• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    হিগুয়াইন, হ্যাজার্ডে স্বরূপে চেলসি

    হিগুয়াইন, হ্যাজার্ডে স্বরূপে চেলসি    

    এসি মিলানে যোগ দেওয়ার পর থেকে যেন গোল করতে ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। গোলখরায় ভুগছিল চেলসিও। তবে গোলের সমস্যা সমাধানে যখন গঞ্জালো হিগুয়াইনকে দলে নিল চেলসি, তখন ম্যানেজার মরিজিও সারির সমালোচনায় মুখর ছিলেন কট্টর 'ব্লুজ' সমর্থকেরাই। তবে নিজের নতুন 'হোম' স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে খেলা প্রথম ম্যাচেই নিজেকে চেনালেন হিগুয়াইন। নাপোলিতে এই সারির অধীনে ছিলেন রক্ষণভাগের ত্রাস। নাপোলির হালকা নীল ছেড়ে চেলসির গাঢ় নীলে প্রিয় কোচের অধীনে জ্বলে উঠলেন 'এল পিপিতা'। আর হিগুয়াইনের শিখায় পুড়ল হাডার্সফিল্ড। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারের জোড়া গোলে 'টেরিয়ার্স'দের ৫-০ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে চেলসি। ২০১৭ সালের পর এবারই প্রথম প্রিমিয়ার লিগে ৫ গোলের দেখা পেল চেলসি।

     

     

    হিগুয়াইনের মত আজ নিজেকে প্রমাণ করা লাগত চেলসির আরও একজনের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিবর্ণ এডেন হ্যাজার্ডের সমালোচনায় মুখর ছিলেন সারি নিজেই। কথায় নয়, বরং ববরাবরের মত পায়ের জাদুতেই জবাব দিতে আজকের ম্যাচটাকেই বেছে নিলেন হ্যাজার্ড। সফলও হলেন নতুন সতীর্থ হিগুয়াইনের মত। চেলসির বাকি দুটি গোল এসেছে গত সপ্তাহে বেলজিয়ানের বর্ষসেরা ফুটবলারের উপাধি পাওয়া হ্যাজার্ড। আজকের ম্যাচটা চেলসির জন্য যেন হাডার্সফিল্ডের বিপক্ষে নয়, ছিল নিজেদেরই জাত চেনাতে। হ্যাজার্ড, হিগুয়াইনদের মত সারির দলও যেন প্রমাণ করল, ফর্মহীনতায় ভুগলেও হারিয়ে যায়নি তারা। অবশ্য চেলসির প্রত্যেকেই যে আজ নিজেদের প্রমাণ করতে নেমেছিলেন, তার কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছিল ম্যাচের শুরু থেকেই। প্রথম মিনিট থেকেই সারির চিরাচরিত 'প্রেসিং' ফুটবলের দেখা মিলছিল। গত সপ্তাহে বোর্নমাউথের কাছে ৪-০ গোলে হারের পর স্কোয়াডের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন সারি। কাজ যে হয়েছে, তার প্রমাণ মিলল আজই। ম্যাচে করেছেন জোড়া গোল। তবে ৩ মিনিটেই রস বার্কলির পাস থেকে শটটা লক্ষ্যে রাখতে পারলে হয়ত হ্যাটট্রিকই করতে পারতেন হিগুয়াইন।

     

     

    একই কথা খাটে হ্যাজার্ডের বেলায়ও। ৮ মিনিটে এন'গোলো কান্তের পাস থেকে বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডের শট হাডার্সফিল্ডের বারপোস্টে ঘেঁষে চলে যায় বাইরে। শুধু গোলের সুযোগ নয়; প্রেসিং, ড্রিবলিং দিয়ে হাডার্সফিল্ডের রক্ষণভাগকে রীতিমত নাকানিচুবানি খাইয়েছিলেন চেলসির নতুন আক্রমণ জুটি। ফলাফলটাও আসে হাতেনাতে। তবে এই গোলের জন্য কান্তেকে ধন্যবাদ জানাতেই পারেন হিগুয়াইন। ১৬ মিনিটে ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডারের দুর্দান্ত পাসে চেলসির হয়ে নিজের প্রথম গোলের দেখা পান হিগুয়াইন। গোলের পর যেন আরও ক্ষুধার্ত হয়ে উঠে চেলসি। সারির দলকে থামাতে ৪-৩-৩ থেকে সরে এসে ৫-৪-১ ফর্মেশনে খেলতে থাকে হাডার্সফিল্ড। কিন্তু হ্যাজার্ড, হিগুয়াইন যখন এমন ফর্মে; তখন 'বাস পার্ক' করেও সুবিধা হওয়ার কথা না খুব একটা।

    হলও তা-ই। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সিজার অ্যাজপিলিকুয়েতাকে ডিবক্সে ফেলে দিয়ে চেলসিকে পেনাল্টি উপহার দেন কাচুগা। ১২ গজ থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হ্যাজার্ড। দুর্দান্ত প্রথমার্ধে তার যেন একটি গোল পাওনাই ছিল। গত কয়েক ম্যাচে চেলসির প্রেসিং নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বেশ। কিন্তু আজ যেন চেলসির ১১জনই নেমেছিলেন অফুরন্ত স্ট্যামিনা নিয়ে। পজেশন ধরে রেখে আক্রমণই গড়তে পারেনি হাডার্সফিল্ড। আর পজেশন ভিত্তিক ফুটবল খেললেও চেলসিকে মনে হচ্ছিল বরাবরের মতই ভয়ঙ্কর। ৫৮ মিনিটে বার্কলির শট বারপোস্টে প্রতিহত না হলে ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত চেলসি। তবে ৬৬ মিনিটে হ্যাজার্ডের দ্বিতীয় গোলটাও এসেছে তার সুযোগসন্ধানী পাস থেকেই। বার্কলির থ্রু থেকে হাডার্সফিল্ড গোলরক্ষক জোনাস লোসেলকে কাটিয়ে ফাঁকাপোস্টে বল পাঠান হ্যাজার্ড। এই গোল দিয়ে নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারে মোট ২০০ গোলে সরাসরি অবদান রাখলেন হ্যাজার্ড (১১৬ গোল, ৮৪ অ্যাসিস্ট)।

     

     

    আক্রমণে নিজের নতুন সতীর্থের সাথে যেন গোল করার ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতাতেই নেমেছিলেন হিগুয়াইন। ম্যাচ জিতলেও হ্যাজার্ড-হিগুয়াইনের লড়াইটা হয়েছে 'ড্র'। সেই কান্তের পাস থেকেই ৬৯ মিনিটে ডিবক্সের প্রায় ২০ গজ বাইরে থেকে চমৎকার এক বাঁকানো শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন হিগুয়াইন। ২০০০ সালে মারিও স্টাসিচের পর এবারই চেলসির কেউ নিজের প্রথম 'হোম' ম্যাচে করল জোড়া গোল। চার গোলের লিড নিয়েও ক্ষান্ত দেয়নি চেলসি। ক্ষুধার্ত বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়া চেলসির গোল উৎসব শেষ হয়নি তখনও। ম্যাচের ৪ মিনিট বাকি থাকতে কর্ণার থেকে হেড করে হাডার্সফিল্ডের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ডেভিড লুইজ। ৫ গোলের ম্যাচে 'ফাইভ স্টার' পারফরম্যান্সই দিল চেলসি। জ্বলে উঠেছেন হ্যাজার্ড, হিগুয়াইনরা। মৌসুমের শেষভাগে এসে এর চেয়ে বেশি আর কীইবা চাইতে পারতেন সারি এবং চেলসি সমর্থকেরা?