই নিশ্চিত হয়েছে, তবে প্লে-অফে শীর্ষ দুইয়ের জায়গা নিশ্চিত করার ভাল একটা সুযোগ ছিল তাদের সামনে। সেটি হারিয়েছে তারা।
রানতাড়ায় পথটাও শুরুতেই হারিয়েছিল চিটাগং, ২ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়েছিল তারা। ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়েও দিনটা বাজে গেছে আশরাফুলের, তাসকিনের ব্যাক অফ লেংথের বল খোঁচা মেরে হয়েছেন কট-বিহাইন্ড। এবাদতকে পুল করতে গিয়ে মিড-অনে ধরা পড়েছেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। ইয়াসির-মুশফিকের জুটি জমছিল ভালই, ২৬ বলে ২৭ করার পর উড়ান দিতে চেয়েছিলেন ইয়াসির। তবে তাকে থামতে হয়েছে ‘সুপারম্যান’ জ্যাসন রয়ের কাছে।
কাপালির লং-হপে টেনে মেরেছিলেন ইয়াসির, মিড-উইকেটে বাঁদিকে লাফিয়ে উঠে শরীরের পেছনে এক হাতে রয় ধরেছেন অন্যতম সেরা এক ক্যাচ। এরপর যেভাবে ভার সামলেছেন ঠিক বাউন্ডারি-ছোঁয়া দূরত্বে, সেটি সে ক্যাচকে বানিয়েছে আরও দারুণ।
মুশফিকের সঙ্গে মোসাদ্দেকের জুটি অবশ্য এগিয়ে নিচ্ছিল চিটাগংকে। নওয়াজকে দুই চারের পর কাপালিকে দুই ছয় মেরেছিলেন মোসাদ্দেক। এবাদতের ফুললেংথ বলে তুলে মারতে গিয়ে অবশ্য মিড-অফে ধরা পড়েছেন ১৫ বলে ২৫ রান করে। সিকান্দার রাজাও এরপর টেকেননি বেশিক্ষণ, নওয়াজের বলে তিনি ধরা পড়েছেন লং-অফে, ছুটে এসে এ ক্যাচটাও দারুণ নিয়েছেন আফিফ।
চিটাগংয়ের আশা তখনও শেষ নয়, ছিলেন মুশফিকুর রহিম। নাবিল সামাদকে প্রথম রিভার্স সুইপে চার মেরে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দারুণ কিছুর। এরপর একই বোলারকে পরে আরেকটি ছয় মারলেন রিভার্স সুইপে। আবার নাবিল এলেন, মুশফিক টেনে মিডউইকেট দিয়ে ছয়ের পর আবারও রিভার্স সুইপে মারলেন চার। তবে তাকে থামতে হলো উইকেটকিপার জাকের আলির দারুণ ফিল্ডিংয়ে।
পারনেলের বলে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন মুশফিক ও শনাকা, জাকের ছুটে এসে এক স্টাম্পের দৃষ্টিসীমায় সেটা লাগিয়েছেন দারুণভাবে। এরপরের গল্পটা অবশ্য শুধুই সিলেটের। এক ওভারে এবাদত ফিরিয়েছেন শনাকা ও ভিলজোয়েনকে। শনাকা পরিণত হয়েছেন তাসকিন আহমেদের বদলি ফিল্ডার মেহেদি রানার দ্বিতীয় ক্যাচে, ভিলজোয়েন হয়েছেন বোল্ড। ২ ওভার করে ফিল্ডিংয়ের সময় বাম অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়ে উঠে গেছেন তাসকিন। পারনেল পরে পরপর দুই বলে বোল্ড করেছেন আবু জায়েদ ও খালেদ আহমেদকে।
এর আগে হারডাস ভিলজোয়েনের বিপিএল অভিষেকটা হয়েছিল দারুণ, ২৯ রানে নিলেন ৪ উইকেট। প্রথম ওভারে শর্ট অফ আ লেংথ থেকে কাট করতে গিয়েছিলেন আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলির নেওয়া তিন ক্যাচের প্রথমটিতে পরিণত হয়েছেন তিনি স্লিপে। জ্যাসন রয় করতে গিয়েছিলেন পুল, ধরা পড়েছেন শর্ট মিডউইকেটে। ১৯তম ওভারে এসে ভিলজোয়েন নিয়েছেন আরও দুইটি, পরপর দুই বলে মোহাম্মদ নওয়াজের পর আন্দ্রে ফ্লেচার দিয়েছেন ক্যাচ।
সিলেটের ব্যাটিংয়ের হাইলাইটস ছিল ফ্লেচার ও নওয়াজের ইনিংস দুটিই। প্রথম ওভারে আবু জায়েদকে চার-ছয়ের পর তৃতীয় ওভারে খালেদকে তিন চারে শুরুটা ঝড়ো করেছিলেন ফ্লেচার। তৃতীয় উইকেটে সাব্বির রহমানের সঙ্গে তার জুটিতে উঠেছিল ৬৫ রান। ২৫ বলে ৩২ করে সাব্বির ফিরলেও ফ্লেচার ছিলেন ১৯তম ওভার পর্যন্ত, ৫৩ বলে করেছেন ৬৬, ৬ চার ও ২ ছয়ে। দাশুন শনাকা ও ক্যামেরন ডেলপোর্টকে ছয় দুটী মেরেছিলেন সাব্বির।
শেষদিকে নওয়াজ তুলেছিলেন ঝড়, ২ চার ও ৩ ছয়ে ১৯ বলে তার ৩৪ রানের ইনিংসে ভর করেই ১৫০ ছাড়িয়েছে সিলেট। এতে অবশ্য অবদান ছিল চিটাগংয়ের পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়েরও, একাধিক ক্যাচ মিসের সঙ্গে রান-আউটের সুযোগও হারিয়েছে তারা।
পরে বড় পার্থক্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সেসবই। সিলেট ফিল্ডিংয়ে যতটা দুর্দান্ত ছিল, ততটাই পিচ্ছিল ছিল চিটাগং।