• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    আগুয়েরো ৩-১ আর্সেনাল

    আগুয়েরো ৩-১ আর্সেনাল    

    আলেকজান্ডার লাকাজেতের শট ম্যানচেস্টার সিটি গোলের বাইরে দিয়ে যেতেই খেলোয়াড় বদলির বাঁশি দিলেন রেফারি। ফোর্থ অফিশিয়ালের বোর্ডে সবুজে লেখা উঠল ৩৩, আর লাল রঙে ১০। দাঁড়িয়ে গেল ইতিহাদ স্টেডিয়ামে উপস্থিত সিটি সমর্থকেরা। জোর করতালি এবং হর্ষধ্বনিতে অভিভাদন জানাতে লাগলেন তাকে। হাততালি দিয়ে সমর্থকদের জবাবও দিলেন তিনি। মাঠ ছাড়তেই সার্জিও আগুয়েরোকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলেন পেপ গার্দিওলা, কপালে আঁকলেন চুমু। গত সপ্তাহে নিউক্যাসেল ইউনাইটেডের কাছে হারের কড়া জবাবের ম্যাচটা যে তার জন্যই জিততে পারল 'সিটিজেন'রা। আগুয়েরোর দশম প্রিমিয়ার লিগ হ্যাটট্রিকে আর্সেনালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে সিটি। এক ম্যাচ বেশি খেলে লিভারপুলের সাথে টেবিলের শীর্ষে পয়েন্টের ব্যবধানটা তারা কমিয়ে এনেছে ২ পয়েন্টে।

     

     

    নিউক্যাসেলের বিপক্ষে হারের ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিলেন আগুয়েরো। গত সপ্তাহের মত আজও ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল পেলেন তিনি। অ্যালেক্স ইওবির ভুলে ডিবক্সে বল পেয়ে যান আয়মেরিক লাপোর্তে। তার ক্রসে গেড করে আর্সেনাল গোলরক্ষক বার্নড লেনোকে পরাস্ত করেন আগুয়েরো। ৪৮ সেকেন্ডেই পিছিয়ে পড়ে আর্সেনাল। গোলের পরই বল নিয়ে সেন্টারের দিকে ছুটে আসেন আগুয়েরো। এক গোলে যে সন্তুষ্ট থাকতে চান না, জানান দিয়ে রাখলেন যেন তা-ই। ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে পড়া আর্সেনাল অবশ্য হাল ছাড়েনি। ১০ মিনিটেই সমতায় ফেরে তারা। বাঁ-প্রান্ত থেকে সিড কোলাসিনাচের কর্ণারে মাথা ছোঁয়ান নাচো মনরেয়াল। আগুয়েরোর মতই 'পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক' রেঞ্জ থেকে দলকে সমতায় ফেরান আর্সেনাল অধিনায়ক লরেন্ত কসিয়েলনি। গোল হজমের পর শূন্যে হাত ভাসিয়ে আগুয়েরোর অসন্তোষ প্রকাশ ঠিকই ধরা পড়েছে ক্যামেরার লেন্সে। ম্যাচের বাকিটা সময় যে ঝড় বয়ে গেছে আর্সেনালের ওপর, তার পূর্ব সংকেতই হয়ত ছিল আগুয়েরোর এমন অভিব্যক্তি।

     

     

     

    সমতায় ফিরেই দলকে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলানো শুরু করেন উনাই এমেরি। পিয়ের এমেরিক অবামেয়াং এবং লাকাজেত বাদে বাকি সবাই-ই ছিলেন রক্ষণে। কিন্তু রহিম স্টার্লিং, আগুয়েরোদের নিয়ে গড়া আক্রমণ ৯ জন নিয়েও সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল আর্সেনাল। লেনো না থাকলে ব্যবধানটা হয়ত আরও বড় হতে পারত। ১৮ মিনিটে আগুয়েরো দূরপাল্লার শট দারুণভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন জার্মান গোলরক্ষক। একইভাবে ২৭ মিনিটে ফিরিয়েছেন কেভিন ডি ব্রুইনকে। প্রতি-আক্রমণে খেলা আর্সেনালও অবশ্য সুযোগ পেয়েছিল ঠিকই। কিন্তু  চমৎকার বাঁকানো শটে ৩৫ মিনিটে এডারসনকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন অবামেয়াং, শট চলে যায় গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। মিসের কড়া মাশুলই গুণতে হয়েছে তাদের। প্রথমার্ধের ৪৩ মিনিটে স্টার্লিং-এর পাস থেকে নিজের এবং সিটির দ্বিতীয় গোল করেন আগুয়েরো। প্রথমার্ধের শুরু এবং শেষ- দুই ক্ষেত্রে হাসিটা হাসলেন আগুয়েরোই।

     

     

    প্রথমার্ধে সিটির বিপক্ষে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল আর্সেনাল। কিন্তু শেষদিকে গোল খেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে যেন ম্যাচে ফেরার ইচ্ছাশক্তিটাই হারিয়ে ফেলে আর্সেনাল। নতুন সাইনিং ডেনিস সুয়ারেজকে নামিয়েও পুরো দ্বিতীয়ার্ধে এডারসনের গোলে একবারও শট নিতে পারেনি 'গানার'রা। আর লিড নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করা সিটির আত্মবিশ্বাসটা ছিল আকাশচুম্বী। এক আগুয়েরোকেই সামলাতে রীতিমত নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে কসিয়েলনিদের। শুধু দ্বিতীয়ার্ধেই মোট ৮বার ফাউলের শিকার হয়েছেন 'কুন'। অবশ্য এই অর্ধেও জয় হয়েছে আগুয়েরোরই। ৬১ মিনিটে আবারও সেই স্টার্লিং-এর মাইনাস থেকে গোলের ঠিক সামনে বল পেয়ে যান আগুয়েরো। বেসামাল হয়ে পড়ে গিয়েও বল ঠিকই জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেছেন তিনি। বেসামাল আগুয়েরোতেই শেষ হয়ে যায় টালমাটাল আর্সেনালের ম্যাচে ফেরার শেষ সম্ভাবনাও।

    দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটা সময় নিজেদের মধ্যে পাসিং-য়েই ব্যস্ত ছিলেন আগুয়েরোরা। আর্সেনালও প্রথমার্ধের মত প্রেসিং করে বল দখলের লড়াইয়েও নামেনি।  অন্যরা কিছুটা ঢিমেতালে খেললেও আগুয়েরো ছিলেন প্রথমার্ধের মতই ক্ষুধার্ত। ৭৪ মিনিটে লেনো আবারও দুর্দান্তভাবে তাকে ফিরিয়ে না দিলে হয়ত 'পোকার'-ও হয়ে যেত তার। শেষ পর্যন্ত প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধের শেষটা গোল দিয়ে উদযাপন করতে পারেননি আগুয়েরো। কিন্তু 'ম্যাচ বল' ঠিকই বাগিয়েছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। আর দুর্দান্ত আগুয়েরোতে ব্যাগে আরও তিন পয়েন্ট পুরল সিটি। আর তাতেই কপাল পুড়ল 'গানার'দের। লেস্টার সিটির বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জিতে যাওয়ায় টেবিলের ৬-এ নেমে গেছে এমেরির দল। সেই সাথে হয়ত আরও ক্ষীণ হয়ে আসল আগামী মৌসুমে 'গানার'দের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সম্ভাবনাও।